রত্ন ভান্ডার বাংলাদেশের অনিন্দ্য সুন্দর একটি দ্বীপের নাম সেন্টমার্টিন। প্রবাল দ্বীপ হিসেবে পরিচিত এই ছোট্ট দ্বীপে সারা বছরই ভিড় লেগে থাকে দেশী-বিদেশী পর্যটকের। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে তাঁরা অপার বিষ্ময়ে মুগ্ধতায় বলে Wow!! it’s amazing. What a nice view! কেউ’বা আবার বলে,কী দরকার শুধু শুধু বিদেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার। আগে নিজের দেশের সৌন্দর্য তো দেখি। আমার দেশ’ই সেরা। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল ধ্রুবতারা নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদও যারপরনাই নিজের মতো করে অবকাশ যাপনের জন্য পছন্দের শীর্ষে রেখেছিলেন অনিন্দ্য সুন্দর এই দ্বীপকে। এমনই কত জন আসেন আর বিষ্ময়ে উপহার দেয় সাহিত্য ভান্ডারে নিজেদের অনুভূতির সন্দেশ। এই দ্বীপের ইতিবৃত্ত নিয়ে নির্মিত হচ্ছে নাটক,চলচিত্র। তৈরি হচ্ছে দেশী-বিদেশী জার্নালে প্রতিবেদন। জানি,সেন্টমার্টিনে আসতে আপনার মন সাড়া দিচ্ছে হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও!! আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় অবচেতন মনে সেন্টমার্টিনের অপরূপ সৌন্দর্য ভেসে উঠছে। এই দ্বীপটি যত টা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বিষ্ময় ঠিক ততোটাই সম্ভাবনায়। আপনার একটু সদয় বিবেচনায় এই দ্বীপ প্রিয় দেশের রাজস্ব খাতে অসামান্য অবদান রাখবে,তা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।

আলো ঝলমলে গাছের একটি পাতার একদিকে যেমন সৌন্দর্য তার মুগ্ধতার পসরা মেলে। অপরদিকে কালো
অন্ধকারে নীরব বেদনার কথাও বলে। সময়ের পালাবদলে সেন্টমার্টিন দ্বীপও এমনই। প্রায় ৮ বর্গ
কিলোমিটার আয়তনের অনিন্দ্য সুন্দর এই দ্বীপ
এখন সুখের কোন বার্তা দেয়না বরং দুঃখ শোকে প্রতিনিয়ত মূর্চা যায়!! দিবে কী করে? ঘূর্ণিঝড় মোরা’র তান্ডবে এই দ্বীপ এখন মৃত্যুপুরী। হ্যাঁ,ঠিকই পড়েছেন মৃত্যুপুরী কেননা এখানে রোজ সদলবলে অনুভূতিরা খুন হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোরা’র ধ্বংস লীলায় সাজানো-গোছানো এই দ্বীপ এখন লণ্ডভণ্ড। এমন কোথাও বাকি নেই যেখানে মোরা’র ভয়ংকর ছাপ পরেনি। সময়ের খরস্রোতায় অসহায় দ্বীপবাসী প্রতিনিয়ত গুমরে কাঁদে
অনিশ্চিয়তায়। কী হবে তাঁদের ভবিষ্যত? হতাশায়
তাঁদের মাঝে ধ্বনিত হয় মাতম “এতোকিছু যখন কেড়েই নিলো জীবনটাই কেন রেখে গেল!!” লণ্ডভণ্ড জনপদে সিংহভাগ মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই,ভুভুক্ষূ মানুষগুলোর আহাজারি-রোনাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে রোজ দ্বীপের বাতাস। শিশুরা খাবারের জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যায়।মায়েরা কাপড়ের আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে ইনিয়ে বিনিয়ে গল্পের ছলে তাদের ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আর বাবা উপাধি পাওয়া মানুষগুলো স্ত্রী-সন্তানদের করুণ দৃশ্য দেখে,তাদের দৃষ্টির বাহিরে গিয়ে অঝোরে কাঁদে। সে যে বেঁচে থেকেও দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে পারছে না স্ত্রী-সন্তানদের মুখে।

দ্বীপের অধিকাংশ মানুষই নিম্ন আয়ের। নাগরিক জীবনের অধিকাংশ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নৌ-যান হলো আমাদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। সাগরের বিশাল নীল জলরাশিই,অধিকাংশ মানুষের জীবন জীবিকার প্রধান উৎস। ঝড়ঝঞ্জা,সাইক্লোন আমাদের নিত্য সঙ্গী। প্রকৃতির বিরূপ আচরণের সঙ্গে লড়াই করে আমাদের প্রতিনিয়ত চলতে হয়।

বর্তমানে আমরা দুঃখে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। অবর্ণনীয় দুঃখ দূর্দশায় মানবিক জীবন আজ বিষন্ন। এই বিষন্নতা লুকিয়ে আছে দ্বীপের প্রতিটি মানব মনের স্তরে স্তরে। প্রতিনিয়ত গ্রাস হচ্ছে আমাদের মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি। হৃদয় আজ ক্ষতবিক্ষত। চারদিকে থমথমে পরিস্থিতি, আর সবারই ভেতরে বিরাজ করছে বোবাকান্না। আহাজারি আর রোনাজারিতে ভাগ্যাহত মানুষের চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে আসছে দিন দিন। ঘুরেফিরে একটাই প্রশ্ন “হে খোদা,আমাদের যন্ত্রণার শুরু আছে তবে শেষ কী
নাই!! মালিক,তুঁমি তো রহমান,আমাদের উপর রহম করো।”

অভিশপ্ত “মোরা” আমাদের দুই কান কেটে দিয়েছে। সুতরাং লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। কী বলবো,কিভাবে বলবো,কী দিয়ে শুরু করবো,কিভাবে নিজের মনকে প্রবোদ দিবো? কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা শুধু এটুকুই বুঝতেছি নিজের অবস্থান থেকে এই দ্বীপবাসীর জন্য কিছু করা দরকার, তাঁদেরকে বাঁচানো দরকার, তাঁদের মনে সাহসের সঞ্চার করা দরকার। যেন তাঁরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

মৌলিক চাহিদাগুলো আজ থমকে আছে প্রবাল দ্বীপে।
অন্ন,বস্ত্র,শিক্ষা,চিকিৎসা,বাসস্থানের কথা বলে লজ্জা দিবেন না। তবে এই অসময়ে দ্বীপের গরীব মানুষেরা সামান্য চিকিৎসা সেবা পেতে চেয়েছিল। কিন্তু বিধিবাম,আমরা যে কপাল পোঁড়া। ১০ শয্যা বিশিষ্ট
হাসপাতাল আছে ঠিকই,যেখানে নামমাত্র হাসপাতালের ভবন আছে তবে নেই উল্লেখযোগ্য যন্ত্রপাতি। নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সেবা। হাতেগোনা যে ক’জন ডাক্তার-নার্স আছেন তাদের অধিকাংশই অজ্ঞাত কারণে দ্বীপে অনুপস্থিত বহুদিন যাবৎ। শিক্ষার কথাটা আপাতত রাখি,আগে তো জান’টা বাঁচুক।

স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বহু বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছে দ্বীপরক্ষার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কথা। কিন্তু আজ অবদি অজানা কারণে দ্বীপবাসী সেই সুসংবাদ পায়নি। বিশ্বাস ও ভরসা কেবল আশ্বাসের বাণীতে আটকে আছে। অবহেলার সংস্কৃতি আমাদেরকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।

মহান রব্বুল আলামীনের কাছে অপরিসীম শোকর গুজার করি এই ভেবে, যে হারে “মোরা” তার ধ্বংস লীলার তাণ্ডব চালিয়েছে সে হারে মৃত্যুর মিছিল হয়নি। হলে এই দ্বীপ হতো আজ বিশাল গোরস্তান।বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে দ্বীপবাসীর পক্ষে অন্তরের অন্তস্থল থেকে জানাই কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। আপনার সময়োচিত সঠিক দিক-নির্দেশনায় অনেক জীবন বিপন্ন হওয়া
থেকে রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ। দুঃসময়ে দ্বীপবাসীর প্রতি ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। আপনাদের সৌজন্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি নেমেছে দ্বীপে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই উদাত্ত চিত্তে আহবান জানাই সমাজের বিত্তবান দের নিকট।নিজের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসুন,সহায় সম্বলহীন অসহায় দ্বীপবাসীর সাহায্যে। মানুষ হয়ে যদি মানুষের কল্যাণে আসতে না পারি। তবে মানুষ হিসেবে নিজেকে দাবি করে কী লাভ? সবার সুপ্ত বিবেক জাগ্রত হোক এটাই কামনা।

বেশ ক’দিন ধরে দোলাচলে ছিলাম কী হবে এসব বেদনার কথা লিখে?কী করবো? কী করা দরকার? এইসব ভেবে। এক মনে ভাবি প্রযুক্তির সহায়তায় বিপন্ন মানুষদের রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য আহবান করি সবাইকে। আবার ভাবি আমার এই আহবান তেমন ফলপ্রসু হবেনা, যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত না পৌঁছায়। কষ্ট হয় খুব,যখন আশ্বাসের বাণী কেবল আশ্বাসে থেকে যায়। আমি জানিনা দ্বীপবাসীর এই
আর্তনাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবদি পৌঁছাবে কিনা! তারপরেও নিরাশার সাগরে আশায় বুক বাঁধি,আমাদের পাশে একজন মমতাময়ী অভিবাবক আছেন বলে। তিঁনি আর কেউ নন, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় বিবেচনায় যদি আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ,দ্বীপের অপরিকল্পিত উন্নয়ন রোধে দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিবেশগত নীতিমালা তৈরী,ডিজিটাল আইল্যান্ড ঘোষণা,নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বাস্তবিক মান উন্নয়ন ও ফলপ্রসু বাস্তবায়ন হয়।তা হবে দ্বীপবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া।

প্রিয় নেত্রী,  বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আপনার হস্তক্ষেপ আমরা চাই। আপনার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে চাই আমরা দ্বীপবাসী। অামাদের অাস্হা ও বিশ্বাস অাছে অামরা নিরাশ হব না, মমতাময়ী।

জয়তু, গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। আপনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করি। দয়াময় আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুক সবসময়।

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের মানবেতর জীবন যাপন করা অসহায় মানুষদের পক্ষে।

মোঃ আল জাবের 
তার পেইজবুক স্ট্যাটাস থেকে।