আতিকুর রহমান মানিক
আর কয়েকদিন পরেই ঈদ-উল-ফিতর, মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ঈদের সাথে কেনাকাটার ব্যপারটাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ সুযোগে কক্সবাজার শহরসহ জেলার হাটবাজারে চলতি ঈদ কেনা-কাটায় “ফিক্সড প্রাইস” লেখা একদামের দোকান গুলোতে রকমারী প্রতারণা। ফিক্সড প্রাইজের আড়ালে “মিক্সড আইটেম” কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। নারী-পুরুষ-শিশুদের তৈরী পোশাক, জুতা-সেন্ডেল, টুপী, প্রসাধনী, পারফিউম ও শাড়ী-চুড়িসহ ইদ কেনাকাটার আনুসাঙ্গিক সব পণ্য বিক্রিতে এ “ফিক্সড প্রাইস” প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। মানহীন বিভিন্ন পন্যে একদামের চড়ামূল্যের ষ্টীকার লাগিয়ে চলছে লাগামহীন প্রতারনা। সংশ্লিষ্ট দোকানগুলোতে নজরকাড়া ডেকোরেশন, থাইগ্লাস ফিটিং করা ও ক্ষেত্র বিশেষে এয়ারকন্ডিশন লাগিয়ে ক্রেতা আকৃষ্ট করে এ প্রতারনায় জাল বিস্তার করা হয়েছে। আর এতে প্রতিনিয়ত ঠকছেন ক্রেতারা। কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক, পানবাজার সড়ক, বার্মিজ মার্কেট এলাকা ও বড় বাজার রোডের বিভিন্ন মাকের্টে চলছে এ অবস্থা। পান বাজার রোডের জুতার দোকান এনেক্স গ্যালারী, বে, আর এক্স সুজ, লোটো, ও ডাটা বাজার সহ কয়েকটি দোকানে যেনতেন মানের জুতা/সেন্ডেল তুলে মনগড়া মূল্যের ষ্টীকার লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। এসব জুতার গায়ে ৭ / ৮০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ফিক্সড প্রাইসট্যাগ লাগানো হয়েছে। কিন্তু এদের বিভিন্ন আইটেম অত্যন্ত নিম্নমানের বলে জানিয়েছেন ক্রেতা জুয়েল। নামে ফিক্সড প্রাইস /একদাম সম্বলিত ষ্টীকার লাগানো থাকলেও সচেতন গ্রাহকরা জুতার মান বুঝে অনেক সময় দরদাম করে লাগানো মূল্যের অর্ধেক দামেই নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে যারা দরদাম করেন না, তারাই ঠকছেন বলে জানান অপর গ্রাহক আরমান। ক্রেতা পারভীন জানান, এরকম একটি দোকানে ১৮০০ টাকার প্রাইসট্যাগ লাগানো জুতা দরদাম করে মাত্র ৬০০ টাকায় কিনেছেন। একই অবস্থা চলছে শার্ট, টি-শার্ট ,প্যান্ট ও পাঞ্জাবীসহ তৈরী পোশাকের দোকানগুলোতে। কিছু কিছু দোকানে একদামের ষ্টীকার লাগিয়ে মানহীন পন্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রধান সড়কের ক্যাটস আই, নক্ষত্র, মেসকো, প্লাস পয়েন্ট, বাঙ্গালী বাবু, জেন্টলপার্ক, রিচম্যান লুবনান, খালেক সেন্টারের স্মার্টেক্স, মেনজ ক্লাব, স্পাইরাল, পেবলস ও আর্ট, বাজারঘাটার আই ক্যান্ডি, লোটো, শৈল্পিক ও ফ্যাশন পয়েন্টসহ বাহারী নামের নজরকাড়া ডেকোরেশন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শো-রুম গুলোও এ প্রতারনায় নেমেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। বাহারী নামের এসব দোকানে মানহীন যেনতেন কোয়ালিটির তৈরী পোশাকে উচ্চমূল্য সম্বলিত একদামের ষ্টীকার লাগিয়ে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তথাকথিত “একদাম”র এসব দোকান এভাবে মহা প্রতারনায় নেমেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। শহরের বিমানবন্দর সড়কের ক্রেতা নয়ন বলেন, কয়েকদিন আগে এরকম একদামের একটি শো-রুম থেকে দুই হাজার ছয়শ টাকায় পাঞ্জাবী কিনেছেন। কিন্তু গতকাল তার এক বন্ধু সাধারন দোকান থেকে দামাদামি করে একই মানের পাঞ্জাবী কিনেছেন মাত্র এক হাজার টাকায়। কথিত একদামের এসব দোকান ক্রেতাদের পকেট কাটছে এভাবে। বাজারঘাটা প্রধান সড়কের কোরালরীফ প্লাজা মার্কেট ও খালেক সেন্টারে এসব তথা কথিত একদামের দোকান বেশী দেখা গেছে।
অভিজাতের তকমাধারী বাটা-এপেক্স’র একাধিক শো-রুমেও দেখা গেছে উচ্চদামের ষ্টীকারে মানহীন পন্য। পানবাজার সড়কের বাটা বাজার ও গ্যালারী এপেক্স শো-রুমে তাদের নিজস্ব জুতার পাশাপাশি মেডইন চায়না মানহীন জুতার বাহার দেখা গেছে। এর মধ্যে বাটা শো-রুমে উইনবিয়ার, পাওয়ার ও সেনডাকসহ নিম্নমানের বিভিন্ন জেন্টস-লেডিজ ও কীডস আইটেম উল্লেখযোগ্য। আর এপেক্স শো-রুমেও দেখা গেছে নিনো রুসি, টুইন্কলার, রিভাইভ, ম্যানক্রুজ ও ভেনচারিনী সহ বিভিন্ন অপ্রচলিত বিদেশী ব্যান্ডের মানহীন জুতা/সেন্ডেল। যথারীতি একদামের চড়ামূল্যের ষ্টীকার লাগিয়ে এসব বিক্রি করা হচ্ছে। আর সহজ সরল ক্রেতারা এসব কিনে প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিদিন। একই অবস্হা চলছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও মফস্বল হাটবাজারে। মহেশখালীর উপজেলা সদর গোরকঘাটা, কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ বাজার, পেকুয়া চৌমূহনী, চকরিয়ার চিরিঙ্গা সোসাইটি, রামু, উখিয়া, সদরের ঈদগাঁও বাজার ও টেকনাফসহ বিভিন্ন মফঃস্বল হাটবাজারেও চলছে মানহীন পণ্যে একদামের প্রতারণা।
ভূক্তভোগীরা জানান, সারাবছর অস্তিত্ব না থাকলেও প্রতিবছর রোজার সময় সদরের ঈদগাঁও বাজারে “একদাম”র কয়েকটি দোকান হঠাৎ গজিয়ে উঠে। নিম্নমানের তৈরী পোশাকে একদামের ষ্টীকার লাগিয়ে গ্রাহক ঠকাচ্ছে এরা। কক্সবাজার শহরসহ জেলাব্যাপী একদাম তথা ফিক্সড প্রাইসে নিম্নমানের এসব মিক্সড আইটেম বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট শো-রুম/কোম্পানী গুলোর ক্যাশবক্স প্রতিদিন ভারী হলেও মানহীন পণ্যের গলাকাটা দামে খালি হচ্ছে সহজ-সরল ক্রেতাদের পকেট।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এ প্রতারনা বন্ধের দাবী জানিয়েছেন ক্রেতারা। তারা বলেন, ঈদ বাজার জমে উঠার সাথে সাথে এদের প্রতারনাও জমে উঠেছে।