এস. এম. তারেক, ঈদগাঁও
৩ দিনের ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। ঈদগাঁও নদীর বেড়ি বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে বন্যার পানি ঢুকে বৃহত্তর ঈদগাঁও’র বিস্তীর্ণ এলাকা ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে ঈদগাঁও নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে ঢলের পানিতে খেলতে নেমে এক কন্যা শিশুও প্রাণ হারিয়েছে। নিহত শিশুর নাম উম্মে সালমা (৭)। সালমা ইসলামাবাদ ইউনিয়নের উত্তর ইউসুফেরখীল গ্রামের আব্বাছ মিস্ত্রীর কন্যা। ৪ জুলাই সকাল সাড়ে ৯ টায় এ দূর্ঘনাটি ঘটে। ওয়ার্ড মেম্বার দিদারুল আলম এবং ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মোঃ খায়রুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ঈদগাঁও নদী দিয়ে তীব্রবেগে প্রবাহমান ¯্রােতের তোড়ে ভেঙ্গে গেছে ঈদগাঁও ফরাজীপাড়া পোকখালী সড়ক। গতকাল ৪ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে ঈদগাঁও’র সাথে ফরাজীপাড়া ও পোকখালীর সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণরুপে বন্ধ রয়েছে। সড়কের পূর্ব লরাবাকের হাফেজখানা পয়েন্ট এবং সংঘের নালী পয়েন্টে এ ভাঙ্গন দেখা দেয়। হাফেজখানা পয়েন্টটি প্রায় ১৫০ ফিটের মত ভেঙ্গে গেছে। পানির চাপে ভাঙ্গন এলাকা ক্রমশঃ বড় হচ্ছে।

৩ দিন ধরে ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হওয়ায় ৩ জুলাই দুপুরে ঈদগাঁও নদীর (জালালাবাদ অংশে) রাবার ড্যাম সংলগ্ন এলাকায় বেড়িবাধের বিরাট একটি অংশ ( মনজুর মেম্বারের ঘাটা পয়েন্ট) ভেঙ্গে গেলে ভাঙ্গা অংশ দিয়ে প্রবল স্রোতে বন্যার পানি অনুপ্রবেশ করে। পানির তোড়ে সে থেকে অদ্যবধি একের পর এক ডুবে যাচ্ছে জালালাবাদ ইউনিয়নের প্রায়সব গ্রাম। বর্তমানে ওই ইউনিয়নের দঃ লরাবাক, পূর্ব লরাবাক, মোহনভিলা, পালাকাটা, মাছুয়াপাড়া, তেলীপাড়া ছাতিপাড়া, বাহারছড়া ও ফরাজীপাড়া গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উনুন জ্বালাতে না পেরে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া বসতঘরের লোকজন বর্তমানে তীব্র খাদ্য ও পানীয় জলের সংকটে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা ইমরুল হাসান রাশেদ এবং প্যানেল চেয়ারম্যান আরমান উদ্দিন।

গতকাল ৪ জুলাই দুপুরে কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অবঃ) লেঃ কর্ণেল ফোরকান আহমদ, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহ, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী জালালাবাদ ইউনিয়নের ভাঙ্গন এলাকাগুলো পরিদর্শণ করেন। সদর উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাজীবুল হক চৌধুরী রিকো এসময় তাদের সাথে ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদের নেতৃত্বে ওয়ার্ড মেম্বার আরমান উদ্দিন, সাইফুল হক, মোক্তার আহমদ, ওসমান সরওয়ার ডিপো, সেলিম উল্লাহ এবং মোঃ মোফাচ্ছেল প্রতিনিধিদলকে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেন। জালালাবাদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৪/৫হাজার মানুষ গত দু’দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে খাদ্য ও পানীয় জলের প্রয়োজন। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের পরামর্শক্রমে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে বলেও তিনি জানান। অবশ্য গতকাল সকাল থেকে দিনব্যাপী তিনি ওয়ার্ড মেম্বার ও এলাকার বিশিষ্টজনদের সাথে নিয়ে পুরো ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাম ও বাজার এলাকা পরিদর্শণ করেন এবং দুর্গত লোকজনদের খোঁজখবর নেন।

বৃষ্টি এবং ঢলের পানির কারনে বাজারের বিভিন্ন অলিগলিগুলো কোমর সমান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। বন্যার পানি অনুপ্রবেশ করায় গতকাল বন্ধ ছিল বাজারের অধিকাংশ দোকান-পাট। এছাড়া পানির নিচে তলিয়ে গেছে ঈদগাঁও ভূমি অফিস, ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ঈদগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জালালাবাদ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ অনেক প্রতিষ্টান।

বন্যার পানিতে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভোমরিয়াঘোনা, কালিরছড়া, ভাদিতলাসহ বহু গ্রাম। চৌফলদন্ডী আ’লীগের সাবেক সভাপতি হাবিব উল্লাহ জানান, ওই ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া, নতুন মহাল, কালু ফকিরপাড়া, উত্তর পাড়া, সিকদার পাড়া এবং মাইজপাড়ায় সাগরের জোয়ারের পানি, বৃষ্টির পানি এবং ঈদগাঁও’র রাবার ড্যামের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে অনুপ্রবেশ করা ঢলের পানিতে গ্রামগুলো কমবেশী প্লাবিত হয়েছে। পোকখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানান, ওই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম বন্যা, জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। আগে থেকে ক্ষতিগ্রস্থ গোমাতলী গ্রামের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে বলেও তিনি জানান। ভেঙ্গে পড়েছে ওই ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। অপর দু’উপকুলীয় ইউনিয়ন ভারুয়াখালী ও ইসলামপুরের নি¤œাঞ্চলও বন্যা, বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানির ৩/৪ ফুট নিচে তলিয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

ইসলামাদ ইউনিয়নেও বন্যার পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে বসতঘর এবং রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক। এরিপোর্ট লিখা পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে কোনপ্রকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়নি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্থদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং শ্রীঘ্রই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আলী হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে , সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং আজ (৫ জুলাই বুধবার) তিনি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকগুলো পরিদর্শনে আসবেন বলে জানান।

এদিকে ঈদগাঁও বাজার ফরাজীপাড়া সড়কের পূর্ব লরাবাগের হাফেজখানা পয়েন্ট ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলে চরম বিঘেরœ সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এবং স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সংবাদকর্মী নাছির উদ্দিন জানান, পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে পালাকাটা এলাকায় অনেকের বসত বাড়ি ও সীমানা প্রাচীরের দেয়াল এবং ভেসে গেছে বহু হাঁস-মুরগীসহ গৃহস্থালী সামগ্রী। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার লোকজন সরকারের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর দাবী জানিয়েছে। জালালাবাদের ২নং ওয়ার্ড আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনসহ ওই এলাকার বিশিষ্টজনেরা অতিদ্রুত বেড়িবাধের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ এবং ঈদগাঁও টু ফরাজীপাড়া সড়কের ভাঙ্গা অংশগুলো দ্রুততম সময়ে মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।