বিদেশ ডেস্ক:
মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে থাই সেনাবাহিনীর এক লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। মানাস কংপেন নামের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানব পাচার ছাড়াও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি মানবপাচারকারীদের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ রুট থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
জেনারেল মানাস কংপেন পাচারকারীদের কাছ থেকে থাই মুদ্রায় ১৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন বাথ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় তিন কোটি ৫৬ লাখ। এই অর্থের বিনিময়ে তিনি পাচারকারীদের জঙ্গলের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ক্যাম্পে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিতেন।
মোট ১০৩ অভিযুক্তের বাকিদের বিরুদ্ধেও ১৯ জুলাই বুধবার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিস্তারিত রায় পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রাজনীতিক এবং পুলিশ কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

দোষী সাব্যস্ত হওয়া অন্যদের আন্তঃদেশীয় অপরাধ, বলপূর্বক আটকে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া এবং ধর্ষণের দায়ে মতো অপরাধ সংঘটনের দায়ে সাজা দেওয়া হয়েছে।

.

২০১৫ সালে থাই-মালয়েশীয় সীমান্ত এলাকার জঙ্গলে গণকবর শনাক্তের পর পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মানাস কংপেন, পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনীতিবিদ এবং মিয়ানমারের নাগরিকরা রয়েছেন। ওই ঘটনার পর মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়ায় পাচার করার এবং আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের বিষয়গুলো সামনে আসে। ওই বছরই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাচারকারীরা বিভিন্ন ক্যাম্পে শরণার্থীদের জিম্মি হিসেবে আটকে রাখে এবং স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের ছাড়ে না। অনেকেই শেষ পর্যন্ত মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হন। তখন সেইসব শরণার্থীদের মানবেতর ক্যাম্পে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় পাচারকারীরা। তবে এখন পর্যন্ত গণকবর শনাক্ত হওয়া এবং ময়না তদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি থাইল্যান্ড।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ২০১৫ সালের ধরপাকড় বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর পাচারকারী নেটওয়ার্কের অনেকগুলোই অধরা রয়েছে। ফর্টিফাই রাইটসের নির্বাহী পরিচালক অ্যামি স্মিথ বলেন, “আমরা মনে করি ওই ধরপাকড়ের মধ্য দিয়ে পাচারকারী সংগঠনগুলোকে কেবল ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া গেছে। কিন্তু এখনও সেগুলো বেশ সক্রিয় আছে।” সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি।