বিশেষ প্রতিবেদক:
‘প্রসবজনিত একটি জটিল রোগ ফিস্টুলা। মহিলাদের জন্য এই রোগটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর। সাধারণত বিলম্বিত প্রসব এবং এক নাগাড়ে ৩/৪দিন যাবৎ প্রসব বেদনা কিন্তু সন্তান ভূমিষ্ট না হবার কারণে এই ফিস্টুলা রোগ হয়। এই রোগের বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে মহিলাদের প্রসাবের রাস্তা দিয়ে অনবরত প্রস্্রাব ঝরতে থাকে। এর ফলে শরীর থেকে অনবরত দুর্গন্ধ ছড়ায়।’ এই কথাটি জানিয়েছেন কক্সবাজারের অদূরে রামু চেইন্দায় অবস্থিত হোপ হসপিটালের গাইনী ও সার্জারী চিকিৎসক চিন্ময় বিশ্বাস।

চিকিৎসক চিন্ময় বিশ্বাস আরো বলেন, ‘মহিলাদের জন্য এর চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক ও ভোগান্তির রোগ আর নেই। এই রোগের কারণে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ঘটনা অহরহ। শুধু তাই নয়; এই রোগের ফলে পুরো একটি পরিবারের শান্তিও নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে তালাকপ্রাপ্তা মহিলারা বাবার সংসারেও সে সকলের করুণার পাত্র হয়ে জীবন যাপন করে।’

জানা গেছে, দেশের জেলা হাসপাতালসহ অনেক বড় বড় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসা করা হয় না। কেননা এই রোগ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা খরচ লাগে। অথচ সম্পূর্ণ বিনা খরচে ৩০৮ জন ফিস্টুলা রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে হোপ ফাইন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত ‘হোপ হসপিটাল’। এমনকি চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া রোগীর খাবার, যাতায়াত ও ওষুধ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সার্জন দ্বারা চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

এখানেই থেমে থাকেনি মানবতার সেবায় নিরলস কাজ করে যাওয়া হোপ ফাইন্ডেশন। ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসাকে আরো বৃহদাকারে ছড়িয়ে দিতে দেশের প্রথম এবং ফিস্টুলা হাসপাতাল করছে হোপ ফাউন্ডেশন। চেইন্দার হোপ হাসপাতাল লাগোয়া এই ফিস্টুলা হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে জোরেশোরে চলছে। একই সাথে মাতৃ চিকিৎসাকে আরো বৃহৎ আকারে করতেও ফিস্টুলা ও মেটারনিটিসহ মিলিয়ে যৌথ একটি আধুনিক স্থাপত্যকৌশলে সুরম্য এই হাসপাতালটি নির্মিত হচ্ছে।


হোপ ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলা ও ৪৫,১২৪ বর্গফুট বিশিষ্ট ফিস্টুলা ও মেটারনিটি হাসপাতালটি নির্মিত হচ্ছে । এই হাসপাতালটির নাম হবে ‘৭৫ শয্যার হোপ মেটারনিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টার’। ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরে ২০১৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩০ মাস সময়সীমায় নির্ধারিত এই ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে লাগবে আর ১৫ মাস। ৭৫ শয্যার এই হাসপাতালের ৫ শয্যা নিয়ে হবে ‘মাতৃসেবা ওয়ার্ড’। ১৫ শয্যা নিয়ে হবে বিশেষায়িত ‘ফিস্টুলা ওয়ার্ড ১০ শয্যা নিয়ে হবে ‘শিশু ওয়ার্ড’। সাথে থাকবে একটি আধুনিক পরীক্ষাগার, দু’টি অপারেশন থিয়েটার ও দু’টি ডেলিভারি থিয়েটার থাকবে।

হোপ ফাইন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর রাকিবুল হক জানান, দেশের কোথাও ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসার আলাদা কোনো হাসপাতাল তৈরি হয়নি। কিন্তু এই রোগের প্রকোপ বেড়ে চলছে। এই প্রেক্ষাপট থেকে হোপ ফাউন্ডেশন আলাদাভাবে সেন্টারভিত্তিক ফিস্টুলা হাসপাতালে গড়ে তুলছে।
হোপ ফাইন্ডেশনের কান্ট্রি ডাইরেক্টর এস.এম ফেরদৌসুজ্জামান পিএসপি বলেন, ‘৭৫ শয্যা বিশিষ্ট হোপ মেটারনিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টার’ নির্মাণ কাজ আর বছর দেড়েকের মধ্যে সমাপ্ত হবে এবং ২বছরের মধ্যে এটি চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত হবে। প্রস্তুত হলে বাংলাদেশে ফিস্টুলা রোগের চিকিৎসায় নিবেদিত একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র হবে এটি।’

তিনি বলেন, ‘হোপ ফাউন্ডেশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ইফতিখার মাহমুদ পুরো বাংলাদেশের ফিস্টুলা রোগীদের কথা চিন্তা করে এই হাসপাতালটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। দাতা সংস্থার অর্থায়নের এটি নির্মিত হচ্ছে। পুরো বাংলাদেশ থেকে এসে ফিস্টুলা রোগীরা এখানে স্বল্প ও বিনামূলে চিকিৎসা নিতে পারবেন।’