সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও:
চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীতে পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে হাজারো মানুষ। এতে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ফলে এ মৌসুমে ১০টি পয়েন্টে পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বাস করছে ৪ হাজার মানুষ। এরপরও উপজেলা প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফুলছড়ি রেঞ্জ বন বিভাগ ও প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খুটাখালীতে ১০টির মতো ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও ৯টি টিলার মধ্যে ১ হাজার ঘরবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ঘরে ৪ হাজার মানুষ বসবাস করে আসছে। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সচেতন করার জন্য কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছেনা।

সরেজমিন স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় উদ্যান মেধাকচ্ছপিয়া পাহাড়ে বসবাসকারী মোহাম্মদ হোসেন জানান, টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় আছি। মৃত্যুকে সঙ্গী নিয়ে রাত কাটাচ্ছি , কোথাও থাকার জায়গা নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, পাহাড় ধসে একাধিক বার প্রাণহানির ঘটনার পরও খুটাখালীতে পাহাড়ে এখনো হাজারো ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বসতি উচ্ছেদ করা না হলে বর্ষা মৌসুমে বড় ধরণের দুঘর্টনার আশংকা রয়েছে। দুঘর্টনা এড়াতে খুটাখালীতে পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানায়, খুটাখালীতে দরিদ্র শ্রেনীর লোকজন এবং রোহিঙ্গাদের দিয়ে এলাকা ভিত্তিক সুবিধাভোগীরা বনের জমি দখলে নিতে মেতে উঠেছে। তথাকথিত ভিলেজার-পকেট ভিলেজার নামধারী বন খেকোরা বনাঞ্চলের জমি বেচাবিক্রি করে পাহাড়ে বসতি গড়ে তুলছেন। ভিলেজার এবং বন বিটের দুর্নীতি পরায়ন কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে মিশে বনের জমি যখন তখন হাত বদল করছেন। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের বেশীর ভাগই বহিরাগত বলে জানা গেছে। বর্ষা এলেই প্রতি বছর বন বিটের লোকজন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের শুধু শুধু তালিকা প্রণয়ন করে থাকে। তালিকা প্রস্তুতের পর ভেতরে ভেতরে কারণে-অকারণে পরবর্তী পদক্ষেপ তেমন চোখেই পড়েনা। বিচ্ছিন্ন ভাবে দু‘য়েকটি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়না।

অভিযোগ রয়েছে, খুটাখালী গোলডেবা, পিয়াজ্জা কাটা, সেগুন বাগিচা, বাগাইন্যা পাড়া, নয়াপাড়া, থমতলা, পানিরছড়া, এলাকায় বনের পাহাড়ে রীতিমত বহিরাগত পল্লি গড়ে তোলা হয়েছে। পাহাড়ী বসতি উচ্ছেদের উদ্যোগ না থাকায় এসব এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল দিন দিন বহিরাগতদের দখলে চলে যাচ্ছে। পাহাড়ে বসতি থাকার সুযোগে উল্লেখিত এলাকায় অপরাধীরা সেখানে আত্মগোপনে থাকার সুযোগ পাচ্ছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব পল্লীতে বহিরাগত সন্ত্রাসী অপরাধীদের আস্তানা গড়ে তোলা হয়েছে। পাহাড় দখল এবং বনে বসতি গড়ে তোলার পেছনে এলাকা ভিত্তিক কিছু রহস্যময় লোকজন জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট। লোকবল সংকটের কারণ দেখিয়ে বন বিভাগ ঐসব এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান করছেনা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ইউনিয়নের হরিখোলা, পুটবনিয়া, নয়াপাড়া, মেদা কচ্ছপিয়া, গজৃনতলী সেগুন বাগিচা, বাগাইন্যা পাড়া, নয়াপাড়া সহ ৮টি এলাকায় প্রতিযোগীতামূলক ভাবে পাহাড় কেটে যত্রতত্র অবৈধ বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। খুটাখালীতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে স্বীকার করে ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত মো: আবদুর রাজ্জাক জানান,এদেরকে অন্যত্রে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি আরো জানান,ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের তালিকা করে দ্রুত তাদের পাহাড় থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহেদুল ইসলাম জানান, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. ইউছুফ বলেন, পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।