শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর:

কক্সবাজার সদরের উপকূলীয় ইউনিয়ন পোকখালীর পূর্ব গোমাতলীতে অবস্থিত শত কোটি টাকার চিংড়ি ঘের দখলে নিতে অস্ত্র মজুদ ও ঝনঝনানির খবর পাওয়া গেছে। গেল ২ মাসে পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ১২টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এসময় আটক করা হয়েছে ৫ জনকে। আটককৃত কয়েকজনের পরিবারের দাবী সাজানো নাটকের মাধ্যমে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্ণিত এলাকায় অবস্থিত হাফেজ মিয়া নামক শত কোটি টাকার চিংড়ি ঘের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ২টি পক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ বিরোধের জের ধরে ঘটছে গোলাগুলি, হানাহানি, খুনসহ হরেক রকম অপরাধ কর্মকান্ড। আর এতে বলির পাঠা হচ্ছে স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তিরা। চিংড়ি ঘের দখলে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হচ্ছে অনেককে।

যার কারণে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ২ ব্যক্তির চিংড়ি ঘের দখল নিয়ে চলে আসা বিরোধের জের ধরে ইতিপূর্বে কয়েকবার গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। এতে আহত হয়েছিল ১০জনের অধিক ব্যক্তি। এতে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন মোঃ নুরুল হক নামের এক যুবককে ৫টি অস্ত্র দিয়ে আটক করেছিল। পরে তার পরিবার ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবী করে আসছিল। এর পরপরই ২টি অস্ত্রসহ বশির আহমদ ও আবদুল জব্বার নামের ২ ব্যক্তিকে আটক করেছিল। অবশ্যই পূর্বে বিভিন্ন মামলা থাকায় কেউ অভিযোগ করেনি। সর্বশেষ স্থানীয় জনপ্রিয় মেম্বার কলিম উল্লাহ ও রফিকুল ইসলাম কাজল নামের অপর এক ব্যক্তিকে ৫টি অস্ত্রসহ আটকের ঘটনায় এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে।

সরেজমিন তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় খন্ড খন্ড কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠছিল। এমন অবস্থায় মেম্বার কলিম উল্লাহ প্রতিবাদস্বরূপ দায়িত্ব পালনের জন্য এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উদ্যোগ নিলে একই এলাকার মৃত হেদায়ত আলীর পুত্র সেলিম উদ্দীন ও সাজাপ্রাপ্ত আসামী ইদ্রিছ মৃত ওমর হাকিমের পুত্র হানিফসহ এলাকার কয়েকজন দাগী অপরাধী মিলে এ মেম্বারকে আটক করে বলে তার পরিবারের দাবী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাফেজ মিয়া নামক চিংড়ি ঘেরটি দখলে নিতে স্থানীয় পূর্ব গোমাতলীর সেলিম উদ্দীনের নেতৃত্বে ১৬০ সদস্যের একটি দুর্বৃত্তদল শপথ নিয়েছে যে কোন উপায়ে ঘেরটি দখলে নিতে। সে হিসাবে তার ভাই ইদ্রিছ ও মৃত ওমর হাকিমের পুত্র হানিফসহ আরো কয়েকজন মিলে গত ২ মাস পূর্বে মহেশখালীর কালারমারছড়া থেকে বোট বোঝাই করে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র গোমাতলী ঘাটে খালাস করে। এর পর থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে এসব অস্ত্র। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে চুক্তির মাধ্যমে অস্ত্র দিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কলির উল্লাহ মেম্বারকে আটকের পর থেকে সে এলাকা ত্যাগ করলে তার প্রতি সন্দেহের তীর আরো বেড়ে গেছে এলাকাবাসীর। অভিযোগ উঠেছে উক্ত সেলিমের নেতৃত্বে এলাকায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, চিংড়ি ও চর দখলসহ নানা অপরাধ ঘটে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে নেমে আসে মিথ্যা মামলা ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনা।

এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে আরো জানা যায়, কলির উল্লাহ মেম্বারকে আটকের দিন তার বাড়ীর পিছন থেকে চিংড়ি ঘের অতিক্রম করে রান্না ঘরের কাছাকাছি এসে এক ব্যক্তি সাদা প্লাষ্টিকের বস্তাভর্তি করে অস্ত্রগুলো ঐদিকে নিক্ষেপ করে যা এলাকার শত শত নারী-পুরুষ লক্ষ্য করেছে বলে জানায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, উক্ত মামলাবাজ ও সন্ত্রাসী সেলিম উল্লাহকে আটক পূর্বক আইনের আওতায় এনে রিমান্ড মঞ্জুর করলে ব্যাপক অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে। এমনকি তার বাড়ীর পাশর্^বর্তী যে পুকুরগুলো রয়েছে সেখানে অভিযান চালালে ব্যাপক অস্ত্রের সন্ধান মিলবে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ব্যক্তি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সেলিম উল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে সচেতন এলাকাবাসীর দাবী, চিরুনী অভিযানের মাধ্যমে এলাকায় সে সমস্ত অপরাধী রয়েছে তাদেরকে আটক পূর্বক অস্ত্র উদ্ধার করতে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।