শাহেদ মিজান, সিবিএন:
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ ৬৩ জেলের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা কবলিত ৭৫ জেলে উদ্ধার হলেও বাকি ৬৩ জেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আদৌ তারা বেঁচে নাকি মারা গেছেন তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে স্বজনেরা। তারপরও স্বজনেরা আশায় বুক বেঁধে আছেন ফিরে আসবেন প্রাণে স্বজন। এদিকে স্বজনহারা ৬৩জেলের পরিবারের চলছে শোকের মাতম। দুর্ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও কান্না থামছে না স্বজনহারাদের।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কবলে পড়ে মহেশখালীর চারটি বোটে ডুবে যায়। এসব বোটে ৮২ জন জেলে ছিলো। বোট ডুবিতে তারা সবাই পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে থেকে ভারত ও বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ৩৩জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। বাকি ৪৫জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। অন্যদিকে একইভাবে বোট ডুবিতে কুতুবদিয়ায় চারটি বোটসহ ১৮জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। সব মিলে ৮৩ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশখালীর নিখোঁজ ৪৫ জেলের সবাই পৌরসভার পুটিবিলা বাসিন্দা। এর মধ্যে রয়েছে পিতা-পুত্র, নানা-নাতি, মামার-ভাগিনা, ভাই-ভাই, শ্বশুর-জামাই। এমনকি জামাইসহ একই পরিবারের ৩/৪ জন করে জেলে নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছে। তারা সবাই ২৪ ও ২৫ মে পুটিবিলা এলাকার মরহুম মোহাম্মদ আলী পুত্র স্থানীয় পৌর কাউন্সিল আব্দু শুক্কুর এর মালিকানাধীন এফবি সায়েদ, এফবি ওয়ালিদ-১, এফবি ওয়ালিদ-২, ও একই হাজ্বী মোশারফ আলী পাড়া গ্রামের নুরুল আলম প্রকাশ বাঁশি মাঝির মালিকানাধীন এফবি গাউছিয়ায় নিয়ে মাছ ধরতে সাগরে যায়। ২৯ মে ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’র সিগন্যালের পর অসতর্কতার কারণে বোট চারটি সাগরে ডুবে যায়। এর মধ্যে থেকে ১ জুন ভারত থেকে বাংলাদেশে ত্রাণবাহী নৌ-জাহাজ সুমিত্রা ৩৩ জন জেলেকে সাগর থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে। তার মধ্যে আবু ছিদ্দিক নামে এক জেলে উদ্ধারের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। অপরদিকে টেকনাফের অদুরে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সদস্যরা হাবিব উল্লাহ, নিয়ামত উল্লাহ, আবু বক্কর ও আব্দু ছালাম নামের চার জেলেকে ২ জুন উদ্ধার করে। সব মিলে ৩৭ জন উদ্ধার হলেও
স্থানীয়রা জানান, এক গ্রামে ৪৫ জন নিখোঁজ হওয়ায় গ্রামটি এখন শোকের গ্রামে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে শুধু কান্নার রোল পড়েছে। একই সাথে বিধবার গ্রামে পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে কুতুবদিয়া উপজেলার চারটি মাছ ধরার নৌকা এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এর সাথে নিখোঁজ রয়েছে এসব বোটের ১৮ জন জেলে। এর মধ্যে প্রায় উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের বলে জানা গেছে। তাই নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে স্থানীয় চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরী অনেক চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি নৌবাহিনীসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তবে কুতুবদিয়ার আরো কিছু জেলে নিখোঁজের কথা বলা হলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরী জানান, নিখোঁজ ১৮ জেলের ১৫ জনই হলো উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের। এরা সবাই উত্তর ধুরুং এলাকার মোঃ ইউনুছের মালিকানধীন “এফবি.ফাতেমা” মোঃ জাফরের মালিকানাধীন “দাদা-দাদীর দোয়া”ও নুরুল কাদেরের মালিকানাধীন অজ্ঞাত একটি ফিশিং ট্রলারের জেলে।

এই ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ আবুল কালাম জনান, নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে কোষ্টগার্ড উদ্ধার অভিযান চলমান রেখেছে। আমরাও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ রেখেছি।’