ইফতেখার শাহজীদ, কুতুবদিয়া:

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কবলে পড়ে সাগরে মাছ ধরার নৌকা থেকে নিখোঁজ হয়েছে কুতুবদিয়ার অর্ধশতাধিক জেলে। বিভিন্নস্থানে খোঁজ-খবর নেয়ার পরেও কোন ধরনের সন্ধান না পাওয়ায় এসব জেলে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তাদের আহজারিতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

৩জুন (শনিবার) উপজেলার মুরালিয়া গ্রামের নিখোঁজ মোসলেম খাঁন ওরফে বিটু ও মোহাম্মদ ছোটন নামের দুই জেলে পরিবারে গিয়ে দেখা যায় আপন জনের শোকে কাতর হয়ে পড়েছে আত্মীয়স্বজন। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাযায়, মোসলেম খাঁন ওরফে বিটু একজন শারিরীক প্রতিবন্ধি। তার একটি হাত আগুণে পোঁড়া। খালে-বিলে ছোট ছোট মাছ ধরে চলে তার সংসার। অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের মশরফ আলী সিকদার পাড়ার মরহুম এজলাস মিয়া সিকদারের পূত্র মোঃ এনাম কুতুবীর মালিকানাধীন “এফবি রেজাউল” নামক ফিশিং ট্রলারে করে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিল মোসলেম খাঁন। এ যাওয়াকে তার শেষ যাওয়া হিসেবে ধরে নিয়েছে এলাকাবাসী। এদিকে মোসলেম খাঁন ওরফে বিটুর নিখোঁজের সংবাদে তার স্ত্রী সন্তানদের আহজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। সাগর থেকে ফিরে আসা অন্যান্য মাঝিমাল্লাদের বরাত দিয়ে এলাকাবাসী জানান, প্রচন্ড ঢেউয়ের সাথে জলোচ্ছ্বাস হলে মোসলেম খাঁন বোটের কলে (নৌকায় মাছ রাখার স্থান) ডুকে পড়ে। এসময় অন্যান্য জেলেরা জীবন বাঁচার উপকরন নিয়ে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়লেও নৌকাটি পানিতে ডুবন্ত অবস্থায়ও মোসলেম খাঁন ঐ নৌকায় ছিল বলে জানিয়েছেন তারা।

একই এলাকার মোহাম্মদ ছোটনও ওই নৌকায় ছিল বলে জানান তার পিতা সিরাজুল মনির। অন্যান্য জেলেদের সাথে ছোটন ও সাগরে ঝাঁপ দিয়েছিল। কিন্তু কোন উদ্ধারকারী নৌকা তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। ফিরে আসা জেলেদের ভাষ্যমতে মাছধরার নৌকা গুলো যে কয়জনকে পেরেছে তুলে নিয়ে এসেছে। বাকীদের কথা চিন্তা করেনি। এমন দূর্যোগের মুহুর্তে চিন্তা করা সম্ভবও ছিলনা বলে জানিয়েছে উদ্ধারকৃত জেলেরা।

এ ব্যাপারে “এফ,বি রেজাউল” নামের ফিশিং ট্রলারের মালিক মোঃ এনাম কুতুবী ০২মে (শুক্রবার) কুতুবদিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (নং-৭১) করেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদেও দেয়া তথ্যমতে, উপজেলার চারটি মাছ ধরার নৌকা এখনো নিখোঁজ রয়েছে। সে সাথে নিখোঁজ রয়েছে এসব নৌকার ১৮ জন জেলে। নিখোঁজ এসব জেলেদের খোঁজে বের করতে উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরী যথেষ্ট সহযোগীতা করলেও অন্যরা আগ্রহবোধ পর্যন্ত করেননি বলে মন্তব্য করেন তিনি। শেষপর্যন্ত নৌকার মালিকের সাথে যোগাযোগ করে জেলেদের তথ্য নিয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ-খবর রাখার কথা জানান এ কর্মকর্তা।

তিনি জানান নিখোঁজ ১৮ জেলের ১৫ জনই হলো উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের।এরা সবাই উত্তর ধুরুং এলাকার মোঃ ইউনুছের মালিকানধীন “এফবি.ফাতেমা” মোঃ জাফরের মালিকানাধীন “দাদা-দাদীর দোয়া”ও নুরুল কাদেরের মালিকানাধীন অজ্ঞাত একটি ফিশিং ট্রলারের মাঝিমাল্লা। তারা হলেন যথাক্রমে, ফোড়ার পাড়া গ্রামের মৃত জাবের আহমদের ছেলে এহসান, একই পাড়ার মৃত আবু শামার ছেলে জকির আলম, মিয়াজি পাড়া গ্রামের ছৈয়দ আলমের ছেলে মোঃ আয়াছ, হায়দার পাড়া গ্রামের সাহেব মিয়ার ছেলে জালাল আহমদ, একই পাড়ার মৃত গোলাম রহমানের ছেলে গোলাম সোলতান, উত্তর নাথ পাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে ওসমান গণি, আমিরা পাড়ার নাগু মিয়ার ছেলে নাজের হোছাইন, নাজু বাপের পাড়ার মৃত কালোর তিন ছেলে ইউনুছ,শফিকুর রহমান ও শওকত আলম, জুম্মার পাড়ার মৃত মোক্তার আহমদের ছেলে নাজেম উদ্দিন নাজু, কুইল্লার পাড়ার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে শাহরিয়ার, জইজ্জার পাড়ার মৃত আবদু রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়ার মৃত আশরফ আলীর ছেলে মোঃ হোছাইন বাদশা ও মনসুর আলী সিদকার পাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ পারভেজ। এদের মধ্যে মোঃ হোছাইন বাদশার ব্যাপার ফিরে আসা অন্যান্য জেলেদের বরাতে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসের তান্ডব সহ্য করতে না পেরে জীবন বাঁচানোর কোন উপকরণ ছাড়াই নৌকা থেকে সাগরে ঝাপ দিয়েছিল বাদশা। এছাড়া আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের এনাম কুতুবীর মালিকানাধীন এফবি. রেজাউল নামের একটি নৌকার তিন জেলের মধ্যে মোসলেম খাঁন, মোঃছোটন দুইজন বড়ঘোপ ইউনিয়নের মুরালিয়া গ্রামের এবং ফরিদুল আলম নামের অন্যজন আলী আকবর ডেইল কালুয়ার ডেইল গ্রামের।

এছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন আরো অনেক জেলে। তাদের অনেকেরই জেলে কার্ড নেই বলে নিশ্চিত করেন মৎস্য কর্মকর্তা।