অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন

আমাদের চোখের সামনে ্এমন সব উদাহরন দেখতে পাচ্ছি যেখানে উন্নয়নের নামে প্রভুত অর্থ বিনিয়োগ করে সম্পদ বা ধংংবঃ“সৃস্টি করা হয়েছে – যার যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন করা যাচ্ছে না বা হচ্ছেনা। এমনকি রক্ষনাবেক্ষন কে করবে তা ঠিক হয়নি এখনও এবং রক্ষনাব্ক্ষেনের জন্য যে টাকার প্রয়োজন তার কোন সঙ্গতি নেই। প্রশ্ন হচ্ছে পরিকল্পনা করার সময় পরিকল্পনাবিধরা এদিকটা ভেবেছিলেন না ভাবেননি? আমরা জানি রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সৃস্ট – তা সে ককসবাজার জেলার একমাত্র প্রধান সড়কটি – সম্পদ সমস্যা আরো বাড়িযে তুলে থাকে। এরকম আরো অনেক উদাহরন দেওয়া যায়।

আমরা জানি ককসবাাজারের এই মেইন রোডে তেমন কোন ভি আই পি আসা যাওয়া করেন না। তাই এর ক্ষতও তেমন সারেনা। যেকজন আসা যাওয়া করেন তাদের গাড়ির উন্নতমানের কয়েল স্প্রিং এর বদৌলতে রাস্তার গর্তে চাকা পড়লে তা হালকা দোলা দেয় । এতে তেমন কোন কস্ট হয় না। বার্মিজ মার্কেট আসা যাওয়া পর্যন্ত বড় গাড়িওয়ালাদের তেমন কোন অসুবিধা হয়না। অসুবিধা হয় আপামর সাধারন মানুষের । যাদের প্রতিদিন অফিসে , স্কুলে যেতে অসুবিধা হয়।আমি ৬২ বছরে বাজার ঘাটা, বোড্ডিষ্ট টেম্পল রোডে যে স্্েরাত দেখেছি, তা মহেশখালী চেনেলের ত্রিমুখি ¯্রােতকেও হার মানায়। খবরে দেখেছি একচাকুরিজীবি মহিলাকে ভেসে যেতে। একটুর জন্য মারা যান নি।

আমার ৬২ বছর বয়সে এই বাজার ঘাটার পরিবর্তন কয়েকবার দেখেছি। এক এক বার পরিবর্তনে দীর্ঘ সময় লেগেছে।দীর্ঘ সময় বড় বড় গর্ত হওয়া সত্বেও সবাই নীরব ভুমিকা পালন করেছিলেন।পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হলেও তা বায়বিয় পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তবে একটা কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। রাস্তার দুপাশে গজিয়ে উঠা দোকান পাঠ সব সরে গিয়েছল। গাড়িঘোড়া প্রায় সুশৃংখল ছিল বললে চলে। বর্তমানে যেখানে আবু সেন্টার এটি একটি সবুজ সবজির ক্ষেত ছিল। বর্তমান নালাটি সোজা এই জায়গার মধ্যিখানে দিয়ে চলে গিয়েছিল। আমাদের সাবেক পৌর পিতা মরহুম জনাব মোজাম্মেল হক এই নালাটিকে সংস্কার করে দিয়েছিলেন।

মাননীয় মেয়র মাহবুবুর রহমানের অক্লান্ত চেস্টায় বাজার ঘাটা নালা দখল মুক্ত হয়েছে। অন্তত এ বছর বাজার ঘাটা রাস্তায় পানি উঠেনি। এই জন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদ।

আমার জানা মতে বাজার ঘাটার রাস্তা বার্মিজ স্কুল পুল হতে বাজার ঘাটা পুল পর্যন্ত প্রায় এক ফুট উচু করা হয়েছিল।কিন্তু আসেপাশের নালা নর্দমা ভরাট হওয়ায় নালার পানি রাস্তায় চলে এসেছে। যতটুকু নালা থাকার কথা তা বর্তমানে প্রায় জায়গায় নেই।নালার পরিধি ছোট হওয়াতে বালি জমে ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমান জেলা প্রশাসনের তদন্ত দল যে ক্ষত গুলি চিহ্নিত করেছেন , প্রাথমিক পর্যায়ে তা কার্যকর করলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলে বিশ্বাস।জরিপে ফিক্রাস পয়েন্ট ধরে হিসেব করলে অবশ্যই অবৈধ দখল বের হয়ে আসবে। আমার দু:খ হয় । জনদুর্ভোগ প্রশাসনের চোখের সামনে বাড়তেই থাকে ,অথচ কিছু করার নেই। আপনারা দেখুন মেরিন ড্রাইবে সামরিক বাহিনীর লোকেরা রাস্তায় পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে ,চোখের পলকে পরিস্কার করে মানুষ চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছেন।মেরিন ড্রাইবে কোথাও একটু ক্ষত হলে সাথে সাথে মেরামত করে দেওয়া হয়। আমি বলবো আমাদের রাস্তা মেরামতের কাজটি এই মেরিন ড্রাইবের সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিলে কেমন হয়।তাঁরাতো বাংলাদেশের অনেক রাস্তাকে সুন্দর করে দিয়েছেন। যেমন ঢাকায় তাঁরা অনেক রাস্কার কাজ করেছেন সফলতার সাথে।(হাতির ঝিল)ঐ সব টেন্ডারবাজীও বন্ধ হয়ে যেতো।

