ফের ঈদগাঁওর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

প্রকাশ: ২৪ জুলাই, ২০১৭ ১০:২১ , আপডেট: ২৪ জুলাই, ২০১৭ ১০:২২

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহর নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাধ এবং সড়কের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন।

শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, ঈদগাঁও
২০ দিনের মাথায় আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। টানা ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার কারণে ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় পোকখালীতে বেড়িবাধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই ইউনিয়নের মধ্যম পোকখালীর চেয়ারম্যান রফিক আহমদের বাড়ির সন্নিকটে এ ভাঙ্গন দেখা দেয়। আগে থেকে ক্ষতিগ্রস্থ গোমাতলী গ্রাম আবারও জোয়ার এবং বন্যার পানির ৪/৫ ফুট নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় ২শ ঘরবাড়ীতে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। বিলীন হওয়ার পথে ১০/১৫টি ঘরবাড়ি। এদিকে বেড়িবাধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বন্যার পানি অনুপ্রবেশ করে তলিয়ে গেছে, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়াঘোনা, দরগাহপাড়া এবং ভাদিতলা গ্রাম। জালালাবাদের তেলী পাড়া, মাছুয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম এবারও বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে পুরো ঈদগাঁও বাজার। দুর্ভোগে পড়ে বাজারের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা। বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি অংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোন সময় বেড়িবাধের জালালাবাদ অংশের ছাতিপাড়া পয়েন্ট, দক্ষিণ লরাবাগের মৌলভীর ঘাটের পয়েন্ট, কচুপাড়া পয়েন্ট এবং মনজুর মৌলভীর ঘাট পয়েন্টে ভাংগন দেখা দিতে পারে। ফের ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা রয়েছে ওই ইউনিয়নের সদ্য মেরামতকৃত রাবার ড্যামের ছাতিপাড়া পয়েন্ট। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঈদগাঁও ফরাজীপাড়া পোকখালী সড়কে চলাচলকারী প্রায় ৫০ হাজার লোকজন। পাশাপাশি এ সড়কে চলাচল করা যাহবাহন শ্রমিকেরা প্রায় মাসাধিককাল ধরে বেকার অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছে ইজিবাইক চালক মুবিন, সিএনজি চালক আবদুল্লাহ এবং ব্যাটারী রিক্স্রা চালক হাকিম মিয়া।
ঈদগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তাজনোভা জানায়, দুটো সাঁকো পেরিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসা করতে তার ভীষন কষ্ট হয়। সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় গত দুদিন আগে আবদুল্লাহ ও রুমা আক্তার নামে ছোট দু’ শিশু সাঁকোর উপর থেকে নিচে পড়ে যায়। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। সন্তানদের দূদর্শার কথা বিবেচনা করে অনেকে আবার এলাকা ছেড়ে ঈদগাঁওতে গিয়ে ভাড়া বাসায় উঠেছেন। কবে সড়ক যোগাযোগ পুন প্রতিষ্টিত হবে তা কেউ জানেনা।
ইউপি চেযারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা ইমরুল হাসান জানান, সাংসদ, জেলা প্রসাশক, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং জেলার এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন।
সোমবার দুপুরেও উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহর নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাধ এবং সড়কের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সড়ক যোগাযোগ পুন প্রতিষ্টার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান। টানা বৃষ্টি এবং ঘন ঘন বন্যার কারণে ঈদগাঁও’র বাঁশঘাটা ব্রীজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঘটে যেতে পারে যেকোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা। ইসলামবাদ ইউনিয়নের জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন পয়েন্টের বেড়িবাধেও দেখা দিয়েছে ফাটল। চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলসমুহও জোয়ার এবং বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ইসলামপুর এবং ভারুয়াখালীর শত শত মৎস্যঘের জোয়ার এবং বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম ও শফিক আহমদ।
নিম্ন আয়ের লোকজন অর্থাভাবে পড়েছেন ভোগান্তিতে। দিনমজুর আবুল কালাম জানান, টানা ৫ দিন ধরে তিনি কাজে যেতে না পারায় ঘরে চাল ডাল কিছুই নেই। ধার কর্জ করে কোনমতে চলছেন। বন্যার কারনে অভ্যন্তরীন সড়কগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। খানা খন্দকের কারণে যানবাহন চলাচল করা তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। জরুরী ভিত্তিতে সড়কগুলো মেরামতের জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।