আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে:
মালয়েশিয়া সরকার ঘোষিত অবৈধ শ্রমিকদের রিহায়ারিংয়ের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার জন্য আবারও আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশিদের আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈধ হতে নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বুধবার মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুহ. শহীদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ই-কার্ডের (এনফোর্সমেন্ট) মাধ্যমে ৯২ হাজার ৭শ ৯১ জন অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক নিবন্ধিত হয়েছেন এবং ই-কার্ড পেয়েছেন। যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া ই-কার্ড নিবন্ধনের সময়সীমা ৩০ জুন শেষ হলেও রিহায়ারিং প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। এ প্রক্রিয়া চলবে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। এ প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত দুই লাখ ৮৭ হাজার ৩শ ১১ জন বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিক নিবন্ধন করেছেন। যারা এখনও নিবন্ধন করেননি তাদের দ্রুত মাই-ইজি, ভূক্তিমেঘা ও ইমান এই তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের ডিফেন্স উইং প্রধান এয়ার কমডোর মো. হুমায়ূন কবির, দূতালয় প্রধান ওয়াহিদা আহমেদ, মিনিস্টার পলিটিক্যাল রইছ হাসান সারোয়ার, কমার্শিয়াল উইং ধনঞ্জয় কুমার দাস, ফার্স্ট সেক্রেটারি (শ্রম) হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল, ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট ও ভিসা) মো. মশিউর রহমান তালুকদার, শ্রমশাখার ২য় সচিব মো. ফরিদ আহমদ।

রিহায়ারিং প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে বৈধ হতে পারবেন যারা
যারা বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় এসেছেন, পাসপোর্ট আছে কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, কমপক্ষে ছয় মাস অবৈধ অবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, কোনো অপরাধের রেকর্ড না থাকলে, বয়স ৪৫ বছরের কম হলে এবং পূর্বতন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইমিগ্রেশনে কোনো অভিযোগ না থাকলে।

নিয়মাবলি
১. শ্রমিকদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বা চিঠির মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
২. ইমিগ্রেশন হতে ভিসা স্টিকারপ্রাপ্তি সাপেক্ষে লেভি শোধ করতে হবে।
৩. রিহায়ারিং কর্মসূচির আওতায় বৈধতার মেয়াদ হবে তিন থেকে পাঁচ বছর।

মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো এজেন্ট বা দালালের মাধ্যমে রিহায়ারিং না করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে যারা ই-কার্ড পেয়েছেন তাদের পাসপোর্ট না থাকলে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট নিতে হবে এবং রিহায়ারিংয়ের কাজ শেষ করতে হবে।

এসব বিষয়ে হাইকমিশনার বলেন, প্রতিমাসের তৃতীয় সপ্তাহের শনি ও রোববার জহুরবারু, পেনাং, মালাক্কা, ক্যামেরুন হাইল্যন্ডসহ বিভিন্ন প্রদেশে দূতাবাসের মোবাইল টিম নতুন পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ ও পাসপোর্ট বিতরণ করছে।

তিনি বলেন, কোনোভাবেই দালালদের হাইকমিশনের আশেপাশে ঘেঁষতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে সিরিয়াল অনুযায়ী ডিজিটাল পাসপোর্ট তৈরি এবং নবায়ন থেকে শুরু করে সবই হচ্ছে নিয়ম মোতাবেক। হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী শ্রমিকবান্ধব হওয়ায় প্রবাসীরা দ্রুত সেবা পাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা শ্রমিকরা কোনো ধরনের দালাল ছাড়াই যাতে তাদের কাজ অল্প সময়ে শেষ করে চলে যেতে পারেন, ইতোমধ্যে সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, পেনাং থেকে নতুন পাসপোর্ট নিতে আসা শ্রমিক জয়নাল লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। মালাক্কা প্রদেশ থেকে এসেছেন মোমিন। তিনি জানান, টোকেন পেয়েছেন। এখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভিজ্যুয়াল কক্ষ সবই তার কাছে ভালো লাগছে। তেরেঙ্গানু থেকে আসা ফিরোজুল নতুন পাসপোর্ট হাতে পেয়ে খুব খুশি।

এদিকে গত ৩০ জুন মধ্যরাত থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ। এই অভিযানে ৫৭ জন নিয়োগকর্তাসহ সাড়ে তিন হাজার অবৈধ বিদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দেড় হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

তবে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ ও বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে তিন হাজার ১৪ জন বিদেশি শ্রমিকের মধ্যে এক হাজার ১৬০ জন বাংলাদেশি, ৬৯৫ জন ইন্দোনেশিয়ান, ২৩১ জন মিয়ানমারের, ১১৬ জন ভিয়েতনামিজ, ১১১ জন থাই, ৯৫ জন ফিলিপিন্স এবং বাকিরা অন্য দেশের নাগরিক।

অভিযানে গতকাল (১২ জুলাই) পর্যন্ত ৯ হাজার ৬০২ জন বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ ভিসা চেক করা হয়েছে বলে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইমিগ্রেশন পুলিশ ৫৭ জন কোম্পানির মালিককে আটক ছাড়াও ১৮০ জন মালিককে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনে দেখা করার জন্য নোটিশ পাঠিয়েছে।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ প্রধান মোস্তাফার আলী বলেন, যতদিন না সব অবৈধ শ্রমিককে আটক করতে পারছি ততদিন এই সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।