পেকুয়া সংবাদদাতা:

পেকুয়ায় বৃদ্ধ জেঠাকে পিটিয়ে হত্যার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সড়কের ইট চুরি নিয়ে জেঠার সাথে দু’ভাতিজার বিরোধ দেখা দেয়। এর জের ধরে দু’যুবক জেঠাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় ওই বৃদ্ধ গুরুতর জখম হন। মুমর্ষ অবস্থায় তাকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। হামলার পাঁচদিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জখমি জেঠার। ১৩জুলাই (বৃহষ্পতিবার) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার মৃত্যু হয়। পেকুয়া থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছেন। সুরতহাল রিপোর্ট শেষে লাশ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে প্রেরন করে। চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেশিরা দাবি করেছেন।

নিহত ব্যক্তির নাম আহমদ মিয়া (৭৬)। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেকগুলদী টেকপাড়া এলাকার মৃত.দুদু মিয়ার ছেলে। হামলাকারী চাচাতো-জেঠাতো ভাই মাহমুদুল করিম ও কামাল হোসেন গা ঢাকা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এদিকে বৃদ্ধের হত্যার এ ঘটনাকে ধামা চাপা দিতে তৎপর হয়েছেন সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইসমাইল সিকদার। গতকাল সকাল থেকে ওই ইউপি সদস্য পেকুয়া থানাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে।

নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছেন হামলাকারী দু’জনের কাছ থেকে ওই ইউপি সদস্য এক লক্ষ টাকা নিয়েছে। তাদের কাছ থেকে একটি অলিখিত ননজুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন তিনি। মধ্যস্থতা হচ্ছে ইউপি সদস্যের মাধ্যমে।
পেকুয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ জহিরুল ইসলাম লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন লাশ মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। হামলায় ওই ব্যক্তি আহত হয়েছেন। মৃত্যুর পর থানায় জিডি হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর পুলিশ আইনি পদক্ষেপ নেবে।

স্থানীয়রা জানায়, গত ৯জুলাই বিকেলে সড়কের ইট চুরি নিয়ে প্রতিবাদ করেন আহমদ মিয়া। এ সময় একই এলাকার মৃত.মোকতার আহমদের ছেলে মাহমুদুল করিম ও আলতাফ আহমদের ছেলে কামাল হোসেন তাকে মারধর করে। এ সময় ধাক্কা দিয়ে তাকে রাস্তায় ফেলে দেয়। মুমর্ষ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। আহমদ মিয়ার পুত্র বধু আনজুমান আরা বেগম ও নাতনি জোৎ¯œা আকতার জানায় সড়কের ইট নিয়ে আহমদ মিয়ার সাথে এ দু’জনের বাকবিতন্ডা হয়। এ সময় তারা মারপিট করে ধাক্কা দিয়ে রাস্তার ধারে ফেলে দেয়। পাঁচ দিন চিকিৎসায় ছিলেন। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর হামলাকারীরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। মাহমুদুল করিম ও কামাল হোসেন চাচাতো-জেঠাতো ভাই। তারা আহমদ মিয়ার ভাতিজা।

ইউপি সদস্য ইসমাইল সিকদার জানান, দু’জনের কাছ থেকে ষ্ট্যাম্প নিয়েছি। টাকা নেয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, সদরের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে দু’পক্ষকে নিয়ে মধ্যস্থতার জন্য ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছি। এ বিষয়ে জানতে আহমদ মিয়ার ছেলে মীর কাসেমের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কোন ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত ছিলেন। এ বিষয়ে ইসমাইল মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করতে এ প্রতিবেদককে জানান মীর কাসেম।

অপরদিকে অভিযুক্ত মাহামুদুল করিম জানায়, বিষয়টি নিয়ে আমাদের দু’পক্ষের মধ্যে ফায়সালা চলছে। নিস্পত্তির জন্য সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য ইসমাইল উদ্যেগ নেন। আহমদ মিয়ার ছেলেদের সাথে বৈঠক হয়েছে। বিশ হাজার টাকা চেয়ারম্যানকে জমা দিয়েছি। অবশিস্ট টাকা শনিবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ টাকা জমা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। কি হবে না হবে সেটা আইনের বিষয়।

পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত টিএইচও ডা.মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে যোগোযোগ করা হয়। রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।