মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম:
পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের লামা ও আলীকদমবাসীর দুঃসহ দুর্ভোগের আরেক নাম বিদ্যুৎ। বছরজুড়েই লেগে থাকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে লামা-আলীকদম সড়কে বিদ্যুৎ লাইনের পাশে রোপিত রেইনট্রি গাছ। সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়াতে নব্বইয়ের দশকে কথিত এ সড়ক বনায়ন করেছিল ব্রিটিশ আমেরিকার ট্যোবাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)। দেশীয় আবহাওয়ার জন্য উপযোগী গাছ রোপন না করে সড়কের দু’পাশে লাগানো হয় রেইনট্রি গাছ।
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোরা’র তান্ডবে অন্যান্য উপজেলার মতো লামা-আলীকদমে ঘরবাড়ি ও গাছপালা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী করুণদশার সৃষ্টি হয় এ দু’উপজেলার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে। লামা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের আওতাধীন এ দু’উপজেলার ৩৩ হাজার ও ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে অর্ধশতাধিক। শতাধিক স্থানে সড়ক বনায়নের ক্ষণভঙ্গুর রেইনট্রি গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়েছে বৈদ্যুতিক লাইনে।
বিএটিবি’র কথিত এ সড়ক বনায়নের গাছগুলি লামা-আলীকদমবাসীর জন্য বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দেয়। ঘুর্ণিঝড় মোরার আঘাতের পর আলীকদম উপজেলা সদরে টানা ১১ দিন পর বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ থাকে। তিন সপ্তাহ হতে চললেও এখনো পর্যন্ত উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি।
স্থানীয়রা সড়কের পাশে এ বনায়নকে অপরিকল্পিত হিসেবে দাবী করছেন। তাদের মতে, তামাক প্রক্রিয়া জাতকরণের কাজে তামাক কোম্পানীগুলোর তালিকাভূক্ত চাষীরা প্রতিবছর এ দু’উপজেলায় লক্ষ লক্ষ মন কাঠ পোড়ায়। বৃক্ষ নিধনের মহোৎসবকে আড়াল করতে এবং সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে বিএটিবি লামা-ফাঁসিয়াখালী, লামা-সুয়ালক ও লামা-আলীকদম সড়কের দু’পাশে অপরিকল্পিতভাবে রেইনট্রি গাছ রোপন করে। যা দ্রুত বর্ধনশীল। কয়েক বছর পরেই ডালপালা ছড়িয়ে পড়ে। সামান্য ঝড়ো বাতাসে রেইনট্রি গাছের ডালপালা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে ভেঙ্গে পড়ে। ফলে বিপর্যয় ঘটে বিদ্যুৎ সরবরাহে। প্রতিবছর সড়ক বনায়নের ডালাপালা কর্তনে বিদ্যুৎ বিভাগ লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়। এ টাকা নিয়েও নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে
আলীকদম বাজারের ব্যবসায়ী ও আ.লীগ নেতা সমর রঞ্জন বড়–য়া জানান, বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ সড়কের পাশে বিএটিবি’র অপরিকল্পিত বৃক্ষরোপন। গাছগুলো অনেক বড় হয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে প্রতিবন্ধকতা করছে। বাতাসে গাছের ডাল ভেঙ্গে বিদ্যুৎ লাইনে আচড়ে পড়ে। ফলে সবসময় লামা-আলীকদমে বিদ্যুৎ সরবরাহে নাজুক অবস্থা হয়। এসব গাছ আর্শীবাদেও চেয়ে অভিশাপ হয়েছে বেশী। তাছাড়া এ সকল গাছ আবহাওয়া উপযোগীও নয়।
ঘূর্ণিঝড় মোরা পরবর্তী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জরুরী বৈঠকেও বিদ্যুৎ লাইনের জন্য ‘ক্ষতিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিএবটিবি’র সড়ক বনায়নকে। এ গাছগুলি কেটে পামঅয়েল কিংবা অন্যকোন সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছ রোপনের পরার্মশ দেওয়া হয়েছে।
সড়কের পাশে রেইনিট্রি গাছ লাগানোর ফলে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী অলিউল ইসলাম বলেন, রেইনিট্রিগুলো সামান্য বাতাসে ভেঙ্গে পড়ে। তাই এসব অপসারণ করে তাল, গর্জনসহ শক্ত জাতের গাছ লাগানো জরুরী হয়ে পড়েছে।