বার্তা পরিবেশক:
মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ছিলেন উপমহাদেশের মুসলিম বাংলা সাংবাদিকতার অগ্রনায়ক। তিনি একাধারে দৈনিক আজাদ ও মাসিক মোহাম্মাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সমাজসংস্কারক, ইসলামী চিন্তাবিদ। তাঁর লিখা গ্রন্থ ‘মোস্তাফা রচিত’ এখনো বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘরে ঘরে সমাদৃত। তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেন।
মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ’র ১৪৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৩৯০ তম পাক্ষিক সাহিত্য সভায় মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ’র জীবনালেক্ষ্য নিয়ে আলোচনায় বক্তাগণ এসব কথা বলেন।
একাডেমী সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুলের সঞ্চালনায় অদ্য ৯ জুন ২০১৭ কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাহিত্য সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন একাডেমীর নির্বাহী সদস্য ও কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক গল্পকার সোহেল ইকবাল। মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ’র জীবনালেক্ষ নিয়ে আলোচনা করেন একাডেমীর নির্বাহী পিটিআইর প্রাক্তন সুপার রাজবিহারী চৌধুরী, একাডেমীর স্থায়ী পরিষদ সদস্য গবেষক নূরুল আজিজ চৌধুরী, একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইসলামী গবেষক আহমাদুল্লাহ, স্থায়ী পরিষদ সদস্য কবি-অধ্যাপক দিলওয়ার চৌধুরী, একাডেমীর অর্থ সচিব কবি মোহাম্মদ আমিরুদ্দীন, পোকখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার শফিউল আলম প্রমুখ।
সভায় বক্তাগণ আরো বলেন, তাঁকে শুধু সাংবাদিক অভিধা দিলে তাঁর প্রতি অবিচার করা হবে। তিনি ছিলেন, সাংবাদিক, সম্পাদক, সাহিত্যিক, গবেষক, চিন্তাশীল ইসলামী প-িত, মুসলামনাদের স্বার্থসংরক্ষক, প্রথম সারির রাজনীতিবিদ। মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। ১৯১৩ সালে তিনি আঞ্জুমানে উলামায়ে বাংলা নামে আলেম সমাজের একটি সংগঠন কায়েম করেন। ১৯১৫ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মাসিক আল-ইসলাম। ১৯১৬ সালে লক্ষ্মৌতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের যৌথ সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন। ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। এ সময় তিনি খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন।
বক্তাগণ আরো বলেন, মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে কংগ্রেস ত্যাগ করে নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৩৬ সালে মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৪১ সালে তিনি মুসলিম লীগের বাংলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ সালে লীগ পার্লামেন্টারী বোর্ডের সদস্য মনোনীত হন। ১৯৫৪ সালে মাওলানা আকরম খাঁ মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন এবং ১৯৬২ সালে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর প্রথম সভাপতি মনোনীত হন। ১৯৬৩ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর তিনি প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কর্তৃক জারীকৃত প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে ঢাকায় সাংবাদিকদের বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
বক্তাগণ বলেন, তিনি একমাত্র আরবি শিক্ষিত মাওলানা যিনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন।
পরে মোহাম্মদ আমিরুদ্দীন ও কল্লোল দে চৌধুরী কবিতা পাঠ করেন এবং নূরুল আলম হেলালী কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন।
উল্লেখ্য মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ১৮৬৯ সালে ৭ জুন পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট মহকুমার হাকিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালের ১৮ই আগষ্ট তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।
১৯৮১ সালে তাকে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ঠ্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা দিবস পদকে (মরনোত্তর) ভূষিত করা হয়।
কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৩৯১ তম পাক্ষিক সাহিত্য সভায় আগামী ১৬ জুন ২০১৭, ২ আষাঢ় ১৪২৪, শুক্রবার বিকাল ৪টায় সাহিত্য একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইসলামী গবেষক আহমাদুল্লাহর বাহারছড়াস্থ স্মৃতি নীড়ে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী প্রকাশিত ‘কক্সবাজারের ছড়া এ্যালবাম’-এর উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সিনিয়র শিক্ষক ও একাডেমীর সহ-সভাপতি ছড়াকার মো. নাছির উদ্দিন মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে একাডেমীর সংশ্লিষ্ট সকলসহ জেলার কবি-সাহিত্যিক, সাহিত্যামোদিদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল আহবান জানিয়েছেন।