নওরিন আক্তার, বাংলাট্রিবিউন:
.

মাওলিননং  গ্রাম দেখতে সিলং থেকে রওনা দিলাম সকাল সকালই। কারণ আরও বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান দেখার পরিকল্পনা রয়েছে একই দিনে। শিলং থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে খাসিয়া সম্প্রদায়ের নিবাস মাওলিননং গ্রামটি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একেবারেই কাছাকাছি এই গ্রামে পৌঁছতে সময় লাগলো প্রায় দুই ঘণ্টা। গাড়ি থেকে নেমেই দেখি প্রচুর গাড়ি থেমে আছে পার্কিংয়ের স্থানে। আমাদের গাড়ির ড্রাইভার জানালেন, প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক আসেন এই গ্রাম দেখতে। এত পর্যটক সামলেও গ্রামটি এমন পরিচ্ছন্ন কীভাবে থাকে! এই কৌতূহল নিয়েই ঢুকলাম গ্রামে।.

গ্রামে প্রবেশের মুখেই খাসিয়া সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি পণ্য বিক্রির দোকান রয়েছে
ঢুকেই মুগ্ধ হতে হলো। কী চমৎকার ঝকঝকে সবকিছু! প্রবেশ মুখেই চোখে পড়লো ছোট্ট একটি দোকান। সেখানে বিক্রি হচ্ছে খাসিয়া সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন পণ্য। সামনে এগিয়ে যেতে চোখে পড়লো অধিবাসীদের বাড়ি। সবুজের ফাঁকে ফাঁকে এক একটি বাড়ি। প্রতিটি বাড়ি ঘিরে সাজানো রঙিন সব ফুলের গাছ। ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে রঙিন সব প্রজাপতি। যেন রূপকথার রাজ্য থেকে উঠে আসা গ্রাম এটি! গ্রামের অধিবাসীরাও খুব নম্র-ভদ্র। কাজের ফাঁকেই হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন পর্যটকদের। পথ চলতে গিয়ে দেখলাম খানিক পরে পরেই ময়লা ফেলার বাঁশের ঝুড়ি সাজিয়ে রাখা। জানা গেল পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ এখানে।.

পথে পথে সাজানো এমন আবর্জনা ফেলার ঝুড়ি
২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক ট্র্যাভেল ম্যাগাজিন থেকে সর্বপ্রথম এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি পায় মাওলিননং। পরবর্তীতেও আবার একই পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে ছোট্ট, সুন্দর এই গ্রামটি। গ্রামকে কীভাবে এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন এখানকার অধিবাসীরা? জানা গেল, গ্রামের নব্বই ভাগ বাসিন্দাই শিক্ষিত। কৃষি তাদের মূল জীবিকা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বাঁশের তৈরি ঝুড়িতে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করেন তারা। সেগুলো দিয়ে তৈরি হয় কৃষি কাজে ব্যবহৃত জৈব সার। পলিথিন ব্যবহার ও ধূমপান নিষিদ্ধ এখানে।.

মাওলিননং গ্রাম দেখতে প্রতিদিনই আসেন পর্যটকরা
মাওলিননং গ্রামটি মাতৃতান্ত্রিক। নিয়ম অনুযায়ী মায়ের সম্পত্তি পুরোটাই পায় তার ছোট মেয়ে। মায়ের নামের অংশও পদবী হিসেবে ব্যবহার করতে হয় মেয়েকে।
পাহাড় ও ঝরনায় ঘেরা এই গ্রামটিতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা যায় না। প্লাস্টিকের ব্যবহার একেবারে বন্ধ করার জন্যও তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করার উপর সবসময়ই জোর দেন বাসিন্দারা। আর গাছ লাগান প্রচুর পরিমাণে।.

গ্রামের বাসিন্দারাই পরিচ্ছন্ন রাখেন নিজ গ্রাম
মাওলিননং গ্রামের পাশেই রয়েছে শেকড়ের তৈরি প্রাকৃতিক সেতু। এটিও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
শিলং থেকে ট্যাক্সি অথবা গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননং থেকে। একই সঙ্গে ডাউকি-তামাবিলের রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। শিলং থেকে সকালে গিয়ে আবার বিকেলেই ফিরে আসা যায়। বাংলাদেশ থেকে শিলং যেতে চাইলে ডাউকি পোর্ট দিয়ে করিয়ে নিন ভিসা।