বন্যা দুর্গতদেরকে পুনর্বাসনের দাবী

মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি :

বান্দরবানের লামা উপজেলায় বন্যা ও পাহাড় ধসে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৫৬০টি ঘরবাড়ি আংশিক এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া রাস্তাঘাট ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে কেউ হতাহত হয়নি। গত রবিবার থেকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা বৃহস্পতিবার উন্নতি হয়।

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, চার দিন পর বুধবার দিবাগত রাত থেকে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে ঢলের পানি নেমে যায়। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ফিরে ঘরে জমে যাওয়া কাদামাটি এবং ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বন্যা কবলিতরা। তবে পানি কমার সাথে সাথে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকায়। টিউবওয়েল এবং রিংওয়েলগুলো বানের ময়লা পানিতে তলিয়ে যাওয়া এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বন্যা ও পাহাড় ধসে পৌরসভা এলাকায় তিন হাজার ঘরবাড়ি, লামা সদর ইউনিয়নে বন্যায় ২৫০টি ও পাহাড় ধসে ২৫টি ঘরবাড়ি, রুপসীপাড়া ইউনিয়নে বন্যায় ১ হাজার ৪৩টি ও পাহাড় ধসে ৭টি ঘরবাড়ি, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে বন্যায় ২০০টি ঘরবাড়ি, সরই ইউনিয়নে ১৫টি ঘরবাড়ি, ফাইতং ইউনিয়নে পাহাড় ধসে ২০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন। একই সাথে পৌরসভাসহ সবক‘টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় রাস্তাঘাট ভেঙ্গে চুরে তছনছ হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বন্যায ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫০ হাজার লক্ষ টাকা এবং দুই কিস্তিতে ১৫ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পানি কমার সাথে সাথে পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ অলিগলিতে জমে থাকা পলি ও ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করা হয়। লামা-আলীকদম-চকরিয়া সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় লামা উপজেলার সঙ্গে আলীকদম এবং কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। পাহাড়ি স্রোতের টানে লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের কুমারী ও ইয়াংছা ব্রিজ দুইটির দুপাশ থেকে মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দেশের সবচেযে উঁচু আলীকদম-থানচি সড়কসহ উপজেলার একটি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়নের অভ্যন্তরীন বেশিরভাগ সড়ক ধসে পড়ে, পানি স্রোতের টানে ও সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই ৪-৫ বার বন্যা শিকার হতে হয় পৌর শহরের প্রায ৪০ হাজার মানুষকে। বন্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিরা। ফলে চীনের দু:খ যেমন হোয়াহু, এখন লামা শহরের মানুষের দু:খ মাতামুহুরী নদী।

এ বিষয়ে লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ পৌরবাসিদেরকে যথাসময়ে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে বন্যা ও পাহাড় ধসে ৩ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়। পৌরসভার পক্ষ থেকে ৬টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বন্যা কবলিতদের মাঝে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি বিতরন করার পাশাপাশি পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে পৌরসভার গুরুত্বপুর্ন সড়ক সমূহ ও অলিগলিতে জমে থাকা পলি ও ময়লাআবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে। বন্যা দুর্গতদেরকে পুনর্বাসনসহ সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ বেসরকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহবান জানান তিনি।

লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, উপজেলায বন্যা ও পাহাড় ধসে সাড়ে চার হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া ফসলি জমিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।