আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার :

প্রায় সপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজার জেলাব্যাপী প্রবল বন্যা ও নদীভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। সে সাথে বেড়েছে পাহাড়ধ্বসের ঝুঁকি। বন্যায় তলিয়ে গেছে জেলা সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও রামু উপজেলাসহ নিম্নাঞ্চলের দুই শতাধিক গ্রাম। কক্সবাজার টেকনাফ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৪ লক্ষাধিক মানুষ। মাতামুহুরী, বাঁকখালী ও ঈদগাঁও নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ।
বদরখালীর ব্যবসায়ী আজিজ চৌধুরী জানান, চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কে উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে ও চিরিঙ্গা-কাকারা-মাঝেরফাঁড়ি সড়ক মাতামুহুরী নদীর সাথে একাকার হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন এতদ এলাকার বাসিন্দারা। এসব সড়কের উপর দিয়ে লোকজন নৌকায় চলাচল করছে।
চকরিয়ার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা জানান, মাতামুহুরী নদীর উভয়পাশে উপজেলার অন্তত ১৭টি ইউনিয়ন ডুবে গেছে। এতে অন্তত দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বাঁকখালী নদীর উভয়পাশে রামু উপজেলার অন্তত ৭টি ইউনিয়নেও বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার অন্তত ৭টি ইউনিয়নে ব্যাপক বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঈদগাঁও নদীতে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলে রামুর ঈদগড়, সদরের ইসলামাবাদ, ঈদগাঁও, জালালাবাদ, পোকখালী ও চৌফলদন্ডী ইইনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঈদগাঁও থেকে সংবাদকর্মী রুস্তম আলী জানান, ঈদগাঁও নদীর বন্যায় ঈদগাঁও ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালা পয়েন্টে প্রায় ৫০ গজ সড়ক বিলীন হয়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।  সাংস্কৃতিক কর্মী কুতুব উদ্দীন চৌধুরী সিবিএন’কে জানান, জালালাবাদে রাবারড্যাম সংলগ্ন এলাকায় নদীভাঙ্গনের ফলে  জালালাবাদ ইউনিয়নের ২, ৭, ৮ ও ৮ নং ওয়ার্ডের ১০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ঈদগাঁও-ফরাজী পাড়া-পোকখালী সড়কের দুই পয়েন্টে ভাঙ্গনের ফলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে বুধবার সকাল ১০ টায় উক্ত ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন। সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম রহিমুল্লাহ ও সদর ইউ এন ও মোঃ নজরুল ইসলাম এসময় জেলা প্রশাসকের সাথে ছিলেন। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন পানি ব্যবস্হাপনা উন্নয়ন দল’র সভাপতি হান্নান মিয়া সিবিএন’কে বলেন, ঈদগাঁও নদীর ভাঙ্গনে এলাকা থেকে উৎসারিত পানির তোড়ে চৌফলদন্ডীতে তিনটি পয়েন্টে পাউবো’র বেড়িবাধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে সাতটি চিংড়িঘের প্লাবিত হয়েছে। পেকুয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলে  বন্যায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
এসব স্থানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্যাকবলিত মানুষ।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসন। পাশাপাশি বন্যা কবলিত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্ততরের ডি এম সাইফুল ইসলাম রাত নয়টায় সিবিএন’কে জানান, গত চারদিনে মোট ৫৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলেও জানান তিনি।