আরবে দেখেছি জীবন্ত ইসলামকে (খন্ড-১০)

– মহসীন শেখ

মহানবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত দুই মিহরাবের সেই মসজিদে কিবলাইনে দু’রাকাত নামাজ করার সুযোগ পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিবলাতাইন মসজিদের নামাজরত অবস্থায় আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে আলাদা স্বাতন্ত্র ও অনন্য মর্যাদা দান করেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। আর সাহাবায়ে কিরাম নামাজরত অবস্থায় রাসুলুল্লাহর কিবলা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিবলা পরিবর্তন করে পৃথিবীতে আনুগত্যের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। ঐতিহাসিক দিক থেকে এই মদিনায় অবস্থিত এ মসজিদটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। হাজী ছাড়াও স্থানীয়রা এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অগনিত মুসলিম উম্মাহ্ পবিত্র মদিনার গুরুত্বপূর্ণ এ মসজিদে দু’রাকাত নামাজ পড়তে যান। বলতে গেলে দিন রাত মসদিজটিতে মুসলমান নারী পুরুষের সমাগম থাকে এক নিয়মেই।

গত ১১ মে স্বস্ত্রীক আমাকে পবিত্র মদিনায় নিয়ে যান মক্কায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী নিকটাতœীয় প্রিয় ছোট ভাই রেজাউল করিম কাজল এবং রামু উপজেলার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন।

মসজিদ আল কিবলাতাইন (المسجد القبلتین) (দুই কিবলার মসজিদ) সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত একটি মসজিদ। ঐতিহাসিক দিক থেকে এই মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নামাজ পড়ার সময় মুহাম্মদ (সা) এর কাছে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশের ওহি আসে। এরপর তার সাথে জামাতে নামাজে দাঁড়ানো মুসল্লিরাও জেরুজালেম থেকে মক্কার দিকে ফিরে যায়। এ ঘটনা থেকে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। পূর্বে এই মসজিদে দুইটি মিহরাব ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদের পুনর্নির্মাণের সময় জেরুজালেমমুখী মিহরাব সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এটি পৃথিবীর প্রাচীন মসজিদগুলোর অন্যতম।

“কিবলা” আরবি শব্দ। এর দ্বারা যে মুখী হয়ে নামাজ পড়া বা আদায় করা হয়, সেই দিকনির্দেশ বা বুঝানো হয়ে থাকে। আর দুটি কিবলা বুঝানো হয় কিবলাতাইন শব্দটি দ্বারা। এই মসজিদ ঐতিহাসিক গুরুত্ব লাভ করার কারণ আছে। একই মসজিদে একই নামাজে প্রথমে জেরুজালেম এবং পরবর্তীতে কিবলা পরিবর্তন করা হয় মক্কার দিকে। অনেকের মতে, কিবলা পরিবর্তনের দিন এ মসজিদে জোহর নামাজ আদায় করেছিলেন হযরত মোহাম্মদ (সা.)। দু’রাকাত নামাজ আদায়ের পর জেরুজালেম নগরীর পরিবর্তে মক্কা নগরীর (পবিত্র কা‘বা) দিকে মুখ করে নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহর নির্দেশ পৌঁছে দেন হযরত জিব্রাইল (আ.)। হযরত মোহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে কিবলা পরিবর্তনের মাধ্যমে কা’বামুখী হয়ে অবশিষ্ট বা বাকি দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। একইভাবে হযরত মোহাম্মদ (সা.)কে অনুসরণ করেন মসজিদে উপস্থিত সাহাবাগণও এবং জেরুজালেম ছেড়ে দিয়ে নামাজ আদায় করেন কা’বামুখী হয়ে। ফলে এই দিনে

একই মসজিদে একই নামাজে দুটি কিবলামুখী হয়ে আদায় করা হয় নামাজ। বিশেষ এ ঘটনার পর থেকেই মসজিদটি পরিচিত হয় মসজিদ আল কিবলাতাইন নামে। এদিকে দুই কিবলার মসজিদও বলা হয়ে থাকে।

আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৩ সেপ্টেম্বর। কিবলা পরিবর্তনের এ ঘটনা ঘটে হিজরতের দ্বিতীয় বছরে আরবি রজব মাসের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে। অনেকের মতে, মসজিদ আল কিবলাতাইন ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ। চির ভাস্কর এর আবেদন। এটি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত মসজিদ। এটি দর্শনের মাধ্যমে এক অনন্য প্রশান্তি অনুভব করে দেশ-বিদেশের মুসলমান।

কিবলা পরিবর্তনের দিন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন ওয়াক্তের নামাজ আদায় করছিলেন তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও মসজিদে কিবলাতাইন নিয়ে কারো কোনো মতভেদ নেই।

এ মসজিদে নামাজ আদায়কালে আল্লাহর নিকট দোয়া করলে মানুষের দোয়া আল্লাহ তাআলা কুবল করে থাকেন বলে উল্লেখ্য। যে কারণে একদিকে দুই কিবলার মসজিদ অন্য দিকে এ স্থানে দোয়া কবুল হয়, তাই বছরজুড়ে দেশ-বিদেশের মুসলমানদের আগমনে মুখরিত থাকে মসজিদ আল কিবলাতাইন।

উল্লেখিত কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিম উম্মাহ মদিনা যিয়ারতে আসলে এ মসজিদে নামাজ আদায় করে আলাদা প্রশান্তি লাভ করেন। যা মুসলিম হৃদয়ে অনুসরণীয় আনুগত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে অ¤¬ান-অমলিন। আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদিকে মদিনা যিয়ারতসহ মসজিদে কিবলাতাইন পরিদর্শন ও তথায় নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সকালের কক্সবাজার। মোবাইল:- ০১৬১৯০৭০৫১৩