এম.আর মাহমুদ:

‘ঘর পোড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়, চুন খেয়ে ইঁদুর মুখ তেলিয়ে দই দেখলে ভয় পায়।’ অনুরূপ অবস্থা চকরিয়ার বাঁনবাসী মানুষের ক্ষেত্রে। বর্ষায় একটু প্রবল বর্ষণ দেখলেই মানুষগুলো শংকিত হয়ে উঠে। সম্প্রতি বন্যায় চকরিয়ার সিংহভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও খেয়ে না খেয়ে আবার জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েছে বেঁচে থাকার তাগিদে। কৃষকেরা আমন চারা বপনের জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কেউ কেউ নষ্ট হয়ে যাওয়া বীজতলা নিয়ে চিন্তিত। এ সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ধান বীজের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে কৃষকদের গলা কাটছে। বন্যার পানি কমার পর চকরিয়ার চিরচেনা রাস্তা-ঘাটগুলো হতশ্রী হয়ে যোগাযোগ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব রাস্তা পুরোদমে সংস্কার করতে বর্ষা মৌসুম হয়তো শেষ হয়ে যাবে। চকরিয়ার কাকারার দরগাহ রাস্তার মাথা হয়ে কাকারা বাইজ্যাতলা পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে বিশিষ্ট সমাজসেবক মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন কন্ট্রাক্টরের নামে। অপরটি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ব্যাংকার মরহুম জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী সড়কটিরও অনুরূপ অবস্থা। এছাড়া কৈয়ারবিল সড়ক, বরইতলী, হারবাং, পূর্ব বড় ভেওলা, বি.এম.চর, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, খুটাখালীর অধিকাংশ সড়কই চন্দ্রপৃষ্ঠের মত গভীর খাদ সম্বলিত যেন একবার পা পঁচকালে বাঁচার আশা নেই অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ফলে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে বরাদ্দ না পেলে এসব সড়ক পুনরায় সংস্কার করা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে মানুষের দূর্ভোগ কোনভাবেই কমবে না। বিশেষ করে যাতায়াতের ক্ষেত্রে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরাই বড় বেকায়দায়। পরবর্তীতে বন্যা হলে এসব রাস্তার অবস্থা আরো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশংকা করছে এলাকাবাসী। বি.এম.চর ইউনিয়নের কুরাইল্যার কুমের ভাঙ্গন জরুরীভাবে সংস্কার করা না হলে উপকূলীয় ৭টি ইউনিয়নের অবস্থা হবে আরো করুণ। সড়ক জনপদ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন চকরিয়া বদরখালী সড়কের কোরালখালী থেকে পশ্চিম বড় ভেওলার দরবেশকাটার লাল-গোলা পর্যন্ত অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। অপরদিকে বন্যার পানি কমার পর মাতামুহুরী নদীর বেশ কয়েকটি অংশে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রপার কাকারা বাইজ্যাতলা হয়ে ভাঙছে। একই কায়দায় পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ১নং গাইডবাঁধ এলাকার বিশাল অংশ নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বুধবার দুপুরের দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে নদীর গতি পরিবর্তন হতে আর বেশি সময় লাগবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গন ঠেকাতে স্পার নির্মাণ করলেও কাজে আসেনি। বর্তমানে জিও টেক্সটাইলের বস্তায় বালু ভর্তি করে নদীতে ফেলছে। কি জানি সর্ফলতা কতটুকু আসে। ইতিমধ্যে ঘুনিয়া বেড়িবাঁধ (শহরক্ষা বাঁধ) এ ফাঁটল দেখা দেয়ায় গণি সিকদার পাড়ার লোকজন বসতবাড়ির মালামাল সরাতে দেখা গেছে। ওইসব এলাকার লোকজন চরমভাবে শংকিত।

এদিকে পার্বত্য বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার লোকজন বন্যা থেকে রক্ষার জন্য মাতামুহুরী নদীর গতি পরিবর্তনের নামে আন্দোলন শুরু করেছে। তারা সংবাদ সম্মেলন করে মাতামুহুরী নদীর গতি পরিবর্তনের দাবী জানিয়েছেন। প্রাকৃতিকভাবে দুইখ্যা (দুঃখ) সুইখ্যা (সুখ) নামক দুটি পাহাড়ের মাঝ দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে ভাটির দিকে। এ নদীর অসংখ্য শাখা খালের পানি প্রতি বছর বন্যার সময় চকরিয়ার উপর দিয়ে পেকুয়া সহ নিম্নাঞ্চল ডুবিয়ে দেয়। তবে ঐ দুটি পাহাড়ের কারণে মাতামুহুরী নদীর প্রবল বন্যার পানি দ্রুত আসতে সামান্য প্রতিবন্ধকতা হয় বলে চকরিয়া পেকুয়ার লোকজন বন্যার পানি থেকে বাঁচতে একটু সময় পায়। যদি এ দুটি পাহাড় কেটে নদী প্রশস্ত করা হয় ভাটি অঞ্চলের লোকজন আর রক্ষা পাবে না। যা হবে চকরিয়া ও পেকুয়াবাসীর জন্য মহা বিপদ। লামার শহরক্ষার জন্য পরিকল্পনা মোতাবেক একটি বাঁধ নির্মাণ করলেই উপজেলা সদর রক্ষা পাবে। সামান্য একটি উপজেলা সদর রক্ষার জন্য পাহাড়ে বসবাসরত লোকজন নদীর গতি পরিবর্তনের দাবী যথার্থ কিনা চিন্তা করার সময় এসেছে। মাতামুহুরী নদীর গতি পরিবর্তন হলে লাভ হবে শুধুমাত্র লামা পৌরসদরের। ক্ষতি হবে অন্তত দু’টি উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে চকরিয়া পেকুয়ার চিংড়ি ঘের, লবণ মাঠ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি। লামাবাসীর দাবী বাস্তবায়ন হলে যা হবে ‘মন্দ যদি তিন চল্লিশ, ভালোর সংখ্যা সাতান্নর মতই’।