মোস্তাফিজুর রহমানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে, টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে। তবে ‘কাটার মাস্টার’ নিজের জাতটা চিনিয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে সিরিজে। ওয়ানডে অভিষেকের প্রথম ম্যাচে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে আরো ক্ষুরধার হয়ে ৬ উইকেট।
সেই মোস্তাফিজ এখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। আগের বিধ্বংসী রূপ নেই। খেলেছেন নিজের ছায়া হয়ে। তার প্রমাণ আরো একবার মিলল বৃহস্পতিবার, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে। যে ভারতকে ঘরের মাঠে একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেই দলের বিপক্ষে ৬ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে থাকলেন উইকেটশূন্য!

গেল বছর বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির পরেই কাঁধের চোটে পড়েছিলেন মোস্তাফিজ, সাসেক্সে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে গিয়ে। যেতে হয়েছিল চিকিৎসকের ছুরি-কাঁচির নিচে। ফিরেছেন গেল ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। কিন্তু পুরোপুরি ফিট না হওয়ায় আর আত্মবিশ্বাসের অভাবে খেলেননি টেস্ট সিরিজে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের মাটিতে একমাত্র ঐতিহাসিক টেস্ট থেকেও নাম প্রত্যাহার করে নেন সেসব কারণেই। তবে চোট কাটিয়ে ফিরে আসার পর একটি বিষয় বেশ লক্ষ করা গেছে। ‘দ্য ফিজে’র পুরনো রূপ আর নেই!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদাহরণে বিষয়টি বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ৪ ম্যাচে নিয়েছেন মাত্র ১ উইকেট। গড় ১৮৩! ওয়ানডে ক্যারিয়ারে বোলিং ইকোনমি যেখানে পাঁচের কম, সেখানে এই টুর্নামেন্টে ওভারপ্রতি ৬.৩১ গড়ে রান দিয়েছেন তিনি। তবে হতাশার বিষয়টা মোস্তাফিজের উইকেট না পাওয়া নয়। বরং তার বোলিংয়ে পুরনো চমকটা না থাকা। দুর্দান্ত কাটার আর স্লোয়ার প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কাছে তিনি ছিলেন ‘আনপ্লেয়েবল’। তবে এখন সহজেই মোস্তাফিজকে মোকাবেলা করতে পারছেন তারা।

তবে কি টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কথাই সত্যি? তিনি কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, মোস্তাফিজ ক্যারিয়ারের শুরুতে যে হইচই ফেলেছিলেন ক্রিকেট বিশ্বে তা অস্বাভাবিক। তবে ‘দ্য ফিজে’র প্রতিভা নিয়ে তার কোনো সংশয় নেই। তাই মাশরাফি যোগ করেছিলেন, ওর বোলিং নিয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলো তো গেল দুই বছর ধরে কম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি। ওর বোলিং বোঝার চেষ্টা করেছে। তাই এখন ওকে কষ্ট করে উইকেট নেয়া শিখতে হবে।

তাছাড়া মোস্তাফিজের কাটার উপমহাদেশের বাইরে ততোটা কার্যকর নয়। ২১ বছরের বিস্ময় পেসার নিজেই তা স্বীকার করেছেন। তবে আরো উন্নতি করার চেষ্টাও করছেন বলে ভক্তদের আশ্বস্ত করেছেন কদিন আগেই। সঙ্গে কাঁধের অস্ত্রোপচারের ধকল রয়েছে। সেটা কাটিয়ে উঠতেও তো সময় লাগবে।

তবে এটা ঠিক আগের মতো সাফল্য পেতে মোস্তাফিজকে নতুন কৌশল কাজে লাগাতে হবে। নতুন কোনো বোলিং ‘মারণাস্ত্র’ খুঁজে বের করতে হবে। তবে টাইগার কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কিন্তু প্রিয় শিষ্যকে নিয়ে এতো সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন। জানিয়েছেন, মোস্তাফিজ ঠিকই ফিরে আসবে। সেই প্রার্থনা বাংলাদেশের ষোলো কোটি মোস্তাফিজ ভক্তেরও!