• নাইক্ষ্যংছড়ির ৫ ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি 

আব্দুর রশিদ, বাইশারী :

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের একমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাইশারী শাহ্ নুরুদ্দীন দাখিল মাদ্রাসা ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। অফিস কক্ষের চাল উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে এবং অফিসের রক্ষিত ফাইলপত্র উড়িয়ে নিয়ে গেছে। তাছাড়া মাদ্রাসায় রক্ষিত বই পুস্তক, কিতাব, হাজিরা খাতা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানালেন অফিস সহকারি মোহাম্মদ নাজের হোসেন।

বাইশারী শাহ্ নুরুদ্দীন দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নুরুল হাকিম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে অফিস কক্ষের পুরো চাল বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে গেছে, শ্রেণি কক্ষ বিধ্বস্ত এবং চতুর্পার্শ্বে ঘেরা বেড়া ও বাথরুমে ছাউনী উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এছাড়া গাছ পড়ে ভবন ও নষ্ট হয়ে গেছে।

এই প্রতিবেদক সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাইশারীর একমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শাহ্ নুরুদ্দীন দাখিল মাদ্রাসা অফিস কক্ষ সহ দুইটি শ্রেণি কক্ষ বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায়। চতুর্পাশে ঘেরা বেড়া ধ্বংস হয়ে যায়। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, ডকুমেন্ট, বই পুস্তক, ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কাগজ পত্র ঘূর্ণিঝড় মোরায় উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ায় খুঁজে পাচ্ছে না।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে পুরো বাইশারী ইউনিয়নে দুই শতাধিক ঘরবাড়ীর চাল উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ায় লোকজন এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ধ্বংস হয়ে গেছে কয়েক শত একর ফলজ-বনজ ও রাবার বাগান। পুরো ইউনিয়নে এখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যতিক্রম হয়ে পড়েছে। তবে এ পর্যন্ত কোন ধরনের সরকারী সহযোগিতা এলাকায় পৌঁছায়নি।

বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম কোম্পানী জানান, পুরো ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে অসংখ্য ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে বনজ-ফলজ ও রাবার বাগান। যার ক্ষতি পরিমাণ তিনি সহজেই অনুমান করতে পারছেন না বলে জানান।

৭০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ ফজলুর রহমান জানান, তার বয়সে এই ধরনের বাতাস আর কোনদিন দেখেনি। এই ঘূর্ণিঝড়ে ১০ ফিট উপর থেকে ঘরবাড়ী চাল ও গাছের মাথা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। প্রায় ৬ ঘন্টা পর্যন্ত বাতাস চলমান থাকে।

অপরদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়ন। উক্ত ইউনিয়নে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর।

দোছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ জানান, তার ইউনিয়নে শতাধিক ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত ও ব্যাপক পরিমাণ ফলজ-বনজ বাগান ধ্বংস হয়ে গেছে।

সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বাহাই মার্মা জানান, তার ইউনিয়নে দুটি উপজাতীয় পল্লীর অর্ধ শতাধিক বাড়ীঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হওয়ার ফলে জনসাধারণের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সদর ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী জানান, পুরো ইউনিয়নে ৮ শত বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ৭ শত বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫ শত বসতবাড়ী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো জানান, ফলজ-বনজ ও রাবার বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি ধারণা করেন। বিষয়টি তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সহ জেলা- উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন।

ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী সরকারের পাশাপাশি এনজিও সংস্থা সহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সংবাদ প্রেরকঃ

আব্দুর রশিদ, বাইশারী।

মোবাইলঃ ০১৮২৩-০২৪৯০০।