খুন,ঘুম,অপহরণ আতংকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা

শফিক আজাদ,উখিয়া :

একের এক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে চরম আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি সহ দিন দিন অশান্ত হয়ে উঠছে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তি। গত ১মাসের ব্যবধানে ২জন রোহিঙ্গা নেতা সহ ৩জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ পূর্বক খুন করেছে আল ইয়াকিন নামের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। বর্তমানে রোহিঙ্গা বস্তিতে খুন,ঘুম,অপহরণসহ নানান অপরাধ দেখা দেওয়া বস্তিসহ আশ পাশের্^ অবস্থিত স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। স্থানীয় এলাকাবাসি সহ রোহিঙ্গাদের দাবী দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার পূর্বক আইনের কাছে সোপর্দ করা না হলে ক্যাম্প এলাকা ও তৎসংলগ্ন কুতুপালং তথা উখিয়াবাসি হুমকির মূখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, গত ১৩ জুন রাতে আল ইয়াকিনের ২০/২৫ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের হানা দিয়ে ই-১ ব্লক নেতা মোঃ আয়ুব মাঝি ও কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের শরণার্থী আলী আহমদের ছেলে মোঃ সেলিম (২৬) কে তাদের ঘর লুটপাট করে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তৎমধ্যে গত ১৮ জুন দুপুরে বালুখালী তেলীপাড়া খাল থেকে ভাসমান হাত পা বাঁধা ও গলা কাটা অবস্থায় মোঃ সেলিম এর এবং গত রোববার রাত ৮টার দিকে অপহৃত রোহিঙ্গা মোঃ আয়ুব মাঝি একই অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ। একই ভাবে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গত ২৩ মে কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের মালয়েশিয়া ফেরত মৃত ইমাম হোসেনের ছেলে মোঃ শফি প্রকাশ বলি (২৬) কে রাতের অন্ধকারে শিবির থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের ৩ দিনের মাথায় ২৫ মে সকালে পার্শ্ববর্তী মধুরছড়া জঙ্গল থেকে রোহিঙ্গা মোঃ শফির প্রকাশ বলির লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ। ১মাসের ব্যবধানে ৩টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড নিয়ে ক্যাম্প এলাকা সহ পুরো উখিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি দেখা দিয়ে চরম নানান শঙ্কা ও আতংক। এতে করে স্থানীয়রা রয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। কারণ হত্যাকান্ডে জড়িতদের এখনো পর্যন্ত আইনশৃংখলা বাহিনী আইনের আওতায় আনতে পারেনি।

কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুর সহ রোহিঙ্গা জানান, অপহরণকারী ও খুনীদের মধ্যে কুতুপালং শিবির ও বালুখালী বস্তির রোহিঙ্গা কলিম উল্লাহ, ছলিম উল্লাহ, ইসমাইল কুতুপালং বস্তির সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা মোঃ জাবের (৩২), মোঃ নুর (২৮), মনির আহামদ (২৮), খুইল্যা মিয়া মুন্না (৩২), সলিম (২৬), কলিমুল্লাহ (২৮) ও বালুখালীর নতুন রোহিঙ্গা বস্তির মোঃ কালু (৩৫) ও মো ইসলাম (৩৩) এর নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের সশস্ত্র একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে অপরণ পূর্বক চাঁদা দাবী, খুন, ঘুমসহ বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীরা সম্প্রতি ৩টি হত্যাকান্ড ঘঠিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বস্তিতে। আবু ছিদ্দিক আরো জানান, ঈদের পরের দিন কোন কারণ ছাড়া উক্ত সন্ত্রাসীরা আমাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে। আমার শোর চিৎকারে অন্যান্য রোহিঙ্গারা এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। আমি কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে বস্তিতে ফিরেছি। একের পর এক অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটায় আমরা যারা সরকারের আইন কানুন মেনে এখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করি, তাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। কারণ, অপহরণকারী ও খুনীরা মিয়ানমারের কথাকথিত আল ইয়াকিনের পক্ষ হয়ে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে। তারা মূলত এসবের মূল নায়ক। রোহিঙ্গা মাঝিদের অনেকে নিরাপত্তা ও জানের ভয়ে রাতের বেলায় অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে রাত কাটাচ্ছে। তিনি সহ অনেক রোহিঙ্গা দাবী করে জানান, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ না পাওয়া গেলে রোহিঙ্গারা বার্মা ও বাংলাদেশে সমানভাবে নির্যাতন, অপহরণ ও খুনের শিকার হলে তাদের আর কোন উপায় থাকবে না বলে তিনি জানান।

রাজাপালং ৯নং ওয়ার্ডের এমইউপি সদস্যরা বখতিয়ার আহমদ বলেন, কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গা শিবিরে কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। ওখানে দেশী, বিদেশী অনেক অখ্যাত, বিতর্কিত লোক, অবাধ বিচরণ করে থাকে। ফলে সেখানে নানা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী/গ্রুপের তৎপরতা বৃদ্ধি পায় । তিনি বলেন, আমাকেও বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে উক্ত সন্ত্রাসীরা। আমি এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী লিপিবদ্ধ করেছি। দ্রুত এদের গ্রেফতার করা না হলে আরো বড় ধরনের দুঘর্টনা সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।