পরিবর্তন:

কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরীর ৬ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল, মেজ ছেলে কক্সবাজার সদর রামু আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও ছোট মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরি।

কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাদের সুদৃঢ় অবস্থান। তারা আপন ভাই-বোন হলেও ক্ষমতার লড়াইয়ে তিনজনের অবস্থান তিন মেরুতে। গত দুটি সংসদ নির্বাচনে এই পরিবার থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে আপন ৩ ভাই-বোন মনোনয়ন চেয়েছিলো। দুবারই নৌকার প্রতীক পেয়েছেন সাইমুম সরওয়ার কমল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরিবারের রাজনীতিতে সক্রিয় ভাইবোনের বিরোধিতায় তিনি সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন। ১০ম সংসদ নির্বাচনে পরিবারের সদস্যদের বিরোধিতা স্বত্বেও নৌকার মনোনয়ন নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাইমুম সরওয়ার কমল।

কক্সবাজারে সদর রামু আসনে ১১ জন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। এরমধ্যে রয়েছেন ওসমান পরিবারের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও বোন নাজনীন সরওয়ার কাবেরি। মনোনয়ন দৌঁড়ে টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তারা। যেখানেই যাচ্ছেন সুযোগ পেলে একে অপরের সমালোচনা করছেন। কেউ একজন কোনো কর্মসূচি দিলে অপরজন পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছেন।

ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারটির দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ মানুষ মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারলেও তারা যে অতিষ্ঠ তা বোঝা যায়। সকলেই এই পরিবারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অবসান চান।

দ্বন্দ্ব, সমালোচনা ও আলোচনা যাই হোক ওসমান পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে স্পষ্টভাবেই এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। পরিবারের সদস্যদের বিরোধিতা স্বত্বেও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন দুইবার। আগামী সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন জরিপেও পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে সাইমুম সরওয়ার কমল।

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি রামু ও কক্সবাজার সদরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছেন। এছাড়া সাধারণ মানু্ষের সাথে সহজেই মিশে যাওয়ার গুণের কারণে মাঠ পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা বেশি।

তবে বড় ভাই রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলের কারণে রামু উপজেলার আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ এমপি কমলের হাতে নেই। আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে নিয়ন্ত্রণ করে সাইমুম সরওয়ার কমল নিজের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন।

কমলের সর্বকনিষ্ঠ বোন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরি।

কাবেরির শ্বশুর কামাল হোসেন চৌধুরী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কাবেরিও মনোনয়ন পাওয়ার আশায় প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন। বৃষ্টিতে কাদামাটি পেরিয়ে দুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কাবেরি। যেখানে একজন পুরুষের যেতে অনেক কষ্ট হয়, সেই দুর্গত এলাকায় কাবেরির উপস্থিতি দেখে অনেকে চমকে যাচ্ছেন। কাবেরির প্রতি নারী ভোটারদের আগ্রহও বাড়ছে। তার শক্তি যোগাচ্ছেন তার বড় ভাই রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজলও।

সোহেল সরওয়ার কাজল বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের দৌঁড়ে ছোট ভাইয়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ছোট ভাই কমলের বিরোধিতার কারণে তিনি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। তাই এইবার কৌশলে তিনি বোন কাবেরির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে নাজনীন সরওয়ার কাবেরি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমি স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করে আজকের অবস্থানে এসেছি। আমিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবো। পরিবারের একজন স্বেচ্ছাচারিতা করে আমাদের রাজনীতি বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছেন। আমিও ওসমান সরওয়ারের মেয়ে। আমি নিজ যোগ্যতায় মনোনয়ন চাচ্ছি। নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে আমি কক্সবাজার-রামুর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছি। যেখানেই যাচ্ছি সবখানেই বিপুল সাড়া পাচ্ছি।’

দল মনোনয়ন দিলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন কাবেরি।

ওসমান পরিবারের মেজ ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বড়ভাই কাজল আর ছোটবোন কাবেরি বিরোধিতা করলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা তার সাথেই আছেন। তিনি অভিযোগ করেন পারিবারিক কিছু ইস্যুকে পুঁজি করে কাজল ও কাবেরি তার বিরোধিতা করছেন।

এমপি কমল আরো জানান, ভাই কাজল ও বোন কাবেরি বিরোধিতা করলেও ভোটের রাজনীতিতে তার কোনো প্রভাব পড়বেনা। যার প্রমাণ বিগত ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাচন।

কাজল ও কাবেরির বিরোধিতার পরও তার সব প্রার্থী ওই নির্বাচনগুলোতে জয় লাভ করে বলে জানান এমপি কমল।

ওসমান পরিবারের বাইরেও কক্সবাজার সদর-রামু আসনে আরো দুইজন শক্তিশালী প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। এরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কানিজ ফাতেমা মোস্তাক।