হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ : (ছবি
টেকনাফে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ‘টেকনাফ-মিয়ানমার’ ট্রানজিট জেটি নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। চলতি জুলাই মাসে এ জেটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও ফাটলের কারণে তা পিছিয়ে গেছে। নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণেই জেটির এমন দশা বলে অভিযোগ উঠেছে।
টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়া নাফ নদীর তীর এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর বিওপি। তার পাশে নাফ নদীর বুকে নির্মাণ করা হচ্ছে জেটিটি। এই জেটি ঘাট দিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের নাগরিকেরা এক দিনের ট্রানজিট পাস নিয়ে দুই দেশে যাতায়াত করেন। এত দিন কাঠের জেটি দিয়ে লোকজন পারাপার করত। কাঠের জেটির পাশেই তৈরি হচ্ছে এই স্থায়ী পাকা জেটিটি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) টেকনাফ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাফ নদীর ওপর টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটি নির্মাণ করার জন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার দৈর্ঘ্য ৫৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৪ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদি সিআইপি এ জেটির আনুষ্টানিকভাবে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। দুই ধাপে জেটির জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৩১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। জেটি নির্মাণের দায়িত্ব পান কক্সবাজারের মেসার্স উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। জেটিতে বিশ্রামাগার, শৌচাগার ও গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জেটিতে গিয়ে দেখা গেছে, জেটির মেঝেতে ১০-১৫ গজ লম্বা বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফাটল। কয়েকজন শ্রমিক সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে ফাটল ঢেকে দিচ্ছেন। তারপরও ফাটল দৃশ্যমান থেকে যাচ্ছে। জেটির দুই পাশের রেলিংয়ে রং করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে সড়ক বাতি। চলতি জুলাই মাসে নবনির্মিত জেটির উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জেটির বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় উদ্বোধন পিছিয়ে গেছে। আশপাশের বাসিন্দারা জানান উদ্বোধনের আগেই এটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থীরা আসছেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সাংসদ বদির বাড়ির পাশেই এই জেটির অবস্থান। জেটিতে বড় বড় ফাটল ধরার বিষয়টি সাংসদ বদিকে জানানো হয়েছে। তিনি কি ব্যবস্থা নেন সকলে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন।
জেটিতে ফাটল প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আতিকুল ইসলাম বলেন, জেটি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এখন জেটির স্পিনিং ও রাবার লাগানোর কাজ বাকি আছে। কিন্তু হঠাৎ করে জেটির মূল ঢালাইয়ের ওপরের অংশে দু-তিন ইঞ্চির ঢালাই ফেটে গেছে। সেটি এখন মেরামত করা হচ্ছে। এলজিইডির কাছে এখনো আড়াই কোটি টাকার বিল বকেয়া। বিল আদায় করতে ঘুষ দিতে হয়। তাই জেটির কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) টেকনাফ উপজেলা প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন, জেটি নির্মাণে কোনো রকম দুর্নীতি হয়নি। প্রচন্ড রোদে নির্মাণ কাজ হওয়ায় এবং ঢালাই পাতলা হওয়ায় এ ধরণের ফাটল দেখা দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জেটিতে ফাটলের বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
সাংসদ আবদুর রহমান বদি সিআ্ইপি বলেন, নির্মাণ কাজে দুর্নীতি হওয়ায় উদ্বোধনের আগে জেটিতে ফাটল ধরেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।