এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া
চকরিয়ায় চিংড়িঘের কর্মচারী নুরুল ইসলাম খুনের মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা পুলিশের নজরদারী ফাঁিক দিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলার আসামিরা বহাল তবিয়তে থাকার কারনে মামলার বাদিপক্ষ ও রামপুর চিংড়িজোনের ঘের মালিক এবং চাষীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযুক্ত অপরাধীরা যে কোন মুহুর্তে আবারও অঘটন ঘটাবে এমন আশঙ্কায় লোকজনের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের কোরালখালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের নুরুল আলমের ইজারা নেয়া রামপুর চিংড়িজোনের একটি চিংড়িঘেরে মাসিক বেতনে চাকুরী করতেন একই ইউনিয়নের দক্ষিন কোরালখালী গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৬০)। পুর্ব শুত্রুতার জের ধরে গত ২৩ জুলাই রাতে ওই চিংড়িঘেরে ১০-১৫জনের অস্ত্রধারী হানা দেয়। এসময় অস্ত্রধারীরা ঘেরটি ইজারাদার নুরুল আলম ও কর্মচারী নুরুল ইসলামকে মাছ ধরার সময় আটক করে বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে অস্ত্রধারীরা এলোপাতাড়ি গুলি করলে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে কর্মচারী নুরুল ইসলাম নিহত হন।

জানা গেছে, হত্যাকান্ডের দুইদিন গত ২৫ জুলাই রাতে নিহত নুরুল ইসলামের স্ত্রী আছমা খাতুন (৫২) বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর এলাকার মনজুর বলীর ছেলে সেকাব উদ্দিন, কোরালখালী পুর্বপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল হামিদ, আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাজীব, জাগের আহমদের ছেলে কাইছার, কোরালখালীর দক্ষিনপাড়ার মৃত মোহাম্মদ ইছহাকের ছেলে নুরুল কাদের, কোরালখালী পশ্চিমপাড়ার মনছুর আলীর ছেলে তৌহিদুল ইসলাম, পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের ঈদমনি গ্রামের ছৈয়দ নুরের ছেলে বাবুল, সাহারবিল কোরালখালী পশ্চিমপাড়ার বশির আহমদের ছেলে আবদু শুক্কুর, একই এলাকার কাইছার ও নুরুল আলমের ছেলে জুনাইদ সহ ১০জনের নাম উল্লেখ্য করে আরো ৪-৫জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

স্থানীয় চিংড়িঘের মালিক ও চাষীরা জানিয়েছেন, নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার বেশিরভাগ আসামি দিনের বেলায় পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে পাশের চিংড়িজোনে অবস্থান নেয়। রাতের বেলায় ফের এলাকায় ফিরে। আবার অনেকে আগের মতো রাতের বেলায় চিংড়িঘেরে গিয়ে হামলার মহড়া দিচ্ছে। এ অবস্থার কারনে ঘের মালিক ও চাষীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সুত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৯জানুয়ারী রাতে চকরিয়া উপজেলার সাহারবিলের রামপুর চিংড়িজোনের কোরালখালীস্থ নয়াঘোনা নামক একটি চিংড়িঘেরে খুনের ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে ১৭-১৭জনের অস্ত্রধারী হানা দেন স্থানীয় রামপুর উমখালী গ্রামের মরহুম দুলা মিয়ার ছেলে আবদুল হামিদের ইজারা নেয়া ১৬একর আয়তনের চিংড়িঘেরে। ঘটনার সময় অস্ত্রধারীরা ঘেরের খামারঘর থেকে ইজারাদার আবদুল হামিদকে (৩০) ধরে নিয়ে গুলি করে। পরদিন ১০ জানুয়ারী বিকাল আড়াইটায় চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হামিদ।

এ ঘটনায় নিহত হামিদের বড়ভাই আবদুল করিম বাদি হয়ে ২০১০ সালের ১২জানুয়ারী চকরিয়া থানায় ১৩জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামিদের মধ্যে অভিযুক্ত আবদু শুক্কুর, সেকাব উদ্দিন ও আবদুল হামিদ ৭বছর পর গতমাসে খুন হওয়া ঘের কর্মচারী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন।

এলাকাবাসি জানিয়েছেন, চিংড়িঘের ইজারাদার আবদুল হামিদ ও ঘের কর্মচারী নুরুল ইসলাম হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাতবছরের ব্যবধানে দায়ের করা দুটি মামলার বেশিরভাগ আসামি পেশাদার অপরাধী। তাদের মধ্যে অনেকে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে দখলবাজ হিসেবে কাজ করে। আবার অনেকে ঘের ডাকাতি ও লুটপাটের সাথে জড়িত।

এলাকাবাসি জানান, দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে রয়েছে একাধিক মামলা। তাঁর মধ্যে মামলার আসামি কোরালখালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের বশির আহমদের ছেলে আবদু শুক্কুরের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ১১টি মামলা। চিংড়িজোনে হামলা, জবরদখল, লুটপাট ও হত্যাসহ নানা অপরাধ কর্মের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের দায়ের করা জিআর ০৬/১০, জিআর ২৫৬/০৬, জিআর ১৯/০৮, জিআর ৫৭৮/১৪, জিআর ২০০/১৪, জিআর ৩৪৪/০৯, জিআর ১০৫/১৪, জিআর ১০০/১৩, জিআর ১৭৭/১১, সিআর ৮২/১৬, জিআর ৩৫৪/১৭ বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

এদিকে রামপুর চিংড়িজোনের ঘের মালিক ও চাষী এবং সাহারবিল ইউনিয়নের আতঙ্কিত এলাকার জনসাধারণ অভিযুক্ত এসব আসামিকে গ্রেফতার পুর্বক এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন এজেন্সির উর্ধবতন মহলের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।