ককসবাজার এর দক্ষিন টেকপাড়ায় বাইতুল মোয়াজ্জম মসজিদের পুর্ব পার্শে প্রায় ১৬ থেকে ২৫ ফুট নালার এক ফুট ও অবশিষ্ট নেই। সব দখলে চলে গেছে।কার অবৈধ দখলে কতটুকু রয়েছে তা পৌরসভা জরীপও করেছে কয়েকবার । তার হিসেব তাদের কাছে আছে।বি এন পি আমলে একবার ইভিকশানে গিয়েছিলেন প্রশাসন । বি এন পি নেতাদের আস্ফালনে তা বন্ধ করে ম্যাজিস্ট্রেটকে ফিরে য়েতে হয়েছে।

এতো গেলো নালা নর্দমার কথা। এবার পানি সরবরাহের কথায় আসি। ককসবাজারে প্রথম পানি সরবরাহ হলে , ওয়াসা ডিপার্টমেন্টের লোকেরা ঘরে ঘরে গিয়ে পানি সংযুগ দিতে থাকে খুব অল্প খরচে।যেমন ২০০ /১০০ টাকায় ও সংযুগ দেওয়া হয়।সেই থেকে এই পর্যন্ত বলা হয় “ ওয়াটার ইজ নট ড্রিংকেবল”। পাকিস্তানের আমলে বড় কবরস্থানের পাশে পাহাড়ের চুড়ায় বিশাল রিজার্ভার নির্মান করা হয়। একদিনের জন্য ব্যবহার হয়নি।পানি উত্তোলন করায় মাটি সরে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে। বিভিন্ন জায়গার পানিউত্তোলনের জন্য মেশিন বসালেও গ্রাহকের কাছে তা পৌছায় না। তার কারন অনেক। যেমন বইল্যাপাড়া ককসবাজারের অনেক উচু জায়গা। এখানে পানির লাইন রয়েছে। কিন্তু গ্রাহকরা পানি পায়না। অবশ্য এখন লাইন নাই বললেই চলে। ঐ রাস্তায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্টানে বড় বড় লাইন দিয়ে তখন পানির সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে উপরের দিকে আর পানি চাপ থাকতো না। ঠিক মেইন রোডেও কয়েকটি দোকানে দেখা যায় ওয়াসার পানি চলাকালীন সময়ে বড় মটর দিয়ে পানি টেনে নিতে।আবার মাঝে মাঝে এই পানির উত্তোলনের মটর পুড়ে যায়। পানি পরিকল্পনাবিধরা একটু ভাবলে বোধহয় এর সমাধান হয়েযেতো। যেমন ১৯৯১ প্রলয়ের সময় ব্রিটিশ কোম্পানী ‘‘অক্রাফাম” পানি শোধনের জন্য বেশ কিছু যন্ত্রপাতি দিয়েছেন।তাঁরা দেখিয়েছেন ময়লা পুতিগন্ধময় পানিকে কিভাবে ক্রিষ্টাল ক্লিয়ার করা যায়। যদিও প্রজেক্টটি ছোট ছোট আকারে ছিল।কারন তখন বিভিন্ন জায়গার সুপেয় পানির অভাব ছিল। আমাদের বিশাল সমুদ্র “বে অব বেঙ্গল” । এর পনিকে কি ট্রান্সপ্লেন্টেসানের মাধ্যমে কি সুপেয় পানিতে পরিণত করা যায়না। এটা কি সোনাদিয়ায় সমুদ্র বন্দরের চেয়ে ব্যয় বহুল? বাংলাদেশের অনেক এনজিও পানি শোধনের ব্যাবস্থায় কাজ করছেন বলে আমার বিশ্বাস। যেমন বৃস্টির পানি ধরে রেখে পরিশোধন করে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া। ১৯৬৭ সালে আমি দেখেছি বোড্ডিস্ট টেম্পল রোডের রাস্তায় যেখানে অক্রাফোর্ড স্কুল আছে । পেছনে পাহাড় ছিল , তার গা ঘেসে ছোট্ট একটি মটকা অর্থাৎ কলসী বসানো ছিল। তার থেকে পরিস্কার একদম ক্রিস্টাল ক্লিয়াল পানি উঠে আসছে। যাকে লোক জন “ চিও কুয়া” বলতো। রাখাইন মেয়েরা , পাড়ার লোকেরা সবাই পানি সংগ্রহ করছে। পানি এখন হয়তো নেই। নীচে নেমে গেছে। বড় বড় অট্টালিকা হয়েছে। এই রাস্তার আরেকটু এসে কেয়াং এর প্রবেশদ্বারে রাখাইনদের “হলি পন্ড” অর্থাৎ পবিত্র জল। প্রত্যেকদিন সকালে রাখাইন মেয়েরা জল নিতে আসতো এই পুকুরে।স্বচ্ছ জলে মাছের খেলা দেখে অনেকে অভিভুত হয়েযেতো। এখন এটাকে ভরাট করে বাঁশ বিত্রিুর হাট বসানো হয়েছে।এর জল প্রায় সারা বছর একি লেবেলে থাকতো আমরা দেখেছি। এখন পানি স্থর নেমে গেলেও পুকুর রক্ষা করা তেমন কঠিন নয়।

