মানুষের বিপদে ছুটে যাওয়াই যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন :
কদাচিৎ কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেখা যায় যারা দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকেও অতীত কীর্তির বদান্যতায় জনগনের মনে স্থায়ী ভালবাসার আসন গড়ে নেন।  মাহমুদুল হক চৌধুরী তেমনি একজন মানুষ, একজন রাজনীতিবিদ। যিনি দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকেও আপন মহিমায় এখনো জনগনের ভালবাসা ও শ্রদ্ধার সুউচ্চ আসনে সমুজ্জ্বল।

উখিয়া উপজেলার অন্তর্গত হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই অনন্য রাজনীতিবিদের পিতা মরহুম বকতিয়ার আহমদ চৌধুরী তৎকালীন সময়ের নামকরা জমিদার ছিলেন। জমিদার পরিবারে জন্ম নেওয়া এই কৃতি সন্তান বংশ এবং পিতৃ পরিচয়কে যথার্থই কাজে লাগিয়ে ১৯৮৪ সালের জানুয়ারীতে খুবই তরুন বয়সে হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। খুব অল্প সময়ে জনগনের ভালবাসা আদায় করে নিতে বিচক্ষণ এই রাজনীতিবিদকে বেগ পেতে হয়নি। বরং; অচিরেই নিজের কারিশমাটিক এবং স্বভাবজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে সমগ্র উখিয়া উপজেলার অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে আবির্ভাবের পূর্বাভাস জানান দেন এবং তা দেখতে উখিয়ার জনগনকেও খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ১ বছর ৫ মাসের মাথায় ১৯৮৫ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উখিয়ার আরেক অবিসাংবাদিত নেতা জননেতা জনাব শাহজাহান চৌধুরীকে (যিনি পরবর্তীতে চারবার সংসদ সদস্য এবং একবার হুইপ নির্বাচিত হন) পরাজিত করে উখিয়া উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আরো একবার তার তুমুল জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেন। এত অল্প বয়সে এবং স্বল্প সময়ের ব্যবধানে অতীতে কেউ কখনো ইউপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পেরেছিলেন বলে জানা নেই। শুনেছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ বা সবচেয়ে কম বয়সে যথাক্রমে ইউনিয়ন এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার গৌরবান্বিত রেকর্ডটি এখনো তাঁর দখলে। তাই এ কথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে, এসব গৌরবিত সাফল্য কেবল মায়াবী চেহারার ঝলকানি দিয়ে হয়নি, হয়েছে বেশ কিছু অতিমানবীয় গুণাবলী এবং জনহিতকর কর্ম সম্পাদনের মধ্য দিয়ে। কথিত আছে, মূলত তাঁর শাসনামল থেকেই হলদিয়া এবং উখিয়া উপজেলার সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের সূচনা হয়েছিল। বিশেষ করে ওনার আমলে এলাকার রাস্তাঘাটের যে উন্নয়ন হয়েছিল তা এখনো চোখে পড়ার মত।

কালের বিবর্তনে কত নেতা হারিয়ে যায়, হারিয়ে গেছেনও অনেকে। কিন্তু হারিয়ে যাননি মাহমুদুল হক চৌধুরী নামের এক জনদরদী নেতা। জনগন তাদের হৃদয় মন্দিরে এখনো তাঁকে সাজিয়ে রেখেছেন হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা দিয়ে। রাখবেই না কেন? জনগন তাদের প্রয়োজনে অহর্নিশ এই নেতাকে কাছে পেয়েছেন। করেছেন আর্থিক সহযোগিতা, দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। জনগনও এর চেয়ে বেশি কিছু চায়না। আর জনগনের এ চাওয়া পাওয়ার মহামিলনের কারনেই আজ তিনি মহান নেতা।

