সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও:
কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীতে জোয়ারের পানিতে ভাসছে মানুষ। এতে তাদের ঈদ আনন্দ মাটি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় মোরা পরবর্তী দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না ক্ষতিগ্রস্থ গোমাতলীবাসীর। গ্রামীণ জনপথের মানুষের দুর্ভোগ ব্যাপক আকার ধারন করেছে। দুটি ভাঙন দিয়েই জোয়ারের পানি ঢুকে পুরো গোমাতলীর ৮ গ্রাম পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। গ্রামীণ রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে-চুরে ক্ষত বিক্ষত হয়ে পড়েছে। মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত গোমাতলীর ২ হাজার পরিবার কোনরূপ সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা ছাড়াই ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা চালাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের মাঝে সরকারের সহযোগীতার আশ্বাসের ফুলঝুড়িতে নিরব ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা গেছে।

ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে তার ইউনিয়নের ৭নং ওর্য়াডের বিশাল এলাকা ৩/৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নের গোমাতলীর এ ব্লক, ডি ব্লক, ও সি ব্লক ঘোনা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে বাড়ি ঘর গাছপালা। পানি বন্দী রয়েছে ১-২ হাজার মানুষ।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ইউনিয়নের গোমাতলীতে ১শ মিটার ভাঙ্গনকৃত বেড়ীবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় জোয়ার ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে গোমাতলীর শত শত পরিবার। যার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছে। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় রয়েছে অভিভাবক মহল। গত বছর ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে এলাকার ৬ নং ¯ুইস গেইটের বেড়ীবাঁধটি ভেঙ্গে যায়। সংস্কার না হওয়ায় পূর্ণিমার জোয়ারে লবণ মাঠ, চিংড়ি ঘের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চলাচল রাস্তা তলিয়ে যায় প্রতিনিয়ত। শিক্ষার্থীরা যেতে পারে না স্কুল মাদ্রাসায়। ভেসে গিয়েছিল প্রায় দুই হাজার একর মাঠের লবণ। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল প্রায় কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ ¯ুইস গেইট দিয়ে জোয়ারের পানি নিয়মিত প্রবেশ করার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকার ডি ব্লক, এ ব্লক, সি ব্লক ঘোনায় চলছে জোয়ার ভাটা। লবণাক্ত পানি ঢুকে মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল, বীজতলা, চিংড়িঘের, লবণ মাঠ, মাছ ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। শীঘ্রই অরক্ষিত এ বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জোর দাবী জানান স্থানীয়রা।

সরেজমিন দেখা যায়, ইউনিয়নের গোমাতলী এলাকার ৬ নং স্লুইস গেইট এলাকা ভাঙ্গনের কারনে ওই পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে । এতে করে এলাকার বিপুল সংখ্যক চিংড়ি চাষী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে জানান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

রাজঘাট এলাকার ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন জানান, রোয়ানুর তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বেঁড়িবাধটি দীর্ঘদিন মেরামত না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে জোয়ার ভাটায় চলছে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম।

গোমাতলী সমবায় কৃষি ও মোহাজের উপনিবেশ সমিতির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরুল আজিম জানান, জোয়ারের পানির কারনে ওই এলাকার উত্তর গোমাতলী, আজিমপাড়া, কাটাখালী ও রাজঘাট এলাকার কয়েক হাজার মানুষের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছেনা।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, জোয়ারের পানিতে গোমাতলীর প্রায় সর্বত্র গ্রামীণ যাতায়াত ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে বাড়ি ঘর, গাছপালা। পানি বন্দী রয়েছে ১-২ হাজার মানুষ। জোয়ারের পানির তোড়ে এসব গ্রামীণ সড়কসহ আরো অনেক সড়কের এইচবিবি বা বিছানো ইটের অনেকাংশ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে উঠে গিয়ে পাশ্ববর্তী খাদে পড়ে রয়েছে। গত ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের তৈরীকৃত তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ীর প্রায় ১ হাজার পরিবার কোন ধরনের উল্লেখযোগ্য সাহায্য সহযোগীতা পায়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানিয়েছেন,জোয়ারের পানির কারণে সব শ্রেনিপেশার মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে আগের চেয়ে আরো কয়েকগুন। বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির অধিকাংশ নেহায়েত অতিদরিদ্র পরিবারের একমাত্র সম্পদ কাঁচা ঘর। যেগুলো মেরামত বা জরুরী সংস্কারের সামথ্য অনেকের নেই।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, গোমাতলীর পাউবো ভাঙ্গন এলাকা সংস্কার করার জন্য বাজেট প্রনয়ন করেছেন। দ্রুত ভাঙ্গন এলাকায় কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।