বিশেষ প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের একটি বৃহদাঞ্চলের পরিচিত নাম হোপ হসপিটাল। মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় এক অনুকরণীয় প্রতীক হয়ে আছে এই হাসপাটালটি। যথাযথ সেবা, আন্তরিক ব্যবহার ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করে মানুষের আস্থায় পরিণত হয়েছে হোপ হসপিটাল। এই জিনিষগুলো নিশ্চিতের ক্ষেত্রে এক কথায় যাদের অবদান তারা হলেন এই হাসপাতালের কর্মীরা। সেই সাথে দক্ষ পরিচালনতো রয়েছে। মোদ্দা কথা, দক্ষ পরিচালন এবং আন্তরিক কর্মীবাহিনীর সমন্বয়ে সফলতার এই দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে হোপ হসপিটাল। সম্প্রতি এক সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র উঠে আসে।
হাসপাতালের দাপ্তরিক সূত্র মতে, ১৯৯৯ সালে একটি মাত্র ভাড়া ঘরে যাত্রা করে হোপ হসপিটাল। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে রোগীদের কাছে বাড়তে থাকে হাসপাতালটির চাহিদা। সেই চাহিদার যোগান দিয়ে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটিকে আজ মহীরূপে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে নিন্ম ও মধ্যবিত্তসহ একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর একমাত্র আস্থা এই হোপ হসপিটাল। চেইন্দায় স্থানীয় হাসপাতাল ভবন ছাড়াও আরো চারটি অস্থায়ী সেন্টারে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে যাচ্ছে হোপ ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।

এক আলাপচারিতায় হোপ ফাউন্ডেশন’র কান্ট্রি ডাইরেক্টর জিএম ফেরদৌসুজ্জামান জানান, হাসপাতালের অপর নাম হচ্ছে সেবা। আর সেবা মানে শুধু চিকিৎসা দেয়া নয়। চিকিৎসা ছাড়াও পারিপার্শ্বিক আরো কিছু বিষয়টি জড়িত। এর মধ্যে আরো রয়েছে রোগীদের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। সঠিক চিকিৎসা, আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার এবং পরিচ্ছন্ন সুন্দর পরিবেশকে সমন্বয় করে হোপ হসপিটালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, স্বল্প ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবাও দেয়া এই হাসপাতালে।

সরেজমিনকালে হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডের চিকিৎসারত সিজার রোগী নাছরিন জাহান প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার দু’টি বাচ্চার প্রাথমিক পরীক্ষা থেকে প্রসব পর্যন্ত এই হাসপাতালে করেছি। অর্ধেক মূল্যে চিকিৎসা প্রাপ্তি ছাড়াও ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্যদের সেবা ও ব্যবহার অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ। যা সচরাচর প্রায়ই হাসপাতালে পাওয়া যায় না। সব সেবার সমন্বয় থাকায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছি।’
রামুর জোয়ারিয়ানালার রশিদা বেগম বলেন, ‘আমার তিনটি বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চাদের অনেক সময় নানা ধরণের রোগ হয়। রোগ হলেই হোপ হাসপাতালে চলে আসি। কারণ এই হাসপাতালে এক সাথে সবকিছু পাওয়া যায়। স্বল্পমূল্য, সঠিক চিকিৎসা, আন্তরিকতা, সুন্দর পরিবেশ ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাওয়া যায়।’

হোপ ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, হোপ ফাইন্ডেশনের উদ্যোগেই হোপ হসপিটাল পরিচালনা হয়ে থাকে। ফাইন্ডেশন এবং হাসপাতাল পরিচালনার জন্য রয়েছে ১৩৩জন কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও কর্মচারী। তার মধ্যে কর্মকর্তা ১২জন, চিকিৎসক ৮ জন এবং কর্মচারী ১১৩জন।
তথ্য মতে, হোপ ফাইন্ডেশনের কান্ট্রি ডাইরেক্টর হিসেবে প্রধান কর্মকর্তা হচ্ছেন এস.এম ফেরদৌসুজ্জামান, কো-অর্ডিনেটর হিসেবে রয়েছেন মো. রাকিবুল হক, প্রধান হিসাব ও অর্থ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান, প্রকল্প কর্মকর্তা মো. শওকত আলী, পিসিসি ছৈয়দ করিম, ট্রেজারার আবুল কালাম আযাদ, এডমিন এবং অর্থ সহকারী নজরুল ইসলাম ও শাহনেওয়াজ কবির, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরওয়ার, ডাটা সাপোর্ট সহকারী মো. মহিউদ্দীন আজাদ। চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন, বিশেষজ্ঞ চিন্ময় বিশ্বাস, প্রধান মেডিকেল অফিসার লে. কর্ণেল (অব.) নুরুল হোসাইন, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার আলপন চাকমা, মেডিকেল অফিসার হিসেবে রয়েছেন উম্মে সালাম, মো. ইবনে আনোয়ার, রুমানা হক, ফাহমিদা আকতার ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার শাকিব চৌধুরী।

হোপ ফাউন্ডেশন’র কান্ট্রি ডাইরেক্টর জিএম ফেরদৌসুজ্জামান বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাণ হচ্ছে একটি আন্তরিক কর্মীবাহিনী। হোপ হসপিটাল তেমন একটি কর্মী বাহিনী নিয়ে চলছে। এখানে কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও কর্মচারী সবাই সমান আন্তরিক। কর্মীদের আন্তরিক করে গড়ে তুলতে হয়। এই জন্য তাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কনসালটেন্সি, প্রশিক্ষণ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়।

তিনি বলেন, প্রতিটি কর্মীকে আমরা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করি। তার পারিবারিক, ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়ে আমরা খেয়াল রাখি। যেমন একজন কর্মী যোগদান করার পর তার জন্য প্রথমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। তার পারিবারিক কোনো সমস্যা হলে আমরা আর্থিকসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়। মেয়ে বিয়ে ছাড়াও সব ধরণের দুর্ঘটনায় সহযোগিতা করা হয়। এই জন্য একটি ওয়েলফেয়ার তহবিল গঠন করা হয়েছে। ওই তহবিল থেকে এককালীন ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সহযোগিতা করা হয়। এই তহবিলে কর্মকর্তা ও চিকিৎসকসহ সবাইকে নিয়মমাফিক অর্থ প্রদান করতে হয়। তবে সহায়তা দেয়া শুধু কর্মচারীদের।

এছাড়াও আবাসনসহ আরো নানান সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। সব সুবিধা নিশ্চিতের মাধ্যমে আমরা একজন আন্তরিক ও দক্ষ কর্মী গড়ে তুলি। তারপরও দক্ষতা ও আন্তরিকতা যাচাই করা হয়। এতে যারা ভালো করে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয় এবং খারাপ করলে তাদেরকে কনসালটেন্সির মাধ্যমে পুন: গড়ে তোলার হয়।