বিদেশ ডেস্ক:
আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ফুঁসছে ফিলিস্তিনিরা। মেটাল ডিটেক্টর বসানো ও ৫০ বছরের কম বয়সীদের নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জেরুজালেম। মসজিদে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ হওয়ায় পথেই নামাজ পড়ছেন ধর্মপ্রাণ ফিলিস্তিনিরা। পথগুলো যেন রূপান্তরিত হয়েছে প্রতিরোধের জায়নামাজে। প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিকে অন্যসব মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে আল আকসায় সমবেত হতে বলেছেন মুসলিম নেতারা। এমন অবস্থায় ইসলাম-খ্রিস্টান-ইহুদি তিন ধর্মের পবিত্র পীঠস্থান জেরুজালেমে যে কোনও সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ।

ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদে প্রবেশের প্রধান দ্বার লায়ন্স গেটের সামনে মেটাল ডিটেক্টর বসানোর প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরেই বাইরে নামাজ পড়ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি আরবরা। আর সেসময়ই ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধেছে তাদের, ঘটেছে হতাহতের ঘটনাও। শুক্রবার এ নিয়ে বড় বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বিক্ষোভের জন্য ঘোষিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের পুলিশ নতুন নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে ফিলিস্তিনিরা। তাদের দাবি, মসজিদ দখলের পায়তারার অংশ হিসেবেই ইসরায়েল এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।

পুরো সপ্তাহ ধরে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহারে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফিলিস্তিনিরা। সপ্তাহজুড়ে ফিলিস্তিনিসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের প্রতিবাদের মুখে মসজিদটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। এবার তরুণদের জন্য তা আবার নিষিদ্ধ হলো শুক্রবারের জুম্মার নামাজের আগে আগে। শুক্রবার জুম্মার নামাজকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কায় নতুন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত হয়।

জুমার নামাজের এই দিনে প্রায় এক লাখ মানুষ আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে সমবেত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানইয়াহু। বিক্ষোভকারীদেরও তেমনই প্রস্তুতি ছিল। মুসলিম নেতারা জেরুজালেমের অন্য মসজিদকে বন্ধ রেখে সবাইকে আল-আকসায় যাওয়ার আহ্বান জানান। এতে করে অনেক মানুষ সেখানে জড়ো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৪০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি মুতাহির আবু ইব্রাহিম। তিনি টেলিগ্রাফকে বলেন, মুসলিমদের জন্য এটা খুবই অপমানজনক। এটা মুসলিমদের পবিত্র স্থান। এটি দখলে ইসরায়েলের কোনও অধিকার নেই।’ তখনই তার চারপাশের মুসলিমরা আওয়াজ তুলতে থাকেন। সবাই বলেন, ‘আমরা আমাদের রক্ত দিয়ে হলেও আল-আকসাকে রক্ষা করবো। জেরুজালেমে গিয়ে আমরা শহীদ হবো।’

পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার তার মন্ত্রিসভার সঙ্গে এক বৈঠক করেছে। সরকার পুলিশকেই তাদের ক্ষমতা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশের মুখপাত্র সুপারিটেন্ডেন্ট মিকি রোজেনফিল্ড বলেন, ‘পুলিশ ও সীমান্ত পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত তারা। আর টেম্পল মাউন্ট (আল-আকসা মসজিদ) ৫০ বছরের উর্ধ্বে সবার জন্যেই খোলা।’ জুম্মার নামাজকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এতে সংঘর্ষের আশঙ্কা দূর হয়নি।

১৯৬৭ সালে যখন ইসরায়েল এই এলাকায় প্রবেশাধিকার পায় তখন শুধু মুসলিমরাই আল-আকসায় নামাজ পড়তে পারতো। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় প্রার্থনার সুযোগ পেত ইহুদীরা। মেনে চলতে হতো অনেক নিয়ম। বিগত ৫০ বছরে এই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। আর ইসরায়েল এখন আল-আকসার দখল নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।