প্রাসঙ্গিকতার কারনে এখানে আমি তাঁর বাসভবনের একটা প্রশংসনীয় দিক সম্পর্কে আলোকপাত করতে চাই। আমার বিশ্বাস যেটা আমি ছাড়াও যারা যারা এখানটাতে গিয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই কমবেশি বেশ ভাল ভাবেই অবগত আছেন। বিষয়টাকে সরাসরি না বলে আমি একটু অন্যভাবে বলছি। এখানেও আমার বিশ্বাস যে, আমার ব্যাখ্যার ধরনটা যেরকমই হউক না কেন আপনাদের ধারনাটাও আমার বক্তব্যের সাথে একই বিন্দুতে মিলে যাবে। ভোটের রাজনীতির রাজনীতিবিদদের মৌসুমী বক্তব্যের একটা পরিচিত অংশ হল, “আমি ভোটে পরাজিত হই বা না হই, আপনাদের জন্য আমার দ্বার চির উম্মুক্ত।” কিন্ত পরবর্তীর বাস্তবতা কি কথার সাথে সামঞ্জস্য থাকে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে কাউকে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের চারপাশের নেতাদের আচরনই আপনাকে এর সঠিক সমাধান দিয়ে দেবে। চিরচেনা আজব চরিত্রের এসব নেতাদের ভিড়ে ব্যতিক্রম কেবল একজন-ই। আর তিনি হলেন জনাব মাহমুদুল হক চৌধুরী। যিনি ক্ষমতার মসনদে থাকাকালীন সময়ের ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক চরিত্রকে ক্ষণিকের জন্যও পরিবর্তন করেননি। বরং; খানিকটা বেশিই বলা যায়। যারা তাঁর রুমালিয়ার ছড়াস্থ চৌধুরী ভবনে গিয়েছেন তারা নিশ্চয় দেখে থাকবেন সেই বাসার ডাইনিং রুমের টেবিলটা সাজানো থাকে নানান রকম খাবারে। এসব কেবল নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য নয়, পরিবারের সদস্য ছাড়াও কারনে অকারনে তাঁর বাসায় আগত সর্বসাধারণের জন্যও বরাদ্দ থাকে এসব রকমারী খাবার। এ কথা বিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি যে, তাঁর বাসায় গিয়ে কেউ কখনো খালি মুখে ফিরেননি। ধনী গরিব সবার প্রতি আতিথেয়তার ধরনটা একই রকম। নিজেদের প্রয়োজনে যাওয়া মানুষ গুলো যেন ওনার কাঙ্খিত এবং অতি আদরের অতিথি। একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া। মনটা ভরে যায়। ভাবি, মানুষ কিভাবে এতটা নিরহংকারী হতে পারেন? কিভাবে মানুষকে এতটা আপন করে নিতে পারেন? কেউ কেউ হয়তো পারেন। আর পারেন বলেই তিনি আজ এতটা ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক, তুচ্ছ কিংবা বাড়াবাড়ি মনে হলেও আমার কাছে এটা আন্তরিকতার উৎকৃষ্ট উদাহরন। কারন, এই জীবনে প্রয়োজনে কিংবা ভাল লাগার কারনে অনেকবার অনেক রাজনৈতিক নেতার বাসা-বাড়িতে যাওয়া হয়েছে আমার। একই ভাবে বার কয়েক ওনার বাড়িতেও যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু আন্তরিকতার এমন আচরন অন্য কোথাও পাইনি কখনো।

লেখার প্রারম্ভিকেই বলেছি, ওনি দীর্ঘসময় ক্ষমতার বাইরে। তথাপি সবচেয়ে লক্ষণীয় বাস্তবতা হল, এখনো তিনি হলদিয়ার ভোটের রাজনীতির মহাগুরু, একচ্ছত্র অধিপুরুষ। নিজে নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও তাঁর ঈশারায় জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়। নির্বাচনের পুরোটা সময় প্রার্থী এবং ভোটারদের দোলাচলে রেখে একেবারে শেষ মুহূর্তে যোগ্য এবং পছন্দের একজনের প্রতি কৌশলে সমর্থনের ঈঙ্গিত দেন এবং তাঁর অনুগত বিশাল ভোট ব্যাংকও সেটা বুঝতে পেরে তাঁর সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করেন। আর এই কারনে এখনো হলদিয়ার নির্বাচনে প্রার্থীরা তাঁর সমর্থন আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান এবং ভোটাররাও এটা দেখার অপেক্ষায় থাকেন যে, শেষ পর্যন্ত জনাব চৌধুরীর সমর্থন কার পক্ষে যাচ্ছে। হলদিয়ায় যুগযুগ ধরে এভাবেই চলছে তাঁর পরোক্ষ শাসন এবং এটাই হলদিয়ার নির্বাচনের চরম বাস্তবতা, এটাই ইতিহাস। যারা হলদিয়ার ভোটের রাজনীতি সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখেন তারা বিষয়টাকে একবাক্যে মেনে নেবেন বলে আমার ধারনা। একজন রাজনীতিবিদ গণমানুষের মনে কতটুকু আস্থা এবং ভালবাসা আদায় করে নিতে পারলে তাদের কাছে অমরত্ব লাভ করতে পারেন সেটার জ্বলন্ত উদাহরন এই মাহমুদুল হক চৌধুরী।

