মহসীন শেখ

সুবহানাল্লাহ, মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে পবিত্র উমরাহ্ হজ্জ পালনের সুবাধে দেখেছি ইসলামের ঐতিহাসিক নিদর্শন জাবালে নূর অর্থাৎ আলোর পাহাড়। ইসলামের আরো একটি নিদর্শন হেরাগুহা যেটির অবস্থানও জাবালে নূর-এ। যে হেরাগুহায় আল্লাহ্র ইবাদতে মশগুল থাকতেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। এই গুহায় নবীজি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। এছাড়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরিফও এ গুহাতেই নাজিল হয়। পাহাড়টি সমতল থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ফুট উঁচু পবিত্র পাহাড়টি ঘিরে প্রায় প্রতিদিনই হাজী ছাড়াও আরবে বসারত মানুষের সমাগম থাকতে দেখা যায়। গত ২মে জবলে রহমত এবং আরফাতের ময়দানে যাওয়ার পথে আমি আর আরবের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছোট ভাই রেজাউল করিম কাজল জবলে নূর হয়েই ঘুরে যাই।

তথ্যমতে, ইসলামের ঐতিহাসিক এবং অনন্য নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম জাবালে নূর। আরবিতে জাবাল অর্থ হচ্ছে পাহাড় এবং নূর অর্থ আলো। এতে জাবালে নূর মানে আলোর পাহাড়। এছাড়া ইসলামের আরো একটি নিদর্শন হেরাগুহা যেটির অবস্থানও জাবালে নূর-এ। যে হেরাগুহায় আল্লহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। এই গুহায় নবীজি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। এছাড়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোরআন শরিফও এ গুহাতেই নাজিল হয়। মক্কা শরীফের পূর্ব প্রান্তে কাবা শরিফ থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে জাবালে নূরের অবস্থান। পাহাড়টি সমতল থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ফুট উপরে। কেউ হেঁটে আবার কেউ গাড়ি নিয়ে ওঠেন পাহাড়ে। নিচ থেকে উপরের দিকে তাকালে পাহাড়ের চূড়াটা কাছে মনে হয়। পাথর কেটে কেটে পাহাড়ের সিঁড়ি বানানো হয়েছে। কোথাও কোথাও পাইপ বা রডের রেলিং দেয়া আছে। যখন নবীজি হেরাগুহায় অবস্থান করতেন তখন তিনি এ পথ বেয়েই উপরে উঠতেন। এছাড়া বিবি খাদিজা (রা.) নবীজির জন্য প্রতিদিন খাবার নিয়ে যেতেন এই পাহাড়ের হেরাগুহায়। হযরত ইবনে ইসহাক (রহ.) এর রিওয়ায়াতে জানা যায়, প্রত্যেক বছরই রাসূলুল্লাহ (সা.) এক মাস হেরা গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন। মাসটি অতিক্রান্ত হলে তিনি নির্জনবাস পরিত্যাগ করে বাড়িতে ফেরার আগে প্রথমে সাতবার বা আল্লাহ্ যতবার চাইতেন ততবার কাবা শরিফ তাওয়াফ করতেন। এরপর তিনি নিজের বাড়ি ফিরে যেতেন। অবশেষে গারে হেরা অবস্থানের শেষ বছরের রমজান মাসে আল্লাহ তাকে নবুয়তের দ্বারা সম্মানিত করেন। এর আগের বছরগুলোর মতো এই সর্বশেষ বছরেও তিনি হেরার নির্জনবাসে বেরিয়ে পড়েন সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রা.)। যিনি তাঁর গুহার নিকটবর্তী কোথাও অবস্থান করতেন বা বাড়ি ফিরে আসতেন। বছরের পর বছর ধ্যান করার পর মহানবী হযরতের চল্লিশ বছর বয়সে রমজান মাসের পবিত্র শবে কদরের রাতে হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠল অন্ধকারাচ্ছন্ন হেরা গুহা। এ রাতে আল্লাহর ফেরেশতা হযরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহর মহান বাণী ওহি নিয়ে এলেন মহানবীর কাছে। এসময় তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে লক্ষ্য করে বললেন, পড়–ন, ইকরা। জিবরাইল (আ.) সুরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত পাঠ করে শোনান। মুলত এটা ছিল হযরত মুহাম্মদ (স.) নবুয়ত লাভের সময়। নবুয়ত লাভের পর হযরত মুহাম্মদ (স.) উম্মতদের শিক্ষা দিলেন আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ কিংবা মাবুদ নেই। ইবাদত করতে হবে একমাত্র তাঁরই জন্য। তিনি এক অদ্বিতীয় এবং তাঁর কোনো শরীক নেই। হযরত (স.) আমাদের আরো শিক্ষা দিলেন, আসমান-জমিন চন্দ্র, সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র সব কিছুর মালিক মহান আল্লাহ। তিনি এ সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকারী এবং রিজিকদাতা। তিনি আমাদের জীবন মৃত্যুর মালিক। অতএব দাসত্ব করতে হবে তাঁরই, আনুগত্য তাঁরই এবং এবাদত করতে হবে তাঁরই নামে। মহানবী শিক্ষা দিলেন তোমরা ফিরে এসো সত্যের পথে, ন্যায় ও কল্যাণের পথে। চুরি-ডাকাতি, খুন রাহাজানি, ব্যাভিচার জুয়া, প্রতারণা, মিথ্যা বলা মহাপাপ। তোমরা এসব থেকে বিরত থাকো। কখনো কোনো অবস্থায় কারো প্রতি অবিচার করো না। অন্যায়ভাবে কারো স¤পদ খেয়ানত করো না। জুলুম করো না কারো উপর। আসুন আমরা সকলেই নিজের ঈমানকে শক্ত করি। আমীন।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সকালের কক্সবাজার। মোবাইল:- ০১৬১৯০৭০৫১৩