বিশেষ প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ার করিয়ারদিয়া মৌজায় স্থাপন করতে যাওয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে বুধবার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে জমির ক্ষতিগ্রস্থ মালিকগন।

জমির মালিকগন অধিগ্রহণের টাকা দেড়গুণের পরিবর্তে সরকারি ঘোষণা মতে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান।

বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের নিকট দেয়া স্মারকলিপিতে জানানো হয়, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কম্পানী বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সরকার করিয়ারদিয়া মৌজার ১৩৬৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ সংক্রান্ত ৩ ধারার একটি নোটিশ জমির মালিকদের কাছে পৌঁছানো হয়। কিন্তু অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে জমির মালিকেরা প্রকৃত মূল্য দূরে থাক, তার কিয়দংশও পাবে না।

অধিগ্রহণ করা জমিসমূহ পেকুয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এসব জমিতে বর্তমানে প্রতি একরে লবণ উৎপাদন হয় ৭৫০ মণ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য করিয়ারদিয়া মৌজার যে ১৩৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, তার পুরোটাই লবণ মাঠ। এছাড়াও সেখানে ৫ শতাধিক বসতবাড়ীও রয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার প্রতি একর জমিতে বার্ষিক লবণ উৎপাদন হয় ৭৫০ মণ, যার বর্তমান বাজারমূল্য সাড়ে ৩ লাখ টাকার বেশি।

লবণ ছাড়াও এসব জমিতে বর্ষাকালীন ৬ মাস চিংড়ির চাষ হয়। যেখান থেকে প্রতি একরে আয় হয় প্রায় ৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ একর প্রতি জমি থেকে প্রতিবছর খরচ বাদে আয় হয় ১০ লক্ষাধিক টাকা। অথচ বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হলে তা হবে মাত্র এক বছরের আয়ের সমান। উক্ত জমির উপর প্রায় ১৪ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। উৎপাদনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্ষতিপূরণের টাকা না দিলে এলাকাবাসীর জীবন জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়বে।

দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এখানে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হোক- সেটা এলাকাবাসী চায়। তবে তা হওয়া উচিৎ ন্যায্য ক্ষতিপূরণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথভাবে পূনর্বাবসন করে। তাই ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রতি একর জমির মূল্য অন্তত ৫ বছরের আয়ের সমান বা ৫০ লাখ টাকা হওয়া উচিৎ বলে এলাকাবাসী মনে করে।

সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা জমি অধিগ্রহণ শাখায় এল.এ মামলা নং-০৭/২০১৪-২০১৫ এর আওতায় মাতারবাড়ী মৌজায় অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের অপূরণীয় ক্ষতি বিবেচনায় প্রতি শতক জমির মূল্য ৩৩,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। মাতারবাড়ী মৌজার নির্ধারিত মূল্যে সমপরিমাণ মূল্য করিয়ারদিয়া মৌজার এল.এ মামলা নং-০৩/২০১৫-২০১৬ মৌজার ক্ষতিপূরণ জমির মূল্য হিসেবেও হলে বিবেচনা করা দরকার।

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনকে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন অধিগ্রহণ জমির মালিক জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, এডভোকেট মো. শহিদুল্লাহ, মিজানুর রহমান হিরু প্রমুখ।

এসময় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন।