দুই শিশুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করছেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আখতার। স্ত্রী মিতুর স্মৃতি বুকে ধারণ করে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে চারপাশের প্রতিকূলতাকে জয় করে যাচ্ছেন বাবুল। এক বছরের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আখতার মাহমুদ মাহির ও তাবাসসুম তাজমিন টাপুরকে মানসিকভাবে অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছেন বাবুল। দুই সন্তানই এখন বাবার মাঝে মায়ের আদর নিয়ে বেড়ে উঠছে।

গত বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন  এসপি বাবুল আখতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছেলে মাহির অনেকটাই অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছিলো। মায়ের ভয়ঙ্কর মৃত্যু চোখের সামনে দেখে অনেকদিন প্রায় বাকরুদ্ধ ছিল সে।

রোববার সন্ধ্যার পর নিজ বাসায় আধা ঘণ্টার জন্য পরিবর্তন ডটকমের দুই প্রতিবেদকের সাথে দেখা হয় বাবুল এবং তার দুই সন্তানের। টিপটপ সাজানো একটি বাসা। দুই শিশু কয়েক সেকেন্ড পরপরই এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে বাবার উপর। একজন কাঁধে উঠছে তো, আর একজন কোলে চড়ে বসছে।

দৌঁড়ে এসে মেয়ে টাপুর বাবুলের কাঁধে চড়ে বারবার বাবার মুখ ঘুরিয়ে ধরে বলছে, ‘বাবা, আমাকে দেখতো।’

ড্রইং রুমটা ছিমছাম। টেলিভিশন সেট আছে। কিন্তু কিছু সংবাদ মাধ্যমের অতিরঞ্জিত সংবাদ সন্তানদের ক্ষতি করতে পারে বা তার মায়ের কথা বিকৃতভাবে উপস্থাপন হতে পারে- এতে মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে মাহির ও টাপুরের। এই আশঙ্কায় টেলিভিশনটিতে ডিশ কানেকশন রাখা হয়নি।

ড্রইংরুম থেকে রান্নাঘরটি পাশ কাটালেই একটি রিডিংরুম। দুই শিশু সন্তানের জন্য যতটা সম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বাবুলের সাথে কথা বলতে বলতেই এক ফাঁকে মাহির ও টাপুর পড়ার টেবিলে বসে গেছে। দুই সন্তানকে একাগ্রচিত্তে পড়তে দেখে এসপি বাবুলের চোখে-মুখে এক অজানা সুখ ছেয়ে গেলো। বলে উঠলেন, ‘দেখেন, আমি ওদের এই পড়ার পরিবেশটা দিয়েছি। আমি চেয়েছি ওদের পড়ার ঘরটা এমনিই হোক, যেখানে ওরা নিজেরাই পড়াশুনা করবে।’

বাবুলের পেছন পেছন হেঁটে সামান্য উঁকি দেওয়ার সুযোগ হলো বাপ-মেয়ে- ছেলের বেড রুমটিতে। কাগজের এক ঝাঁক প্রজাপতি দিয়ে সাজানো দেয়াল। দেয়ালে একটি ছোট ছবি বাঁধানো। যেখানে বাবুলের কাঁধে মাথা দিয়ে ফ্রেমে বন্দী মিতু- এই তিনজনের সংসার থেকে অনেক দূরে অজানায় পারি দিয়েছেন তিনি।

বেডরুমের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে গত এক বছরের কষ্ট-বঞ্চনা আর জীবন সংগ্রামের স্মৃতি যেন উঁকি দিল বাবুল আখতারের মনে। অস্ফুটভাবে বলে ওঠেন, ‘এমন সময় আর কেউ কাটায়নি’। বলতে বলতেই  কান্না লুকাতে এ ঘর থেকে চলে গেলেন অন্য ঘরে।

স্ত্রী মিতুর প্রথম মৃত্যু দিবসে মিলাদ মাহফিল ও এতিমদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেছে বাবুলের পরিবার।