ব্রিটিশ কালেক্টরেট সাহেব রীচেল সাহেবের নিস্কর পাহাড় “মগ দানবীর নক্কুদং” এর দানকৃত পাহাড় জাদিমুরা প্রায় বেদখলে চলে গেছে। পাহাড়ের পার্শ্বে বড়–য়াদের ঘর বাড়ী তৈরী হয়েছে। যেকোন সময় পাহাড় ভেঙ্গে পড়তে পারে।

এবার বাজার ঘাটার নাপিতা পুকুরের কথায় আসি । বাজার ঘাটার সমস্থ ময়লা , পুজ সব এই পুকুরে পতিত হয়। পার্শ্বে লেখা আছে পুকুরের জল পরিস্কার রাখার জন্য সাইনবোর্ড এ নানা কথা। ঠিক এর পার্শ্বেই পুকুরে সব সময় দেখা যায় পুরুষ দাড়িয়ে প্রশ্্রাব করছে সিগারেট ফুকে ফুকে। এর পার্শ্বে আরেকটি পুকুর ছিল । তা ভরাট করে মার্কেট হয়েছে।বর্তমান মেয়র মাহবুবুর রহমান এর চেস্টায় এই পুকুরের পাশ্বে সিড়িযুক্ত রিটেইনিং ওয়াল তৈরি হয়েছে।

গন চীনের হোয়াংহো নদীর চেয়ে দু:খ হলো আমাদের পৌরসভার একমাত্র মেইন রোডটি। বাজার ঘাটার দু:খ কিছুটা কেটেছে। এখন নতুন নতুন দু:খ সংযোগ হচ্ছে।যেমন ফায়ার ব্রিগ্রেডের কাছে বিরাট পুকুর । কিছু ্ইট ফেলে মানুষের চলাচলের আরো দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। রাস্তা মেরামতের নামে পাঁচমাস ছয়মাস মানুষকে কস্ট দিয়ে লাভ কি। কোরাল রীফের সামনে একসাথে রাস্তা মেরামত করা যেতো । একটুকরো মেরামত করবেন দশটুকরো ভেঙ্গে যাবে। এ কেমন কথা।বুঝলাম এই রাস্তায় ভারী গাড়িচলাচল করে। তাতে কিছু রাস্তার ক্ষত বেড়ে যাচ্ছে। তা কি প্রতিদিন মনিটরিং করার লোক সড়ক ও জনপদের নেই। এভাবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে লাভ কি? রাস্তার দুপাশে খোড়াখোড়ির ফলে যে এবড়ো থেবড়ো জাগাগুলিকে সমান করে দিলে অন্তত মানুষ , গাড়ি চলতে পারতো। দেখা যায় বিরাট বিরাট উচু স্লেব বসিয়ে গাড়ি ,মানুষ কিছুই চলতে পারছে না। এমনিতেই ফায়ার বিগ্রেডের মতো গুরুত্বপুর্ন জায়গার সামনে বিশার মাছের বাজার এবং এর পার্শ্বে চার লাইন টমটমের সারি। মানুষ কিভাবে চরবে আপনারা বলুন। আমার প্রশ্ন এসব দেখার কি প্রশাসন কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্টান নেই? আমি এও দেখেছি কোন সময় যানজট ব্যাপক আকার ধারন করলে। কিছু লাটি পেটানোর ফলে যানজট সুশৃঙ্খল গতিতে চলে। ঠিক সেই রুপ পাকিস্তানের আমলে গাড়ি কম থাকলেও বাঘমার্কা নামের আর্মি যখন রাস্তায় নামে তখন এইসব ড্রাইবার অসম্ভব সুশৃঙ্খল হয়ে যেতো। এসবের দিকে উন্নয়ন ব্যাপারিরা তেমন কোন তড়িত পদক্ষেপ নিচ্ছেননা বলেই মনে হয় । কারন কোন মন্ত্রী মিনিষ্টার ঐ রোড দিয়ে যাবেন বললে তুলকালাম কান্ড হয়ে যায়। রাতারাতি রোড তৈরী। অথচ আইবিপি ও সামনের মেইন রোড এর দিকে , বাজার ঘাটার স্টান্ডার্ড ব্যাংকের সামান্য ক্ষত সারাতে বছরের পর বছর লেগে যায়। সত্যি সেলুকাস।

পরিশেষে আমি বলতে চাই , এসব কাজ ঠিকাদাররা করলেও সামরিক বাহিনীর লোকবল নিয়োগ করে তদারকি করলে সচ্ছতা আসতে পারে বলে মনে হয়। আমরা দেখেছি ঢাকায় বেশ কিুছু কাজ যেমন হাতির ঝিল সহ অনেক কাজ সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।