বাংলানিউজ : মেহগনি রঙের কাঠের চেয়ারে পাঞ্জাবি-পায়জামা ও মাথায় টুপি পরে বসে আছেন সত্তর বছরেরও বেশি এক প্রবীণ রাজনীতিবিদ। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে এসে যে বসা শুরু করলেন, উঠলেন মাগরিবের নামাজের আগে। এটি শুধু ঈদের দিন বলে নয়, প্রায় প্রতিদিন এটি তার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
তিনি হলেন চট্টগ্রামের আলোচিত ও সমালোচিত আওয়ামী লীগনেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। দলবেঁধে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীরা ঢুকছেন আর সালাম দিচ্ছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতে ঈদের সেলামি এক’শ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন, পাশের চারতলায় গিয়ে খেয়ে নাও। পায়ে ধরে কেউ সালাম করতে গেলেই স্বভাবজাত ধমক দিয়ে বললেন, মুখে সালাম দিও, পায়ে ধরে নয়। কখনো আবার কাউকে সমানে আদর করে গালিও দিচ্ছেন। এটি উপভোগও করছেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
টানা সাড়ে তিন’শ জনকে এভাবে ঈদ বখশিস দেওয়ার পরে সবুজ পাঞ্জাবি পরে ওয়াকিটকি হাতে ঢুকলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। একজন ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম, আরেকজন পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ। এসময় অন্য সবাইকে বের করে দিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওসি সেলিমের পাশে বসা ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদের পাশে ছিলাম আমি। তিনি কানে কানে বললেন, চার মহিউদ্দিন এক সাথে! এটি একটি কাকতালীয় ঘটনা যে, দুই চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা ও টানা ১৬ বছরের মেয়র এবং যুবলীগের আহ্বায়ক চারজনের নাম মহিউদ্দিন। চারজন একই ফ্রেমে ধরা পড়লেন এই প্রথম।
ওসি দুজন আসার আগে এসেছিলেন যুবলীগের মহিউদ্দিন। তাকে উদ্দেশ্য করে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘‘১০০ কোটি টাকা কামাইছেও। জায়গা দখল করে ও বিলবোর্ডের ব্যবসা করে।’’ আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, ‘‘বিলবোর্ডের ব্যবসার সুযোগ তো পেয়েছে আপনি মেয়র থাকাকালীন।’’ মহিউদ্দিন মুচকি হেসে উড়িয়ে দিলেন।
নগরীর ষোলশহরের চশমাহিলের বাসভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এসে ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ পায়ে ধরে সালাম করেন সাবেক মেয়রকে। এরপর ওসি মহিউদ্দিন সেলিম সাবেক মেয়রের ডান হাত নিজের মাথায় তুলে দিয়ে বললেন, ‘‘আমাকে দোয়া করে দেন।’’
হাস্যরসে নানা কথা চলছিল ওই আড্ডায়। তিন গরু দিয়ে নেতাকর্মী ও নগরবাসীকে আপ্যায়ন করার কথাও বললেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। মঙ্গলবারও (২৭ জুন) এই ভোজ উৎসব। এর মধ্যে এলেন মহিউদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। নিজের ছেলে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বললেন, ‘‘সে টাকা-পয়সা খরচের ব্যাপারে একটু সতর্ক ও সচেতন। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পরে নওফেলের খরচ করার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। আর ছোট ছেলে সালেহীন খরচের ব্যাপারে বেশ উদার।’’
এক পর্যায়ে ওসি মহিউদ্দিন সেলিম তার সহকর্মী মহিউদ্দিন মাহমুদকে দেখিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বললেন, ‘‘স্যার, ওর টাকা লাগবে। ওকে ১০০টা টাকা দেন।’’ মহিউদ্দিন চৌধুরী হেসে জবাব দিলেন, ‘‘ওর কি ১০০-তে হবে? কোটি দরকার।’’ হাসির রোল পড়লো। পাঞ্জাবির ডান পকেট থেকে ১০০ টাকার নোট বের করে প্রথমে দিলেন ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদকে। তারপর দিলেন ওসি সেলিমকে।
এর আগে এক ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ জন নেতাকর্মীকে এভাবে টাকা দিয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এসময় সেলফি তুলতে চেয়েছেন কেউ কেউ। তাদের অনেককে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছেন।