প্রেস বিজ্ঞপ্তি:

কক্সবাজার ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদের উদ্যোগে “মুসলিম জাতিসত্তার কবি ফররুখ আহমদ” শীর্ষক সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২১ জুলাই, জুমাবার, সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন, সংগঠনের উপদেষ্টা স্বভাবকবি আলহাজ্ব কাজী মোহাম্মদ আলী। কবি মহলে অনুষ্ঠিত এ সাহিত্য সভায় “আজকের প্রেক্ষাপটে মুসলিম জাতিসত্তার কবি ফররুখ আহমদ” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সংগঠনের উপদেষ্টা, প্রাবন্ধিক, সমাজ ও রাজনীতি বিশ্লেষক আখতারুল আলম।

সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুরের সঞ্চালনায় এ সাহিত্য সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কাজী এরশাদুল্লাহ। মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন, সংগঠনের উপদেষ্টা মাওলানা আ.হ.ম নুরুল কবির হিলালী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. হোছাইন আহমদ আনছারী, ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি মাওলানা আবদুচ্ছালাম কুদছী, নির্বাহী সদস্য মাওলানা জসিম উদ্দীন, তরুণ লেখক হাফেজ সাইফুল ইসলাম, সংবাদকর্মী আহমদ ছৈয়দ ফরমান প্রমূখ।

মূল প্রবন্ধে আখতারুল আলম বলেন, কবি র্ফরুখ আহ্মদ এমন এক সময়ে সাহিত্যের অন্যতম প্রধান বাহন কবিতার মাধ্যমে সাহিত্য আন্দোলনে যোগ দেন যখন সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে মুসলমানেরা ছিল অনেক পিছিয়ে। এ ধরনের এক সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কবি র্ফরুখ আহ্মদ তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে বঞ্চিত-অবহেলিত মুসলিম জাতিকে জাগিয়ে তুলতে প্রয়াস পান। তাই কবির লিখিত “পাঞ্জেরী” তে ক্লান্তি ও জিজ্ঞাসার সুর ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে ধুয়ার মতো বারবার ঘুরে আসে একটি চরণে “রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী”।

কবি র্ফরুখ আহ্মদ যে একজন প্রকৃত মুসলিম জাগরণের কবি ছিলেন এবং আজীবন ইসলামের রীতিনীতি ও সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন এবং দুনিয়ার শান্তি ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামই যে একমাত্র নিখুঁত আদর্শ, র্ফরুখ আহ্মদ তা গভীরভাবে উপলব্ধি ও বিশ্বাস করতেন। সেই সাথে বিশ্ব-মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও মানবতাবোধ তথা ইসলামের সাম্য ও ন্যায়নীতির আদর্শকে তাঁর জীবনেও বাস্তবায়িত করে তিনি একটি শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত আমাদের উপহার দিয়েছেন।

পরনির্ভরশীল বিজাতীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে লেখনীর মাধ্যমে জাতিকে সচেতন করা ও আবহমান বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক ও ন্যায্য সংস্কৃতি ও জাতীয় চেতনা বিনির্মাণে আজ কবি র্ফরুখ আহমদের মতো নিষ্ঠাবান সাধক-অধ্যবসায়ী কবি লেখকের বড় বেশি প্রয়োজন।

প্রবন্ধকার বলেন, আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলে নয় আর তাহলো ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত আত্মমর্যাদাশীল একজন কবি-সাহিত্যিক। তিনি চাইলেই রাষ্ট্রীয় অনেক সুযোগ সুবিধা নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি কখনও মাথা নোয়াননি কিংবা বলা যায় সম্পদ অর্জনকে তিনি কখনও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি। এ ধরনের নির্লোভ নিঃস্বার্থপর, নির্মোহ ব্যাক্তিত্ব আজকের দিনে কল্পনা করাও দুষ্কর। আজকের এই প্রেক্ষাপটে কবি র্ফরুখ আহ্মদের কাব্য সাধনায় দেখিয়ে দেয়া পথ অনুসরণ করে মুসলিম ঐক্যকে সংহত করে প্রকৃত পক্ষে যাঁরা বাংলাদেশের ও ইসলামের বিপক্ষ শক্তি তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় লড়ে যেতে হবে। এটাই হোক আজকের আমাদের দৃপ্ত শপথ।

উল্লেখ্য, যশোর জেলার মাঝআইল গ্রামে ১৯১৮ সালের ১০ই জুন সোনার চামচ মুখে নিয়েই কবির জন্ম হয়েছিল, কিন্তু দুঃসহ দারিদ্রের মধ্যে তাঁকে ইন্তেকাল করতে হয়েছে। দারিদ্র তাঁর মাথা নত করতে পারেনি। দারিদ্র তাঁকে সম্মান দান করেছে। এই মর্দে মুমিন জীবনে আল্লাহ্ ছাড়া কারো সামনে মাতা নত করেন নি। শির উঁচু রেখে সম্মানের সাথে এই জরাগ্রস্ত পৃথিবী থেকে ১৯৭৪ ইং-র ১৯ অক্টোবর তাঁর ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেনস্থ বাসায় ৫৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।