মো. নুরুল করিম আরমান, লামা
বান্দরবানের লামা উপজেলায় মেলার টাকার জোগান দিতেই ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক মো. কামাল উদ্দিনকে খুন করে তিন যুবক। উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিতে খুনিরা এ দোষ স্বীকার করে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় স্থানীয় কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্ট’র কনভেনশন হলে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন এ তথ্য প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি আরও বলেন- মোটর সাইকেল চালক কামাল উদ্দিন খুনের পরপরই তদন্তের জন্য বিশেষ একটি টিম গঠন করা হয়।
পুলিশের উপ-পরিদর্শক কৃষ্ণ কুমার দাশ, খালেদ মোশারফ ও খাইরুল হাসানকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং গিয়াস উদ্দিন ছিলেন সহায়তাকারী। তদন্ত কর্মকর্তারা নিহত কামাল উদ্দিনের হারানো মোবাইল ফোনটির সূত্র ধরে মামলার তদন্ত শুরু করে। ধীরে ধীরে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ হাতে নিয়ে গত ৮ জুলাই সরই ইউনিয়নের টংগঝিরি পাড়ার বাসিন্দা যুদ্ধারাম ত্রিপুরার ছেলে শৈত মণি ত্রিপুরা (১৮), নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের লংগু উত্তম ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা এনজয় ত্রিপুরার ছেলে মাইকেল ত্রিপুরা (১৮) এবং রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি ইউনিয়নের ঝাড়ুসরি পাড়ার বাসিন্দা মেনঙ্গি মুরুংয়ের ছেলে মাংচ অং মুরুং কে (১৮) ক্যয়াজুপাড়া বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা সরই উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ক্যায়াজুপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় এক সাথে থাকত।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা নিজেদের দোষ স্বীকার করলে পুলিশ উপজেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। বিজ্ঞ বিচারকের কাছেও স্ব-ইচ্ছায় গত সোমবার রাতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দেয় তিন যুবক।
উল্লেখ্য, ২৬ মে শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার সরই ইউনিয়নের হিমছড়ি এলাকার বাসিন্দা মৃত অজু মিয়ার ছেলে মো. কামাল উদ্দিনকে অপহরণের পর খুন করে দুর্বৃৃত্তরা। পরদিন শনিবার গভীর রাতে গজালিয়া ইউনিয়নের ডিসি রোড এলাকার জনৈক হালিমের রাবার বাগান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ছকিনা বেগম (২৮) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে লামা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- ১৩, তারিখঃ ২৯ মে ২০১৭ইং)।
অভিযুক্তদের বরাত দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, গত ২৬ মে শুক্রবার রাতে সরই ইউনিয়নের পাশাপাশি গজালিয়া ইউনিয়নের গাইন্ধা পাড়ায় মেলা বসে। এ খবর পায় তিন বন্ধু শৈতমনি ত্রিপুরা, মাইকেল ত্রিপুরা ও মাংচ মুরুং। কিন্তু তাদের কাছে ছিল মাত্র ১শত টাকা। তখন তারা আরও টাকা যোগান দিতে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মাপিক প্রথমে কেয়াজুপাড়া পশ্চিম বাজারের একটি কামারের দোকান থেকে ১টি ছুরি কিনে। তারপর তিনজন মিলে মো. কামাল উদ্দিনের মোটর সাইকেলটি ৫শত টাকা চুক্তিতে ভাড়া নেয়। মোটর সাইকেলটি গজালিয়া ডিসি রোড সংলগ্ন হালিমের রাবার বাগানের সামনে পৌঁছলে চালককে গাড়ী থামাতে বলে ওই তিন যুবক। এসময় মোটর সাইকেল চালককে জোর করে বাগানের ভিতরে নিয়ে তার পকেটে থাকা নগদ ৭শত টাকা ও মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয় তারা। এরপর উপর্যপুরি ছুরি দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করে লাশ ঝোঁপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে রেখে মোটর সাইকেলটি পাহাড়ে নিচে ফেলে দেয়। পরে মেলায় নাচ দেখে পূণনায় ক্যয়াজুপাড়ায় গিয়ে অবস্থান করে।
লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যেহেতু আসামীরা কিশোর, সেহেতু বয়স নির্ধারণের জন্য গ্রেফতারকৃতদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।