ডেস্ক নিউজ:

আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচন হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনের অধীনে। দুনিয়ার অন্যান্য দেশে যেমন ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করে আওয়ামী লীগ সরকারও তেমনি নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করবে। আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে, অংশগ্রহণমূলক হবে। সব দেশে নির্বাচনের ছবি আমাদের অজানা নয়।

রোববার (১১ জুন) সকালে ছাত্রলীগের বর্ধিতসভা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আজকে বিএনপি সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা বলে। তারা যখন ১ কোটি ২৩ লক্ষ ভুয়া ভোটার তৈরি করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক সেই সময় ওয়ান-ইলিভেন আসছে। বেগম জিয়াকে বলতে চাই ভুয়া নির্বাচনের দিন শেষ হয়ে গেছে।

ঈদের পরে বিএনপির আন্দোলনে নামার বিষয়ে কাদের বলেন, সব সময়ই শুনি ঈদের পর আন্দোলন। রোজার ঈদ গেলে কোরবানীর ঈদের পর। কোরবানীর ঈদ গেলে পরীক্ষার পর। এভাবে ২০০৮,২০০৯,‘১০,‘১৩ পেরিয়ে এখন ‘১৭। বিএনপি আন্দোলন করবে কবে জানতে চাই? আর বিএনপি শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন করে এটা রূপকথার কাহিনী।

তিনি বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘২০০১ সালে কি ঘটেছিল বাংলাদেশে? বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ২১ হাজার আওয়ামী নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান টার্গেট করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা করে আইভী রহমানসহ ২৩ জনের প্রাণপ্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছিল কারা? আহসাউল্লাহ মাস্টার, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবীদ কিবরিয়াকে কারা হত্যা করেছিল বিএনপি-জামাত। হুমায়ন আজাদকে কারা হত্যা করেছিল?’

সভায় ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘অনেক জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাগাভাগি, কার কতজন নেতা-কর্মী থাকবে এই ভাগাভাগি চলবে না।’

এসময় উপস্থিত নেতা-কর্মীরা করতালি দিলে তিনি বলেন, ‘তোমরা যারা হাততালি দিচ্ছ এটা তোমাদের মনের কথা। কিন্তু তোমরাই নেতাদের কাছে যেয়ে ধর্না দেও। তোমাদের মধ্যে যারা যোগ্য তাদেরকেই নেতা বানানো হবে। ছাত্রলীগ তাদের কর্মীদের যোগ্যতার স্বীকৃতী দেবে। কোনো নেতাকে খুশি করার জন্য ছাত্রলীগ কাজ করবে না। ছাত্রলীগকে তাদের গঠনতন্ত্র মেনে চলতে হবে। ’২২২

কমিটি দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘মফস্বলে সম্মেলন করতে যেয়ে সবাই ভাষণ দেয়। কিন্তু কমিটি দেয় না। যেখানে সম্মেলন সেখানেই কমিটি দিতে হবে। সম্মেলনের মাসখানেক পরে কমিটি দেয়া চলবে না। বিলম্বিত কমিটি অযোগ্য লোকদের সুবিধা করে দেয়। ছাত্রলীগের সুনামের ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে। জেলার আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে কথা বলা যেতে পারে কিন্তু তাদের কথায় কমিটি দেয়া যাবে না। তাদের ইচ্ছায় তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে নেতা বানানো যাবে না। তাদের পরামর্শ ভাল হলে গ্রহণ করা যেতে পারে। ছাত্রলীগ কোনো নেতার স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার হতে পারে না। ছাত্রলীগকে তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে। সোহাগের কমিটি, জাকিরের কমিটি বা ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশিত কমিটি এগুলো চলবে না। এগুলো করা যাবে না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলের কর্মসূচি পালন না করলে কর্মীকে হল থেকে বের করে দেয়া চলবে না। পলেটিক্যাল রুম চলবে না। কিসের পলেটিক্যাল রুম? সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজনীতি করবে। ছাত্রলীগের পদে থেকে কেউ অপরাধ করলে যে অপরাধ করে সে একা দায়ী। একজনের ভুলের জন্য গোটা কমিটিকে স্থগিত করা বা বহিস্কার করা চলবে না। আর কমিটি যদি বহিষ্কারই করতে হয় তবে বহিষ্কার করার আগে নতুন কমিটি ঘোষণা করতে হবে।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন থেকেই নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রস্তুতি নাও। নিজেরা নিজেদের প্রতিপক্ষ হলে কেউ তোমাদের রক্ষা করতে পারবে না। নিজেদের মধ্যে কেন তোমরা শক্তি ক্ষয় করছো? টেন্ডাররের সময়, চাঁদাবাজী ছাত্রলীগের বেশির ভাগ কর্মী করে না। গুটি কয়েকের জন্য গোটা দলের বদনাম হয়। যারা এগুলো করে, তাদেরকে দল থেকে বের করে দিতে হবে। তোমাদের কারো সংগঠন করার জন্য, তোমাদের ব্যক্তিগতভাবে যদি কারো আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হয়, তোমরা আমাকে জানাবে, আমি তোমাদেরকে সাহায্য করবো।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ টাকার জুতা আর কাপড় পড়লেই স্মার্ট হয় না। স্মার্টনেস হয় সাদামাটায়, পরিচ্ছন্ন মানসিকতায়, শিক্ষায়। জীবনে বড় হতে হলে, বড় নেতা হলে, প্রতিষ্ঠিত হতে হলে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। বহু পরিশ্রম, জেল-জুলুম সহ্য করে আজ বড় হয়েছি। আশা করি আমরা কথাগুলো কানের শটক থেকে চেতনার অন্দরে নিব।’

ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ তার বক্তৃতায় বলেন, ‘আমাদের সামনে জাতীয় সংসদের নির্বাচন। ২০২০ সালে জাতির জনকের জন্ম শত বার্ষিকী পালন এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান পালিত হবে। ২০২১ এবং ২০৪১ সালের ভিশন বাস্তবয়ন করতে হলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ের বিকল্প নেই। তাই আজকের কর্মশালার মাধ্যমে আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা নেব।’

‘ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, আমরা এমন কাজ করবো না, যা দেশ নেত্রীর অর্জন কে ম্লান করে দেয়। সংগঠনের সুনামকে বিনষ্ট করে দেয়।’