আব্দুল আলীম নোবেল:

গরিব পরিবারের সন্তান হওয়ায় পড়া লেখায় প্রাইমারির গন্ডি পার হতে না পারলেও সারা দেশে এক নামে চেনে ফুটবল মানব মাসুদ রানা। রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে দেখা হয় তার সাথে। ফুটবলই যেন জীবন, বলই তার সব। নাওয়া-খাওয়া, চলাফেরায় বল চাই-ই তার। এমনই আশ্চর্য মানব মাসুদ রানা। খুলনার ডুমুরিয়ার এই বল মানব একুশ বছরের চেষ্টায় এমন বশ মানিয়েছেন ফুটবলকে। তার ইশারায় চলে ফুটবল। গাছে ওঠেন মাথায় বল নিয়ে, সাতার কাটেন বল মাথায় আবার মোটরবাইক চালান একাধিক ফুটবল নিয়ে। বলমানবের এমন সব অবাক করা কর্মকান্ড নিয়ে কক্সবাজারে রাজপথে আজ দেখা গেছে তাকে। বডি বিল্ডিং প্রোগ্রাম ওয়ালটনে অংশ নিতে খুলনা থেকে ২৩ জুলাই কক্সবাজারে এসেছেন তিনি। ২৫ তারিখ পর্যন্ত থাকবেন।

তার সাথে কথা বলে জানাগেছে, ফুটবল আর মাসুদ রানা যেন একই সুতোয় বাঁধা। ফুটবলকে তিনি এমনভাবে আয়ত্ব করেছেন যেন তার কথাতেই চলে বল। মাথায় বল নিয়ে চলে সকালের নাস্তা। বল না থাকলে নাকি খাবারই হজম হয় না তার।

বিস্ময়কর এ প্রতিভা খুলনার মাসুদ রানা। সবাইকে তাক লাগিয়ে গাছে ওঠেন বল মাথায়। আবার ফুটবল মাথায় নিয়ে সাঁতরে বেড়ান পুরো পুকুর। আর মাঝে মাঝেই দেখান নানা কসরত। কাপড় পাল্টানো কিংবা গোসলও চলে দিব্যি বল মাথায় নিয়ে।

শুধু কি তাই? ফুটবলের এই জাদুকর মোটর সাইকেল চালান নানান ঢংয়ে। কখনো শুয়ে, কখনো বসে আবার কখনো বা দাঁড়িয়ে। ফুটবলকে শরীরের একটি অঙ্গ বানিয়ে বিনোদন দিচ্ছেন সবাইকে। আর হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো সবাই ছোটে তার পিছু পিছু। ফুটবল নিয়ে কতো রঙ্গই না জানেন মাসুদ। মেধা আর শ্রমের সাক্ষর গোলপোস্টেও। একসাথে চারটি বল নিয়েও দেখান বাহারি সব খেলা। ব্যস্ত সড়কেও চলে তার কৌশলের প্রদশর্নী। সবার দোয়ায় আরো এগিয়ে যেতে চান তিনি বিশ্ব রেকর্ড গড়ার টার্গেটে তার। এছাড়া তিনি ৮০ স্পিডে মোটর সাইকেল চালাতে পারেন ৭টি বল নিয়ে। মাতায় বল নিয়ে

নারিকেল গাছ ওঠতে পারেন। ১০০০ মিটার সাঁতার কাটতে পারেন। মাতায় বল নিয়ে ৭৪ কিলোমিটার পায়ে হেঁটেছেন।

খুলনা বিভাগীয় দলে ফুটবল খেলেন। বিভিন্ন জেলায় ফুটবল খেলেন। ২১ বছর দেশের জন্য জাতিকে আলোকিত করতে এই পারফর্ম দেখাচ্ছেন। বাফুফে কর্মকর্তাদের প্রতি আকুল আবেদন সুদৃষ্টি দিলে আমার এই ত্যাগ ও খেলা দীর্ঘদিন চালিয়ে দিতে পারবো। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুল আবেদন, উনি যেন তারমতো দরিদ্র পরিবারের একজন প্রতিভার দিকে সুদৃষ্টি রাখে, আমি হয়তো ভাল থাকতে পারতাম এবং খেলাধুলা চালিয়ে যেতে পারতাম।

শেষ সম্বল ভিটে বিক্রি করে মোটর সাইকেল নিয়ে খেলা দেখাচ্ছেন বলে জানান তিনি। এ মোটর সাইকেল পুরাতন, সামনে অনেক কিছু প্রয়োজন, প্র্যাকটিসের জন্য সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন। খুলনার ডুমরিয়া থানার ১নং ধামাইলিয়া ইউনিয়ন, বরুনা। মৃত শামসুর রহমান মোল্লার পুত্র। মাতা- মোমেনা বেগম। স্ত্রী, নাই(বিবাহ বিচ্ছেদ)। ১ ছেলে ১ মেয়ে। ৫ ভাই বোনের সবার ছোট তিনি। ফুটবল মানব মাসুদ রানা। ওয়ালটন, বেতন দেন ৫ হাজার টাকা করে। এই খেলায় গিনেজ রেকর্ড করতে আপ্রাণ চেষ্টা তার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অফার দেন। গিনেজ রেকর্ডগুলো করে বাংলাদেশকে আলোকিত করা তার স্বপ্ন। কাতারে অনুষ্ঠিত হওয়া আগামী বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নৈপুণ্য, দক্ষতা দেখানোর চেষ্টা করবো। এমন স্বপ্ন লালন করে সারা দেশে ঘুরে বেড়ান এই ৩২ বছর বয়সী ফুটবল মানব।