“মানুষ মানুষের জন্য” চিরন্তন এই সত্য বাণীটির ধারক বাহক জনাব মাহমুদুল হক চৌধুরী। যেখানেই মানুষের বিপদ সেখানেই এই মহৎ হৃদয়ের মানুষটির আবির্ভাব। গায়ে পড়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই যেন তাঁর জন্মগত স্বভাব। বিপদগ্রস্ত মানুষকে সার্বিক সহযোগিতা এবং মনোবল অক্ষুন্ন রাখার সাহস যুগিয়ে মানুষের মনে শ্রদ্ধা আর ভালবাসার স্থায়ী আসন গড়ে নিয়েছেন বহুকাল আগেই। গণমানুষদের সাথে নিয়ে যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে অন্যায়কারী রাঘববোয়ালদের ঘায়েল করে জনগনের আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন এই রাজনীতিবিদ।

“পৃথিবীর যা কিছু চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” কবি নজরুলের একটি বিখ্যাত কবিতার লাইনটি এখানে উল্লেখ করার বিশেষ একটি মাহর্থ্য রয়েছে। কেননা, পুরুষের জীবন যুদ্ধে উত্থান পতনের পটভূমি তৈরীতে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। যোগ্য সহধর্মিণীই কেবল পারে একজন পুরুষের স্বপ্ন পূরণের সারথি হতে। যেমনটি জনাব চৌধুরীর জীবনের স্বপ্ন এবং সদিচ্ছা গুলোকে ভালবাসার মাধুরী এবং যোগ্য সহযোগিতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিণী জনাবা আশরাফ জাহান চৌধুরী কাজল। মিসেস চৌধুরী কক্সবাজার জেলার প্রথম সংবাদপত্র “দৈনিক কক্সবাজার” এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সর্বজন শ্রদ্ধেয় জনাব নুরুল ইসলাম সাহেবের সুযোগ্য কন্যা। দুই পরিবারের ভিন্ন ঐতিহ্যকে একীভূত করে নতুন এক আবহ তৈরীর মাধ্যমে সমাজে নিজের পাশাপাশি জনাব চৌধুরীর গ্রহণযোগ্যতাকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তা সত্যি প্রশংসনীয়। জনশ্রুতি আছে যে, জনাব চৌধুরীর এই শক্ত গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হওয়ার পেছনে নেপথ্য কারিগর এবং একনিষ্ট উপদেষ্টা হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন তাঁরই সহধর্মিণী জনাবা আশরাফ জাহান চৌধুরী কাজল। মহীয়সী এই নারী নিজেও সমাজে তাঁর সহজাত গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে নিজেকে এক অনন্য ভালবাসা মিশ্রিত শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। ক্ষেত্র বিশেষে কারো কাছে তিনি মমতাময়ী মা, কারো কাছে স্নেহ-শ্রদ্ধার সংমিশ্রনের বোন। আবার কারো কাছে চাচি-খালা কিংবা কারো কাছে তিনি ভাবি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে মন জয় করে নেন সর্বস্তরের জনতার। পারিবারিক ও সামাজিক গন্ডি পেরিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই মহীয়সী নারীর পদচারণা তাঁর জীবনকে করেছে পরিপূর্ণ। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ করেছেন নিজের যোগ্যতা। একথা স্পষ্টই বলা যায় যে, যে বা যারা ক্ষণিকের জন্য হলেও এই মহীয়সী নারীর সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তারা এক বাক্যে এই মহীয়সীর ভূয়সী প্রশংসা করবেন। নিতান্তই পরোপকারী এক নারী। জনাব চৌধুরী সাহেবের সর্বাঙ্গীন জীবনের সুযোগ্য সহযোগী হওয়া এই মহীয়সী নারী যেন তাঁর নিঃস্বার্থ স্বামীটির জন্য সোনায় সোহাগা।

