চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, অস্থিসন্ধির ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া, মাথাব্যথা, শরীরে র‍্যাশ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। সাধারণত শরীরে ভাইরাস প্রবেশের ২-১২ দিনের মাঝে এসব উপসর্গ প্রকট হয়ে ওঠে। এ বছর ব্যাপক হারে চিকুনগুনিয়া দেখা দেওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও এর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে তাঁরাও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

গর্ভাবস্থায় চিকুনগুনিয়া ঝুঁকিতে ফেলতে পারে মা ও শিশু দুজনকেই। তাদের সাধারণ উপসর্গগুলো ছাড়াও মুখের ভেতর ঘা, পাতলা পায়খানা, রক্ত জমে যাওয়া ও রক্তচাপ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। খুব বিরলভাবে হলেও এই ভাইরাসজনিত রোগে মস্তিষ্ক বা এর পর্দার প্রদাহ, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, রক্তক্ষরণ বা অতিরিক্ত বমির মতো প্রাণঘাতী সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভের শিশুও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি গর্ভপাতও হয়ে যেতে পারে। তাই সতর্কতা জরুরি।

গর্ভকালীন সময়ের শেষ দিকে (৩৬ সপ্তাহের পর) কিংবা সন্তান জন্মের সময় চিকুনগুনিয়া হলে শিশুরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কোনো অবস্থাতেই বাড়িতে সন্তান প্রসব করানো উচিত নয়। তবে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ শিশুকে খাওয়ানোতে কোনো বাধা নেই, বুকের দুধের মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ছড়ায় না।

আপনার এলাকায় চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গর্ভবতী নারী সদস্যের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হোন। মশারি ও ত্বকে লাগানোর মশা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করুন। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। চিকুনগুনিয়া হলে প্রচুর পানি পান করা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া চাই। প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে। অনেক সময় চিকুনগুনিয়ার সঙ্গে ডেঙ্গুকে আলাদা করা কঠিন। তাই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ব্যথার স্থানে গরম নয়, বরং ঠান্ডা সেঁক দিন।

ডা. ফাহমিদা তুলি

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল