সিবিএন ডেস্ক

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে ৪৬ বছর পার হলো। এই সময়ে জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে। যু্দ্ধবিধ্বস্ত একটি স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে যখন আত্ননিয়োগ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তখনই দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্রে পরিবার পরিজনসহ তাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হত্যা করা হয়। এরপর বাংলাদেশের আকাশে চলে আসে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। ষড়যন্ত্রকারীদের নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক রাজনীতিবিদকে তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। সেই ঘটনার জন্ম দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। তাদের দেখানো পথেই আদালতের মাধ্যমে হেঁটে খালেদা জিয়া এবং বিএনপি নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক, বাংলাদেশের ৫ টি হাই প্রোফাইল বাড়ি উচ্ছেদের ঘটনা।

১. শহীদ আলতাফ মাহমুদের বাড়ি: দেশ স্বাধীন হবার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শহীদ পরিবারদের বেশ কিছু বাড়ি নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে উপহার দিয়েছিলেন। তার মধ্যে শহীদ আলতাফ মাহমুদের পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত বাড়িটি ছিল ১ নং মালিবাগ। ‘৮২ সালের ফেব্রুয়ারীতে একদিনের নোটিশে সে বাড়িটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়।

আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ সেইদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, সেইদিন কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে স্যুটকেসের ওপর মা বসিয়ে রেখেছিলেন আমায়। বসে বসে পুলিশের তান্ডব দেখেছিলাম সেদিন। দোতলা থেকে বাবার ব্যাগ ফেলছিল ওরা। এলপি রেকর্ডগুলা চূর্ণ বিচূর্ণ করে ফেলছিল বারান্দা থেকে। নীচের তলার সংগীত স্কুলের হারমোনিয়াম তবলা তানপুরা উঠোনের এখান ওখানে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছিল ওরা। আমি জানতাম না রাতে কোথায় থাকবো সেদিন।

২. সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) খালেদ মোশাররফের বাড়ি: বৃহস্পতিবার খালেদ মোশাররফের মেয়ে মেহজাবিন খালেদ মোশাররফ জাতীয় সংসদে বলেন, মাহজাবীন বলেন, ‘আমার বাবা জেনারেল খালেদ মোশাররফ একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আর্মি অফিসার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীর নায়ক খালেদ মোশাররফের স্ত্রী হিসেবে আমার মাকে সরকার যে বাড়ি প্রদান করে, সেখান থেকে উচ্ছেদের জন্য বেগম জিয়া তাঁর শাসনকালে একের পর এক প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

বাড়ি নিয়ে মওদুদের করা রিটের পরবর্তী শুনানি ২ জুলাই২০০৫ সালে খালেদা জিয়ার বোনের ছেলে মাইক্রোবাসে করে গুন্ডা ভাড়া করে এনে বাড়ি খালি করার জন্য আমার মাকে হুমকি দেন। হুমকি দিয়ে ক্ষ্যান্ত হননি। বাড়ি থেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আমাদের বের করে দিয়েছেন। আদালতের কোনো আদেশ ছিল না, ছিল না কোনো সরকারি বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। সম্পূর্ণ গুন্ডামি করে সন্ত্রাসীদের মতন এসে আমাদের বাড়ি দখল করে নেন তাঁরা।’

৩. শেখ রেহানার ধানমন্ডির বাড়ি: ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শেখ রেহানাকে ধানমন্ডির ৬ নম্বর সড়কে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে ওই বরাদ্দ বাতিল করে বাড়িটিতে ধানমন্ডি থানা করা হয়। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শেখ রেহানা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে ছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে শেখ রেহানা রিট আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। পরে তিনি বাড়িটি সরকারকে নিবন্ধন দলিলের মাধ্যমে ফেরত দিয়ে দেন।

৪. খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে ৩৮ বছরের স্মৃতি বিজরিত ক্যান্টমেন্টের শহীদ মঈনুল হক রোডের ১৬৫ কাঠার বিশাল বাড়ি থেকে অশ্রুজলে উচ্ছেদ হয়েছিলেন। ৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে বিদ্রোহী সেনাদের হাতে প্রেসিডেন্ট সেনাশসক জিয়াউর রহমান নিহত হলে তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ ও সাত্তার সরকার এই বাড়িটি ১ টাকার বিনিময়ে খালেদা জিয়াকে দিয়েছিলেন। গুলশানেও আরেকটি বাড়ি দেয়া হয়েছিল এই বিবেচনায় একটিতে তিনি বসবাস করবেন অন্যটি ভাড়া দিয়ে অনাথ সন্তানদের জীবনযাপন করবেন। পরবর্তীতে বিএনপির নেতৃত্বে এসে বেগম খালেদা জিয়া কখনো বিরোধী দল, কখনো সরকারে থেকে দীর্ঘ তিন দশক এই বাড়ি থেকে রাজনীতি করেছিলেন দাপটের সঙ্গে। সেই বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর সেখানে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনাকর্মকর্তাদের পরিবারকে ২ টি করে ফ্লাট দেয়া হয়েছে।

৫. গুলশানে ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদের বাড়ি: বিএনপির রাজনীতির দুঃসময়ের এই ক্রান্তিকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ ৩৬ বছর ধরে বসবাস করা  গুলশান-২- রোডের ১ বিঘা ১৩ কাঠার ১৫৯ নম্বর বাড়ি থেকে দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের পর হেরে গিয়ে বুধবার উচ্ছেদ হয়েছেন। উচ্ছেদকালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাতে ফুটপাতেই থাকবেন। উঠেছেন নিজের কেনা গুলশান ২ এর ৫১ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাসার ফ্লাটে। উচ্ছেদ হওয়া বাড়িটি রাজউক দখলে নিয়েছে। আইনী লড়াইয়ে তারা জিতেছে।

ইতোপূর্বে বাড়িটি তার ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মঞ্জুর আহমদের এবং তার পক্ষে তিনি দখলদার বলে দাবি করলেও এবার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নিজেই বাড়িটির মালিকানা দাবি করেছেন।

মামলায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দাবি করেন, অস্ট্রেলীয় নাগরিক ইনজে মারিয়া ১৯৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সাবেক প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরীকে আমমোক্তারনামা নিযুক্ত করেন। পরে ১৯৮১ সালের ২৩ মে উক্ত আমমোক্তারনামায় মওদুদ আহমদের বরাবর একটি ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্র করেন।

এই ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, তাকে উচ্ছেদ করার পর ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদকেও তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একদিন আওয়ামী লীগের নেতাদেরও এক কাপড়ে বাড়ি ছাড়তে হবে। তারা দুজনই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছিলেন। আইনী লড়াইয়ে তাদেরকে হেরে উচ্ছেদ হতে হয়েছে। ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদও বলেছেন, এটা সরকারের সর্বোচ্চ প্রতিহিংসা, অপরাজনীতির শিকার।

পূর্বপশ্চিমবিডি