আব্দুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে ঘূর্নিঝড় মোরার আঘাতে দুই শতাধিক বাড়ীঘর, বনজ-ফলজ বাগান, রাবার বাগানসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে বসতবাড়ী ও শতাধিক ফলজ ও বনজ বাগান।
সরজমিনে এই প্রতিবেদক বাইশারী ইউনিয়নের অধিকাংশ ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ঘূর্নিঝড় মোরার আঘাতে বসতবাড়ী বাগান ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফলজ বাগান সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। খোলা আকাশের নিচে এখন সাধারণ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।
রাবার বাগান ম্যানেজার আল আমীন ও রবিউল আলম জানান, রাবার বাগানের কয়েক কোটি টাকার রাবার গাছ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। যাহা পুষিয়ে উঠা মালিকের পক্ষে আর কোনদিন সম্ভব হবে না।
বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম কোম্পানী জানান, প্রাথমিকভাবে তিনি দুই শতাধিক বাড়ীঘর বিধ্বস্তের খবর পেয়েছেন। তাছাড়া ফলজ-বনজ ও রাবার বাগানের প্রচুর পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
লম্বাবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মনজুর আলম জানান, তার বিদ্যালয়ের টিনসেট একটি ভবন সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে গেছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান মোটেও সম্ভব হবেনা। তাছাড়া বাইশারী শাহ্ নুরুদ্দীন দাখিল মাদ্রাসা অফিস কক্ষের টিনের চাল সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায়। এছাড়া মুরগীর ফার্ম, তুফান আলী পাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, পেঠান আলী পাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঘূর্নিঝড় মোরার আঘাতে বৈদ্যুতিক খাম্বার উপর গাছ পড়ে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে বাইশারী।
সকাল থেকে ঘূর্নিঝড় মোরার আঘাতে গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার সারাদিন বাইশারী-ঈদগড়- ঈদগাঁহ সড়কের কোন প্রকার যানবাহন চলাচল করেনি। অসহনীয় দুর্ভোগে এলাকার সাধারণ মানুষ। সরকারের পক্ষ থেকে এই পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তরা কোন ধরনের সহযোগিতা পায়নি। তবে ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরী হচ্ছে এবং প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট জানানো হয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে আরো দেখা যায়, ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড কাগজী খোলা, ক্যথোয়াই পাড়া, দোছড়ি মুখ, ২নং ওয়ার্ডের রাঙ্গাঝিরি, ক্যাংগার বিল, ৩নং ওয়ার্ড আলীক্ষ্যং, বড়ই চর, ধুইল্যা ঝিরি, তুতুবখালী, ৪নং ওয়ার্ড করলিয়ামুরা, উত্তর করলিয়ামুরা, কুমপাড়া, লম্বাবিল, ৫নং ওয়ার্ড হলুদিয়া শিয়া, গুদাম পাড়া, ৬নং ওয়ার্ড তিতার পাড়া, উপর চাক পাড়া, মধ্যম চাক পাড়া, থুইহ্লাঅং পাড়া, ৭নং ওয়ার্ড দক্ষিণ বাইশারী, পশ্চিম বাইশারী, পেঠান আলী পাড়া, মধ্যম বাইশারী, উত্তর বাইশারী, ৮নং ওয়ার্ড দক্ষিণ নারিচবুনিয়া, পুর্নবাসন পাড়া, ধৈয়ার বাপের পাড়া, নতুন চাক পাড়া, হরিণখাইয়া, থিমছড়ি শিয়া পাড়া, ঘোনা পাড়া, ৯নং ওয়ার্ড তুফান আলী পাড়া, পূর্ব বাইশারী, মেকার পাড়া, করিমার ঝিরি, চাক হেডম্যান পাড়া সহ আরো অনেক গ্রামের বাড়ীঘর, গোয়াল ঘর, বনজ-ফলজ বাগান, মসজিদ, মন্দির, মত্তবের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয় অপরিসীম।
এলাকাবাসী সরকারের পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য বিত্তবান ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ইতিমধ্যে বান্দরবানের লামা এন.জেড একতা মহিলা সমিতি বাইশারী ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে দেখা করার পর তালিকা তৈরীর কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
এই রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত গুরি গুরি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া অব্যাহত ছিল। তবে কোন ধরনের নিহত, আহতের খবর পাওয়া যায়নি।