বাংলাদশ প্রতিদিন:

বেশ কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিককালে উচ্চারিত হচ্ছে মিডিয়াপাড়ার কিছু সেলিব্রেটিদের নাম। তাও কি না আবার নেতিবাচকভাবে। আর এসব হাতেগুনা কিছু তথাকথিত তারকাদের কারণে বারবার অভিযোগের আঙুল উঠছে প্রকৃত মডেল ও অভিনেত্রীদের দিকে। কয়েকদিন আগে রেইনট্রি হোটেলের সেই আলোচিত ধর্ষণ মামলাকে কেন্দ্র করে নড়েচড়ে উঠে গোটা মিডিয়াপাড়া। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই কার্লোস নামের ‘ইয়াবা ডন’র নতুন অধ্যায় বের হতে শুরু করেছে। রাজধানীর শাহবাগের পরীবাগে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ৭ তলা থেকে ফেলে গৃহকর্মীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তাকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সালেহ আহমেদ ওরফে কার্লোস তার বেপরোয়া জীবনযাপনের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। এই সালেহ চৌধুরী ওরফে কার্লোস ‘অস্তিত্ব’ সিনেমার প্রযোজক ছিলেন। তাই তার সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে সিনেমাটির পরিচালক অনন্য মামুনের নামও। এছাড়া কার্লোসের রঙিন জীবনের তথ্যও বের হতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, কার্লোস তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত তার ফ্ল্যাটে ‘রুমপার্টি’ করতেন। পার্টির আকর্ষণ বাড়াতে সেখানে যোগ দিতেন শোবিজের মডেল ও অভিনেত্রীরা। তার প্রোডাকশন হাউস ড্রিম বক্স-এর ব্যানারে অস্তিত্ব ছবিটি নির্মিত হয়। তবে জানা যায়, বাংলা সিনেমায় টাকা লগ্নি করার পেছনে তার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। সিনেমা বানানোর আড়ালে দেশের প্রতিষ্ঠিত ও নামকরা অভিনেত্রী থেকে শুরু করে উঠতি মডেলদের নিয়ে তিনি দেশ-বিদেশে ঘুরতেন।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কার্লোস আরও জানান, এদের মধ্যে আছেন মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া বিপাশা, তানভিয়া জামান মিথিলা এবং আরেকজন বিতর্কিত মডেল পিয়াসা। এদের মধ্যে ফ্যাশন হাউস এক্সটেসির মডেল তানভিয়া জামান মিথিলার সঙ্গে তার লিভটুগেদার চলছিল বলে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম দাবি করে। এ বিষয়ে একটি গণমাধ্যমকে মিথিলা বলেন, ‘আমি তাকে চিনি। একটি ছবিতে অভিনয় করা প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা হয়েছিল। এর বাইরে কিছুই না। ’

এসব মডেল অভিনেত্রীর একান্ত সান্নিধ্য উপভোগ ছাড়াও ব্যাংককের বড় বড় ডিস্কোতে কার্লোস মধ্যমণির আসন দখল করে রাখতেন। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের পর্যটন নগরী পাতায়ার রাশিয়ান ক্যাবারে ড্যান্সারদের নাচ দেখে তিনি দু’হাতে ডলারের বান্ডেল ছুড়ে দিতেন। এ ছাড়া ঢাকার গুলশান-১ এলাকায় অবস্থিত মিরেজ নামের একটি শিশা বারে নিয়মিত আড্ডা জমাতেন কার্লোস।

নায়িকাদের অনেককে নিয়ে তিনি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যাতায়াত শুরু করেন। এদের কয়েকজনের সঙ্গে তিনি লিভটুগেদারও করছিলেন।

এদিকে অস্তিত্বের পরিচালক মামুন তার ফেসবুকে লিখেন, ‘প্রযোজককে জড়িয়ে কেন আমার নাম উচ্চারিত ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। এটা সত্য যে সালেহ্ কার্লোস অস্তিত্ব ছবির প্রযোজক ছিলেন। তিনি অস্তিত্বর মত একটা সিনেমা বানানোর জন্য আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি কি ব্যবসা করেন কোথায় যান সেটা কি জানার দায়িত্ব আমার? আমার সাথে তার যোগাযোগ নেই প্রায় বেশ কয়েক মাস। আমি লন্ডনে গিয়ে ছিলাম ১৯ জুনে। সেখান থেকে আমি এখন ওমানে আছি। ঈদুল আযহার পরে একটি প্রোগ্রাম করার পরিকল্পনা করছি এখানে। সেই কাজে এখানে বেশ কিছুদিন থাকতে হবে। সবার কাছে অনুরোধ তাকে জড়িয়ে আমাকে হেয় করবেন না। তার সঙ্গে সম্পর্ক শুধু পরিচালক-প্রযোজকের মতোই। আমি সিনেমার পরিচালক তাহলে আমার কি পরিবার নেই, আমার মান সম্মান নেই। এর দায়ভার আমাকে নিতে হবে কেন?’

এদিকে রাজধানীর পরীবাগের ফ্ল্যাটে চিত্রনায়িকা সাবিনা রিমাকে নিয়ে কার্লোস লিভ টুগেদার করছিলেন বছর খানেক ধরে। গত শুক্রবার যৌন উত্তেজক ইনজেকশন নিয়ে কার্লোস একই সঙ্গে বাসার গৃহকর্মী ও সাবিনা রিমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। নির্যাতন শেষে গৃহকর্মীকে সাত তলার ছাদে নিয়ে নিচে ফেলে দেন কার্লোস। পরে পুলিশ গুরুতর আহত গৃহকর্মীর সঙ্গে সাবিনা রিমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। পরে সাবিনা হাসপাতালের বিছানা থেকে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যান।

অন্যদিকে, এসব ঘটনায় নামের বিড়ম্বনায় পড়েছেন মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। কেউ কেউ মনে করছেন, কার্লোসকে ঘিরে যে নাম উচ্চারিত হচ্ছে তা হয়তো এই পিয়া্র। ফলে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন আর বিড়ম্বনায় পড়ছেন সেই পিয়া।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া বলেন, প্রবাদ আছে ‘নামে নামে যমে টানে’। এখন তাই মনে হচ্ছে আমার ক্ষেত্রে। ডাক নাম পিয়া হওয়ার কারণে অনেকেই আমাকে ফোন করছেন। জানতে চাচ্ছেন বিষয়টি নিয়ে। সবাইকে একই কৈফিয়ত দিতে দিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছি। আরে ভাই! আমি হলাম জান্নাতুল পিয়া। আর কার্লোসকে ঘিরে যে নাম আসছে তা হলো- পিয়া বিপাশা ও মডেল পিয়াসা।

তিনি আরও বলেন, সম্পতি রেইনট্রি হোটেলে যে ঘটনা ঘটেছিল সে সময়ও আমাকে একই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই সবাইকে অনুরোধ করছি শুধু পিয়া নাম দেখে কেউ যেন বিভ্রান্ত হয়ে আমাকে বিড়ম্বনায় না ফেলেন।

তথ্যসূত্র : যুগান্তর।