জনাব মাহমুদুল হক চৌধুরীর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে কেবল ইমরুল কায়েস চৌধুরী’র সাথেই আমার চেনাজানা। একটা ভাল সম্পর্কও রয়েছে বলা যায়। খুবই সহজ সরল এবং মিশুক প্রকৃতির এই ছেলে বর্তমানে যমুনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। সততা এবং কর্মদক্ষতা দিয়ে সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে পাকাপোক্ত করেছেন। তৈরী করেছেন একটা শক্ত এবং গ্রহণযোগ্য অবস্থান। সাংবাদিকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও বেশ সরব এই উদীয়মান যুবক। মা-বাবার মতই একটা বড় প্রকৃতির উপকারীভাবাপন্ন মন রয়েছে তাঁর। গতবার ইউপি নির্বাচনে আমার শ্বশুরের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ওনার নিজ গ্রামসহ হলদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। দেখেছি তাঁর গ্রহণযোগ্যতা, দেখেছি তাঁর প্রতি আমজনতার স্নেহ ভালবাসা। ইমরুল চৌধুরী নিজেও গেল ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতার চেষ্টা করেছিলেন। কোন এক অজ্ঞাত কারনে মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে না গিয়ে পুরো ফ্যামিলী সহ আমার শ্বশুরের পক্ষে সমর্থন যুগিয়েছিলেন। সে সময় যা দেখেছি তা থেকে নিশ্চত বলা যায় যে, এই ছেলে অচিরেই হলদিয়ার হাল ধরবেন। তাঁর নেতৃত্বের পরিসীমাটা একদিন হলদিয়ার আঙ্গিনা ছাড়িয়ে উখিয়া ব্যাপী বিস্তার লাভ করারও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং তেমনটি ঘটলে আশ্চর্য্য হওয়ার কিছুই থাকবে বলে আমি মনে করিনা। তাঁর পরোপকারী চরিত্রের একটা ছোট্ট ঘটনা বলছি। যেটার ভুক্তভোগী ছিলাম আমি নিজেই। দিন তারিখ সঠিক মনে থাকলেও ঘটনাটি কিন্তু আমার মনে এখনো গেঁথে রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের এক বড় কর্তার সদলবলে গাড়ি চেকিং এর খপ্পরে পড়ে তাৎক্ষণাৎ গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে না পেরে মামলা দিয়ে তারা আমার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গাড়ির বৈধ কাগজপত্র শো করলেও তারা আমার কাছে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় বার হাজার টাকা দাবী করেন। জরিমানার টাকাটা কমানোর জন্য আমার নিজের এবং অন্য লোক দিয়ে তদবিরের অন্ত ছিলনা। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিলনা। কি করা যায় তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আর ট্রাফিক অফিসের বারান্দায় পায়চারী করতে করতে যখন অনেকটাই ক্লান্ত ঠিক তখনই দেখি ইমরুল চৌধুরী সেই ট্রাফিক কর্তার অফিসে খোশগল্পে রত। ঈশারা দিয়ে ডাকতেই বান্দা হাজির। ঘটনা খোলে বলতে না বলতেই আমাকে নিয়ে সেই কর্তার সামনে গিয়ে সরাসরি এ্যাকশন। বাকিটা বললে আমার মত সবারই তাঁর প্রতি একটা ভালবাসা জন্ম নিবে। শুধু এই টুকু বলছি, সেদিন আমার জরিমানার পরিমানটা নেমে গিয়েছিল ১২ হাজার টাকা থেকে শূণ্যের কোটায়। ভাল না বেসে কি পারা যায়?

