ডেস্ক নিউজ:
 দীর্ঘ ১৯ বছর পর সম্প্রতি পাকিস্তানে আদমশুমারি করা হয়েছে। অবশ্য সেই ফলাফল দেখে চোখ ছানাবড়া নওয়াজ সরকারের। ১৯৯৮ সালের আদমশুমারিতে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৫০ লাখ। কিন্তু ২০১৭ সালের গণনায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ কোটিতে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার অব্যাহত থাকলে পাকিস্তানে যে সংকট দেখা দেবে তা নিয়ে চিন্তিত সরকার।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে তা হল অসচেতনতা। সম্প্রতি পাকিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখানো হয়েছে, দেশটির মাত্র ৩ জন পিতারই সন্তান সংখ্যা প্রায় একশ’ হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এত সন্তান জন্ম দেয়ার পেছনে ওই ৩ পিতার যুক্তি ‘আল্লাহ দিয়েছেন’। তাদের অন্যতম ৫৭ বছর বয়সী গুলজার খান তার চারপাশের সন্তানদের দেখিয়ে এমন মন্তব্য করেন। তার চারপাশ ঘিরে তখন বসে ছিল নানা বয়সের ২৩ সন্তান। বাকি ১৩ সন্তান সেখানে না থাকলেও আশপাশেই কোথাও ছিল। এখানেই শেষ নয়, তার আরও একটি সন্তান আসন্ন।

তবে এত সন্তান থাকলেও মোটেই বিচলিত নন গুলজার। তার ভাষায়, এ সবই আল্লাহ দিয়েছেন। তা ছাড়া পারিবারিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার জন্যও বেশি সন্তানের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়ার বাসিন্দা গুলজার খান বলেন, ‘আল্লাহ এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। মানুষও তারই সৃষ্টি। তাহলে কেন আমি শিশু জন্মের নিয়মে বাধা দেব?’  এ সময় তিনি ইসলাম জন্মনিয়ন্ত্রণ সমর্থন করে না বলেও মন্তব্য করেন। তিনি জানান, তার এত সন্তান হওয়ায় সবাই মিলেই একটি পুরো ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে পারবে। এজন্যে তাদের কোনো বন্ধুর দরকার নেই।

গুলজারের মতো একই মত অন্য দুই পিতার। এদের একজন ৭০ বছর বয়সের মাস্তান খান ওয়াজির। তিনি আবার গুলজার খানের ১৫ ভাইবোনের মধ্যে অন্যতম। ভাইয়ের মতো তারও ৩ জন স্ত্রী রয়েছেন। সন্তান সংখ্যা ২২ জন। তাদের আবার রয়েছে একাধিক নাতি। তবে সেই সংখ্যাটা ওয়াজিরের জানা নেই।

 

এদিকে গুলজার এবং ওয়াজিরের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও মতাদর্শে এক জান মোহাম্মেদ। তারও স্ত্রী রয়েছেন ৩ জন। সন্তান সংখ্যা মোটে ৩৮টি। যদিও তিনি ঠিক করে রেখেছেন এই ইনিংসে সেঞ্চুরি করবেন। জান মোহাম্মেদ বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটায় বাস করেন। গত বছর সংবাদমাধ্যম এএফপি’কেই তিনি চতুর্থ বিয়ে আর ১শ’ সন্তান নেয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি সেই ইচ্ছে প্রসঙ্গে জান মোহাম্মেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে বিমর্ষ দেখায় তাকে। তিনি জানান, এখনও তাকে কেউ বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় ইনিংস এগুচ্ছে না। তবে আশা তার এখনও রয়েছে। তার মতে, ‘মুসলমান যত জন্মাবে, শত্রুরা তত ভয় পাবে। মুসলমানদের তাই বেশি বেশি সন্তান নেওয়া উচিত।’

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, দেশটির শহরাঞ্চলে সচেতনতা বাড়লেও প্রত্যন্ত এলাকায় এই আলো এখনও ছড়ায়নি। এমনিতেই পাকিস্তানের প্রায় ৬ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে। বেকারত্বের পরিমাণও কম নয়। সেখানে এভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে অচিরেই এটি পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে।