নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেই আলোচিত সাংবাদিক নির্যাতনকারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও বহু মামলার আসামী নুরুল হক (ভুট্টোর) বিরুদ্ধে এবার নিরীহ মানুষের জমি কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগি পরিবার পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া গ্রামে আশরাফ মিয়ার কাছ থেকে ১৯৮৮ সালে টেকনাফ মৌজার সৃজিত খতিয়ান-৭৪০৪ থেকে ১ একর ২০ শতক জমি ক্রয় করে একই এলাকার মৃত ফজল আহমদের তিন ছেলে দিল মোহাম্মদ, গফুর আলম ও আবুল কালাম। দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল করে আসলেও সম্প্রতি ওই জমির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে একই এলাকার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হকের (ভুট্টু)। এরই অংশ হিসাবে একাধিকবার দখলের চেষ্টা চালায় ভুট্টু। পরে জমির মালিকদের মধ্যে দিল মোহাম্মদ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় ভুট্টুর বিরুদ্ধে মামলার এজাহার দিলে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান বিচার শালিসের মাধ্যমে সমাধান করে দেবে আশ্বাস দিয়ে মামলাটি তালিকাভুক্ত করতে দেয়নি। কিন্তু আশ্বাস দিলেও দীর্ঘদিন ধরে কোন ধরণের বিচার শালিসের উদ্যোগ না নেওয়ায় দিল মোহাম্মদ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এমআর মামলা দায়ের করে। যার নং-২৭৪/১৭। ওই মামলার ভিত্তিতে আদালত ওই জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করে গত ৮ মে’র মধ্যে উপজেলা ভুমি কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ওই জমিতে স্থাপনা বন্ধ করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন।
পরে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) আাদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে জমির প্রকৃত মালিক দিল মোহাম্মদ, গফুর আলম ও আবুল কালাম বলে উল্লেখ করেন।
আদালতে ওই প্রতিবেদন দেয়ার পর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে নুরুল হক (ভুট্টু)। বর্তমানে সেখানে অবৈধ অস্ত্রের মহড়াসহ ভুক্তভোগিদের নানা হুমকি ধমকি দিয়ে জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জমি দখলে তাকে স্বশস্ত্র সহযোগিতা করছে তাঁর ইয়াবা ব্যবসার সহযোগিরা।
স্থানীয়দের কাছে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যেত নুরুল হকের (ভুট্টু)। কিন্তু ইয়াবা ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করে ভুট্টু। কিছুদিন আগে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ভুট্টু ও তার সহযোগিদের হাতে চরম নির্যাতনের শিকার হয় কক্সবাজারের পাঁচ সাংবাদিক। এঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এছাড়াও সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনায় ভুট্টুর পিতা এজাহার মিয়াকে গত মঙ্গলবার আটক করেছে পুলিশ। এজাহার মিয়া এজাহারভুক্ত আসামী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী তালিকায় নুরুল হক ভুট্টুর নাম শীর্ষে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিক নির্যাতন, পুলিশ নির্যাতন ও ইয়াবাসহ ডজনাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু তারপরেও পুলিশ তাকে আটক করছেনা। দীর্ঘদিন ধরে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে বেপরোয়াভাবে নিরীহ মানুষের নির্যাতন করছে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী ভুট্টু।
দিনের নির্যাতনের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার প্রেসক্লাবে বুধবার ইয়াবা ব্যবসায়ী ভুট্টুর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগি দিল মোহাম্মদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন তাঁর ভাই গফুর আলম ও ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, চিহ্নিত কিছু জনপ্রতিনিধি ইয়াবা ব্যবসায়ী ভুট্টুকে আশ্রয় দেয়ার কারণে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভুট্টু। এত মামলা থাকার পরেও টেকনাফে প্রকাশ্যে চলাফেরা করে। কিন্তু পুলিশ তাকে আটক করছে না। ভুট্টুর হাত থেকে নির্যাতনের রেহায় পাওয়ার জন্য তাকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানান তিনি।