জাগো নিউজ:

বাংলাদেশে অবৈধ রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ৪৩ হাজার। আর জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র শরণার্থী শিবিরে রয়েছে ৩৩ হাজার ২০৭ জন রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে আসা বৈধ ও অবৈধ রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০৭ জন।

ইউএনএইচসিআর প্রকাশিত বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০১৬ এ এমন তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি। গত সোমবার বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে ২০১৬ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউএনএইচসিআর। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে আসা বৈধ ও অবৈধ রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০৭ জন। এর মধ্যে ইউএনএইচসিআর’র শরণার্থী শিবিরে রয়েছে ৩৩ হাজার ২০৭ জন রোহিঙ্গা। আর শরণার্থী অবস্থায় রয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার জন। যাদের সবাই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে। এর বাইরে ১ জন বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০৮ জন। তবে বাংলাদেশ সরকার এ সংখ্যা ৩ লাখ থেকে ৫ লাখের ভিতর বলে দাবি করছে। এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির জাগো নিউজকে বলেন, ইউএনএইচসিআর’র শরণার্থী শিবিরে যে মানুষগুলো নিবন্ধিত রয়েছে তার বাইরে যে সংখ্যা রয়েছে তাদের সবাইকে আমরা অনুপ্রবেশকারী ও অবৈধ বলব। সে হিসেবে ২ লাখ ৪৩ হাজার রোহিঙ্গা অবৈধ।

১৯৭৮ সাল থেকে প্রথম বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আসে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে তারা এসেছে। অনেককে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে তাদের সরকার। আর গত এক দশকে আরো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে অবৈধ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আইওএম, আইসিআইসি ও ইউএনএইচসিআরকে একাধিক বার বলা হয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে যতটুকু সম্ভব তা বাংলাদেশ করেছে। বিষয়টি এখন জাতিসংঘকে সমাধান করতে হবে।

২০১৬ সালের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৩০০। যে শরণার্থীর সংখ্যা ২০১৫ সালে ছিল ৪ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ জন। বাংলাদেশের বাইরে থাইল্যান্ডে ১ লাখ ২ হাজার ৬০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। মালয়েশিয়ায় রয়েছে ৮৭ হাজার এবং ভারতে রয়েছে ১৫ হাজার ৬০০।

এতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ এবংনিপীড়নের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জোরপূর্বকভাবে আরো মানুষ বাস্তুহারা হচ্ছে। আগের থেকে এ সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর ৬ কোটি ৫৬ লাখ মানুষকে জোরপূর্বকভাবে বাস্তুহারা করা হয়েছে।

এদিকে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বর্তমান সংখ্যা ৪ লাখ ৩ হাজারের কিছু বেশি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচআইসি’র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন দ্য প্রটেকশন অব দ্য রাইটস অব অল মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স অ্যান্ড মেম্বারস অব দেয়ার ফ্যামিলিস (আইসিআরএমডাবলু) এর শুনানিতে এ তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ।

আর মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বলছে, বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থী বা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজার ৯৪৮ জন। ২০১৫ সালের সর্বশেষ হিসেব থেকে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন কেন্দ্রীয় এ গোয়েন্দা সংস্থাটি। ২০১৩ থেকে মিয়ানমার এবং এ অঞ্চলে রোহিঙ্গাসহ অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি, শরণার্থী ও আশ্রয় প্রার্থীদের সহায়তা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৩ অর্থবছর থেকে মিয়ানমার ও এই অঞ্চলের রোহিঙ্গাসহ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি, শরণার্থী ও আশ্রয় প্রার্থীদের মানবিক সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের বেশি প্রদান করেছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে কি পরিমাণ এবং কোন কোন স্থানে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব বের করতে ২০১৫ সালে প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। মূলত অবৈধভাবে আসা অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিকদের শুমারির জন্য প্রকল্প নিয়েছে সরকার। ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক শুমারি ২০১৫’শীর্ষক প্রায় ২২ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০১৬ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এটি শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত।

তবে এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের নেয়া জাতীয় কৌশলপত্র বা ন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক পেপারের হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রোহিঙ্গা শুমারির প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নমুনা জরিপ করা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, যে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে তা থেকে সঠিক উত্তর আসছে কিনা। সে নমুনা জপিরের উপর ভিত্তি করে পূর্ণাঙ্গ শুমারি শুরু করা হয়েছে।

আর বাংলাদেশের নেয়া জাতীয় কৌশলপত্রের নমুনা জরিপ অনুযায়ী, শ্যামলাপুরে অনিবন্ধিত শরণা্র্থী শিবিরে শরণার্থী পরিবারের সংখ্য রয়েছে ৬৫০টি। আর সেখানে রয়েছে সাড়ে ৩ হাজার অনিবন্ধিত শরণার্থী। এছাড়া কক্সবাজার এবং বান্দরবন জেলায় অনিবন্ধিত মোট রোহিঙ্গা পরিবারের সংখ্যা ৫২ হাজার ৪৩৫টি। এ দুটি জেলায় মোট রোহিঙ্গা রয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭জন।