এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া:
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ কমে যাওয়ায় চকরিয়া উপজেলার পুর্বাঞ্চালে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমে উন্নতি হচ্ছে। তবে উপকুলের সাত ইউনিয়নের বির্স্তীণ জনপদ গতকালও পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকার কারনে মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানির প্রবাহ কমে গেলে লোকালয় থেকে বানের পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দুর্গত মানুষের মাঝে বাড়ছে দুর্ভোগ। পাশাপাশি পানি নেমে যাওয়ার কারনে সড়ক-উপসড়কে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহৃ। বন্যার পানি লোকালয় থেকে কমার সাথে সাথে মাতামুহুরী নদীর দু’তীরে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ড ও ১নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল বারী পাড়াসহ অন্তত ১০টি বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে নদীর তীর এলাকায় শতাধিক বসতঘর ও আবাদি জমি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। অপরদিকে দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ মোকাবেলায় গঠন করা হয়েছে উপজেলা সরকারি হাসপাতালের উদ্যোগে একাধিক মেডিকেল টিম।
কোনাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, ঢলের পানিতে ইউনিয়নের একাধিক পরিবারের বসতঘর ভেঙ্গে গেছে, গত তিনদিন ধরে সড়কের উপর পলিথিনের তাঁবু টাঙ্গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে শত শত পরিবার। বেশির ভাগ পরিবার অনাহারে রয়েছে। অধিকাংশ প্লাবিত এলাকার মানুষ খাদ্য ও পানীয়জলের সংকটে থাকলেও তাদের খোঁজ কেউই নেয়নি।
জানা গেছে, টানা পাঁচদিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ঠ বন্যার কারনে উপজেলার কয়েক’শ বসতঘর মাটির সাথে মিশে গেছে। ভেসে গেছে আরো কয়েক’শ। বানের পানিতে লবণাক্ত ও মিষ্টি পানির চিংড়ি ঘের, মৎস্য খামার ও অসংখ্য পুকুর থেকে শত কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্টান ঢলের পানিতে নিমজ্জিত থাকায় স্থগিত করা হয়েছে পরীক্ষা।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানিয়েছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে বন্যার পানি লোকালয় থেকে কমার সাথে সাথে মাতামুহুরী নদীর দু’তীরে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ড ও ১নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল বারী পাড়াসহ অন্তত ১০টি বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে নদীর তীর এলাকায় শতাধিক বসতঘর ও আবাদি জমি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ১৯টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা.মোহাম্মদ ছাবের বলেন, ১৮টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ৪ সদস্য করে ১৮টি এবং ৮ সদস্যের একটি টিম হাসপাতালে জরুরী মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাঁচদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বরসহ পানিবাহিত নানান রোগব্যাধি। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে থেকেও বিশেষ ব্যবস্থায় দুর্গতদের দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের উদ্বৃতি দিয়ে জানান, পাঁচদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে চকরিয়া-পেকুয়ার ঘর-বাড়িসহ রাস্তাঘাট। বানবাসি মানুষ খুব কষ্টে আছেন। সরকারীভাবে ও বেসরকারী উদ্যোগে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা খুবই অপ্রতুল।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ঠ বন্যায় চকরিয়া ও পেকুয়ার ২৫টি ইউনিয়ন ছাড়াও ১টি পৌরসভার সবক’টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি কমছে অতি ধীরে। গতকাল চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, খুটাখালী ও পৌরসভা থেকে পানি অনেকাংশে নেমে গেছে। কিন্তু চকরিয়া-কাকারা-মানিকপুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে এখনো পানি চলাচল করছে। ফলে যান চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বন্যার কারনে যেসব এলাকায় ঢলের পানি কমছে সেখানেই কার্পেটিং, ব্রীকসলিং ও কাঁচা রাস্তার ক্ষতচিহৃ ভেসে উঠছে। কোন বসত ঘরেরই ঘেরা-বেড়া নেই। সব কিছু ভেসে গেছে। হাজার হাজার পরিবারের ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে।
এদিকে, উপজেলা প্রশাসন ও এনজিও থেকে কোন ধরনের পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বা উপকরণ সরবরাহ না করায় বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজন। বন্যার কারণে উপজেলার ৭০ শতাংশ টিউবওয়েলের পানি পান অযোগ্য হয়ে পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কামাল হোছাইন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, বন্যা শুরু থেকে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার দুর্গত মানুষের খবরা খবর প্রশাসন নজরদারি করেছে। বন্যা এবং পরবর্তী সময়ে দুর্গতদের কল্যাণে যেসব কাজ করা দরকার তা করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জোবায়ের হাসান বলেন, এখনো উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। সেই কারনে এখনই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্যার পানি লোকালয় থেকে নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান নির্ণয় করা হবে। এব্যাপারে সকল ইউপি চেয়ারম্যানকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরী করতে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন।