বিদেশ ডেস্ক:
পাকিস্তানের মুলতানে একটি গ্রাম্য দরবারে ভাইয়ের ধর্ষণের অপরাধের সাজা হিসেবে তার কিশোরী বোনকে ধর্ষণের আদেশ দেওয়ার ঘটনায় অন্তত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৫ জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ।

যে জায়গায় ১৬ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল তা দেখিয়ে দিচ্ছেন একজন
আল্লাহ বক্স নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “এ মাসের শুরুর দিকে জিরগায় (গ্রাম্য দরবার) একজন ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তার ১২ বছরের বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর তার সাজা হিসেবে সন্দেহভাজন ধর্ষকের বোনকে ধর্ষণ করতে ওই ব্যক্তিকে আদেশ দেয় জিরগা।”

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, সাজা ঘোষণার পর ১৬ বছরের মেয়েটিকে জোর করে গ্রাম্য দরবারের সামনে নিয়ে আসা হয়। এরপর বাবা-মার উপস্থিতিতেই সবার সামনে তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরে মেয়ে দুইটির মায়েরা স্থানীয় থানায় অভিযোগ করেন। শারীরিক পরীক্ষায় দুই মেয়েই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

স্থানীয় জিরগা বা গ্রাম্য দরবারে ধর্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে খবর প্রকাশ হলেও সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, জিরগায় আসলে দুই পরিবারের সদস্যরা মিলেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের প্রত্যন্ত গ্রামের নানা সমস্যা সমাধানে বয়স্কদের নিয়ে গঠিত জিরগা ভূমিকা রেখে থাকে। যদিও এসব জিরগা অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। তাছাড়া, অনার কিলিং ও ধর্ষণের বদলে ধর্ষণের মতো বিতর্কিত সাজা ঘোষণার কারণে এসব জিরগা আগে থেকেই সমালোচিত।

২০০২ সালে এরকম একটি জিরগা ২৮ বছর বয়সী মুখতার মাইকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করার আদেশ দিয়েছিল। মুখতার মাই-এর ১২ বছর বয়সী ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, একজন বয়স্ক নারীর সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। জিরগার সাজা হিসেবে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বিরল সাহসিকতা দেখিয়ে ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে মামলা করেন। পরে অবশ্য একজনের যাবজ্জীবন সাজা হলেও বাকি অভিযুক্তদের খালাস দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট।

মুখতার মাই এখন বিশ্বে একজন সোচ্চার নারী অধিকার কর্মী হিসাবে পরিচিত মুখ। গ্রামে মেয়েদের জন্য তিনি স্কুল খুলেছেন এবং একটি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করেছেন।