হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভয়াবহ ভাঙ্গণে ২১টি বসত বাড়ি সাগরে বিলীন হয়েছে বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক অবিরাম প্রবল বর্ষনে অমাবশ্যার ‘জো’ তে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে গত ২ দিনে দ্বীপের উত্তর কোনায় ভয়াবহ ভাঙ্গণে এ অবস্থা সৃস্টি হয়েছে বলে সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ ২৭ জুলাই বিকালে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন। ভয়াবহ ভাঙ্গণে বসতবাড়ি ও ভিটে হারা ২১টি অসহায় পরিবারের নারী পুরুষ শিশু নিরুপায় হয়ে বর্তমানে আতœীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

ভয়াবহ ভাঙ্গণের কবলে পড়ে বসতবাড়ি ও ভিটে হারা ২১টি অসহায় পরিবারগুলো হচ্ছে মৃত আবদুল করিমের পুত্র হাকিম আলী, আবদুর রাজ্জাকের পুত্র মোঃ ছিদ্দিক, কালা মিয়ার পুত্র ছৈয়দুল আমিন, কামালের স্ত্রী মোস্তফা খাতুন, আবুল কালামের পুত্র ইসমাইল, বানেশ্বরের পুত্র সজিব, সোনা রামের পুত্র বুইজ্যা, বাবুল, ফয়েজুর রহমানের পুত্র রশিদ আহমদ, আবদুল জব্বারের পুত্র শাকের আহমদ, রশিদ আহমদের স্ত্রী গোলচাম্পা, ছৈয়দ আহমদের পুত্র মোঃ নুর, মোঃ কাসেম, রশিদ আহমদের পুত্র আবদুল হামিদ, আবুল বশরের পুত্র শফিক আহমদ, অছিউর রহমানের পুত্র হাবিব উল্লাহ, রশিদ আহমদের পুত্র মোঃ জুবাইর, অছিউর রহমানের পুত্র আমিন উল্লাহ, ইয়ামিনুল্লাহর স্ত্রী সামিনা খাতুন, আমিন উল্লাহ, সুনা আলীর পুত্র ওসমান। এরা সকলেই সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা।

সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ জানান গত প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে অবিরাম প্রবল বর্ষন হয়েছে। উপরন্ত অমাবশ্যার ‘জো’ তে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে গত ২ দিনে দ্বীপের উত্তর কোনায় ভয়াবহ ভাঙ্গণ সৃস্টি হয়ে ২১টি বসত বাড়ি সাগরে বিলীন হয়েছে। তিনি আরও জানান ঘুর্ণিঝড় মোরার আঘাতে এবং বর্ষা শুরুতে দ্বীপের উত্তর এবং পশ্চিম অংশে ভাঙ্গণ ধরেছিল। কিন্ত এবারে ২১টি পরিবারের বসত ভিটা সম্পুর্ণ সাগরের করাল গ্রাসে চলে যায়।

সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদ আহমদ জানান ভয়াবহ ভাঙ্গণে বসতবাড়ি ও ভিটে হারা ২১টি অসহায় পরিবারের নারী পুরুষ শিশু নিরুপায় হয়ে বর্তমানে আতœীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়নের মেম্বার আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান খান প্রকাশ হাবিব খান জানান শীতের পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিনদ্বীপটি দেশী-বিদেশী পর্যটক ভিআইপি, পদস্থ কর্মকর্তা সকলের কাছে স্বপ্নের দ্বীপ হয়ে যায়। কিন্ত বর্ষা মৌসুমে এই দ্বীপের কথা কারও মনে থাকেনা। অসহায় দ্বীপবাসীর কান্না তাঁদের কর্ণকুহরে পৌঁছেনা। এমনকি ভয়াবহ ভাঙ্গণ রোধে কার্যকরী উদ্যোগ এবং ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ পর্যন্ত নেয়া হয়না।

সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ বলেন সাম্প্রতিক সময়ে দ্বীপের বিভিন্ন অংশে বিশেষতঃ উত্তর-পশ্চিম অংশে ভাঙ্গণ শুরু হলে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনসহ উর্ধতন মহলকে অবহিত করেছি। এমনকি দ্বীপের চতুর্দিকে পরিবেশ সম্মত টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উর্ধতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা চালিয়েছি। এব্যাপারে লিখিত আবেদন ছাড়াও টেকনাফ উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় গুরুত্ব সহকারে বার বার উত্থাপন করে দ্বীপের ভাঙ্গণ রোধে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ স্থাপনের দাবি জানানো হয়েছে। বর্তমানে দ্বীপের উত্তরাংশের বসতবাড়ি, প্রাচীণতম একমাত্র কবরস্থান, পুলিশ বাহিনীর জমি চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন। জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ স্থাপন অথবা বাঁধ নির্মাণ করা না হলে ভাঙ্গণ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।