সংবাদদাতা:
মীর কাশেম জন্মগতভাবে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধি। বয়স ৩০ বছর। তার বাবা হাজী ইউসুফ আলী ১২ বছর আগে মারা যান। এর পর মা নুর জাহান হতভাগ্য ছেলের দেখা শুনা করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তিনিও গত দুই সপ্তাহ আগে মারা গেছেন। এখন মীর কাশেম এতিম। সে পারেনা কথা বলতে, পারেনা তার সমস্যার কথা বুঝাতে। ঠিকমত পারেনা হাঁটতেও। যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে। কখন, কোথায় যায়, কি করে তার কোন হিসেব নেই। মা বাবা ছাড়া প্রতিবন্ধি মীর কাশেমকে এখন কে দেখা শুনা করবে ? তার কি হবে ? সরকারের করনীয় কিছু আছে কিনা ? এ বিষয়টুকু নিয়ে তার ভাই দরিদ্র স্কুল শিক্ষক মফিজুর রহমান নানা স্থানে ধর্ণা দিচ্ছেন।
ভাইকে দেখাশুনার সমস্যার কথা বলতে গিয়ে মফিজুর রহমান জানান-‘ তাদের বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়া নালার ইলিশিয়া প্রতিবন্দি ভাতা গ্রামে। আর তিনি একটি রেজি: শিক্ষক হিসেবে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং এর একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি প্রতি বৃহস্পতিবার রামুর বাড়িতে আসেন আর শনিবারে টেকনাফে চলে যান। এই অবস্থায় প্রতিবন্ধি ভাইকে দেখভাল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার কিছু সাহায্য করলে প্রতিবন্ধি এই ভাইকে দেখভাল করার জন্য এক লোক কাজে নিয়োজিত করতে পারতাম।’
মীর কাশেমের বয়স ৩০ বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা পাননি। এমন কি প্রতিবন্ধি ভাতা চালুর ১৫ বছর পার হলেও তালিকায়ও তার নাম নেই। তার বাবা যখন জীবিত ছিলেন তখন বছরের পর বছর চেষ্টা করে গেছেন সরকারি সহযোগিতা পাওয়ার জন্য। এর পর বাবা মারা গেলে মা প্রাণপন চেষ্টা করেন প্রতিবন্ধি ভাতা পাওয়ার জন্য। যাতে তিনি মরে গেলেও তার ছেলে সরকারের সহযোগিতায় বেঁচে থাকতে পারেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি তা করতে পারেননি। প্রতিবন্ধি ছেলের কি গতি এই দু:চিন্তায় অবশেষে তিনি মারা যান। এখন ভাই মফিজুর রহমান চেষ্টা করছেন প্রতিবন্ধি ভাতা পাওয়ার জন্য।
এ ব্যাপারে স্থানীয় জোয়ারিয়ানালা ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান বলেন-‘ আল্লাহর রহমাতে আমি পর পর তিনবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। মীর কাশেমের নাম না পাওয়ায় তালিকায় নাম জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। এবার তার নামটি তালিকায় দেয়ার চেষ্টা করবো।’কক্সবাজার সমাজসেবা অধিদপপ্তরের উপ-পরিচালক প্রীতম কুমার চৌধুরী বলেন-‘ ২০০০ সালে প্রতিবন্ধি ভাতা চালু হয়। সে থেকে কক্সবাজারের প্রতিবন্ধিদের ভাতা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার তাদের এলাকার প্রতিবন্ধিদের নাম জমা দিলে উপজেলা সমাজ সেবা অফিস তা নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবন্ধি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবে। যেহেতু স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মীর কাশেমের নামটি জমা দেয়নি তাই প্রতিবন্ধি তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।’