প্রিয় পাঠক, বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে জনাব মাহমুদুল হক চৌধুরীকে নিয়ে আমার এ লেখা নয়। এটা একান্তই আমার ভাল লাগা থেকে। একটা ছোট্ট কারন আমাকে বাধ্য করেছে এই মহান মানুষটিকে নিয়ে দু’কলম লিখতে। সেই শৈশব থেকে ওনাকে চিনলেও কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগটা হয়েছিল মূলত আমার শ্বশুরের মাধ্যমেই। যতটুকু জানি, আমার শ্বশুরকে ওনি ব্যক্তিগতভাবে খুবই পছন্দ এবং স্নেহ করেন। যে কোন প্রয়োজনে আমার শ্বশুরও ওনাকে স্মরণ করেন। ওনিও আন্তরিকতার সহিত সময়োচিত বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। অনেকটা আমার শ্বশুরের রাজনৈতিক গুরুর ভূমিকায় থাকেন সবসময়। সম্প্রতি একটি প্রভাবশালী মহল আমার শ্বশুর এবং সাথে আমাকে সহ মোট পাঁচজন নিরীহ এবং নির্দোষ ব্যক্তিকে একটি মিথ্যা ঘটনায় ফাঁসিয়ে জটিল আইনী সমস্যায় ফেলে দিয়েছেন। ঠিক তখনই আবারো আবির্ভূত হন দিকনির্দেশক এবং সাহসের যোগানদাতা হিসেবে। খোঁজখবর রেখেছেন প্রতিনিয়ত। অনেক কাছের জনও যেখানে সেই প্রভাবশালী মহলের ভয়ে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন, সেখানে ব্যতিক্রম শুধু এই মহান মানুষটি। এখানে বলা বাহুল্য যে, এই ঘটনায় ওনার চেয়েও বেশি অগ্রনী ভূমিকা যিনি পালন করেছেন তিনি হলেন উখিয়া-টেকনাফের মাননীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রিয় জননেতা জনাব আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বদি। প্রতি মুহূর্তে এই দু’জন মহান ব্যক্তির অবিস্মরণীয় ভূমিকা আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছে।

জনাব মাহমুদুল হক চৌধুরী অতি সম্প্রতি উখিয়া উপজেলায় অনুষ্ঠিতব্য আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা থেকে ওয়াক-আউট করে সর্বশেষ আলোচনায় আসেন এবং এই ঘটনার জন্য আদায় করে নিয়েছেন জনগনের ভালবাসা ও সমর্থন। কেননা, ওয়াক-আউটের কারন হিসেবে তিনি যা যা উল্লেখ করেছিলেন সেসব ছিল মূলতঃ জনগনের মনের কথা। তিনিই উখিয়া উপজেলার প্রথম সাহসী ব্যক্তি যিনি এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তটি নিতে পেরেছিলেন। তাঁর এই সত্য এবং সাহসী পদক্ষেপটি ফেইসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় গুরুত্বের সহিত প্রকাশিত হয়। প্রশংসীত হয় সব মহলের কাছে। জনগন বলছে, এই বার বুঝি সেই প্রভাবশালী মহলের ক্ষমতার অহমিকায় অন্ধ হওয়া চোখ খোলে যাবে। আমরাও চাই তেমনটা হউক। নিরীহ মানুষ মুক্তি পাক অন্যায় থেকে। যুগে যুগে জনাব মাহমুদুল হক চৌধুরীর মত নেতার আবির্ভাব হউক আমাদের সমাজে। এতে করে ভাল থাকবে সমাজ, নিরাপদে থাকবে মানুষ।

আমি এই মহান মানুষটির সফলতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

কৃতজ্ঞতাঃ এই লেখাটি লিখতে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগীতা করার জন্য আমি অামার অনুজ, সাংবাদিক এবং কলম সৈনিক ছোট ভাই জসিম আজাদের কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ।

লেখকঃ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, ব্যাংকার