নূরুল হক, টেকনাফ:
মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচার ঠেকাতে নাফ নদীতে রাতের বেলায় মাছ ধরা বন্ধের সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে দিনের বেলায় নাফ নদীতে মাছ ধরা যাবে বলে এমন নির্দেশনা পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহেদ হোসেন সিদ্দিকী।

তিনি আরও জানান, ২২ জুলাই শনিবার নাফ নদীতে রাতের বেলায় মাছ ধরা বন্ধের নির্দেশনা পেয়েছি। ইতিমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে নাফনদী নির্ভর প্রায় ৩ হাজারের অধীক জেলের তালিকা করা হয়েছে। এ সব জেলেদের যাচাই-বাছাই করা হচেছ।

তিনি আরও জানান, নাফ নদী এলাকার পৌরসভা ও ইউনিয়ন সমূহের মৎস্য সমিতি গুলো নিয়ে মিটিং করা হবে এবং জেলেদের রাতের বেলায় নদীতে নামতে নিষেধ এবং মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হবে।

গত বৃহ¯পতিবার নাফ নদীতে সাময়িকভাবে মাছ ধরা বন্ধের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধের ঘোষনায় ইয়াবার পাচার ঠেকানো জরুরী হয়ে পড়েছে ? সর্বনাশা ইয়াবার আগ্রাসনে সবাই উদ্ধিগ্ন। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরই টেকনাফ সীমান্তে সাধারণ জেলে থেকে শুরু করে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধের খবরে ইতিমধ্যে মাছ ধরা এক প্রকার বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

নাফনদী সংশ্লিষ্ট জেলেরা জানান, নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখে যদি ইয়াবা পাচার বন্ধ হয়, তাহলে দেশ ও জাতি একটি অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় তাহলে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখব এমন প্রতিক্রিয়া জানায় জেলেরা। তারা নদীতে মাছ ধরা বন্ধের হলে বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবী জানায়।

তবে সীমান্তবাসীর ধারণা, নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ হলে ইয়াবার প্রবেশও অনেকটায় বন্ধ হবে। শুধু ইয়াবা নয়, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে।

সীমান্তে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, নাফ নদীতে জেলেদের মাছ শিকারের পাশাপাশি কিছু ইয়াবা পাচারকারীরা জেলে রাতের আধারে ছদ্ম বেশে নদীতে নেমে ইয়াবার বড় চালান দেশে পাচার করে আসছিল। তবে দীর্ঘদিন ধরে এরা মাছ ধরতে যাওয়া নিরীহ জেলেকে নৌকায় ইয়াবা বহন করতে বাধ্য করে। শুধু তাই নয়, রাতের অন্ধকারে নাফ নদীর একাধিক সীমান্ত পয়েন্ট থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান দেশে ঢুকতো। এসব চালান পাচারে ব্যবহার হতো মাছ ধরার নৌকা গুলো। তাই নদীতে সাময়িক মাছ ধরা নিষিদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন সীমান্তবাসী।

শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়া বাসিন্ধা জেলে খালেক জানান, নাফ নদী দিয়ে ইয়াবা আসে সত্য, কিন্তু যারা প্রকৃত জেলে তারা কখনো এর সাথে স¤পৃক্ত নয়। তবে জেলে ছদ্মবেশী ইয়াবা কারবারীরা নাফ নদী হয়ে পাচারে জড়িত। এতে মাছ ধরা বন্ধ হলে অনেক জেলে বেকার হবে, তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবী করেন।

সাবরাং নোয়াপাড়ার জেলে মোঃ হোসন জানান, মাছ ধরার নৌকায় না ইয়াবা আসত অন্য নৌকায়। ইয়াবার কারণে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে তা দুঃখ জনক। এতে কিছুটা ক্ষতি হলেও এটিকে ধন্যবাদ জানায়, কারণ ইয়াবা সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই মাছ না ধরি, তবু ইয়াবা বন্ধ হোক, অন্তত সমাজ উপকৃত হবে।

টেকনাফের প্রাক্তন শিক্ষক জাহেদ হোসেন জানান, নাফ নদী দিয়ে মাছ ধরার নৌকা দিয়ে রাতের অন্ধকারে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আসতো বলে শুনতাম। শুধু তাই নয়, এসব নৌকায় রোহিঙ্গারাও এপারে অনুপ্রবেশ করতো। এখন যদি নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকে ইয়াবার পাশাপাশি রোহিঙ্গার অবৈধ অনুপ্রবেশও বন্ধ হবে। ইয়াবার চালান বন্ধে শুধু নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ নয়, বঙ্গোপসাগর হয়ে যে সব বড় চালান এদেশে প্রবেশ করছে তা প্রতিরোধ করার জন্যও প্রশাসনের সতর্কতা জরুরী বলে মনে করেন।